মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের জন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন। টিএমসি টিম ইন্ডিয়ার দুই প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান এবং কীর্তি আজাদকে টিকিট দিয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, সব সময় বাঙালি বনাম বহিরাগত নিয়ে আওয়াজ তোলা টিএমসি এবার তিনজন বহিরাগতকে মাঠে নামিয়েছে। ইউসুফ পাঠান এবং কীর্তি আজাদ ছাড়াও এই বহিরাগতদের মধ্যে শত্রুঘ্ন সিনহাও রয়েছেন।
তৃণমূল সাধারণত বিজেপিকে বাঙালি বিরোধী দল বলে অভিযোগ করে আসছে, বিশেষ করে ২০১৯ সালের নির্বাচনের পরে যখন বিজেপি বাংলায় তাদের ভিত্তি বাড়িয়েছিল, টিএমসি তাদের উপর মৌখিক আক্রমণ তীব্র করেছিল।
বাঙালি বনাম বহিরাগত বিতর্ক
তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বিতীয় প্রভাবশালী নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার কলকাতায় এক সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় আবারও বাঙালি বনাম বহিরাগত নির্বাচন নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেন। তিনি বলেন, আগে চোরেরা জেলে যেত। কিন্তু আজ তারা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে। এটাই মোদীর গ্যারান্টি। অন্যদিকে, একজন মহিলা আছেন যিনি এখনও একটি টিনের ছাদের বাড়িতে থাকেন এবং হাওয়াই স্যান্ডেল পরেন। বাংলা কী চায়? মোদী না দিদি? বাংলার মাটির ছেলে নাকি বহিরাগত?
লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বহিরাগত প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা পর , বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য বলেন, টিএমসির বহরমপুরের প্রার্থী ইউসুফ পাঠান কি গুজরাতের বরোদার না পশ্চিমবঙ্গের? তৃণমূলের বিভেদমূলক রাজনীতির জন্য লজ্জিত হওয়া উচিত।
ইউসুফ-কীর্তি ও শত্রুঘ্ন সিনহা কোথা থেকে নির্বাচনে লড়বেন?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল বেরহামপুর থেকে ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করেছে। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী পাঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়বেন এমন সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি কংগ্রেস। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অধীর রঞ্জন। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ইতিমধ্যেই বহরমপুর থেকে ডাঃ নির্মল কুমার সাহার নাম চূড়ান্ত করেছে।
অন্যদিকে, টিএমসি টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অলরাউন্ডার কীর্তি আজাদকে দুর্গাপুর থেকে টিকিট দিয়েছে। বর্তমানে এই আসনের সাংসদ ভারতীয় জনতা পার্টির এসএস আহলুওয়ালিয়া। এই আসনে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করেনি বিজেপি ও কংগ্রেস উভয় দলই। কীর্তি আজাদ বিজেপির টিকিটে তিনবার দারভাঙা লোকসভা আসন থেকে সাংসদ হয়েছেন। তিনি ২০১৯ সালে কংগ্রেস পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ধানবাদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। যদিও ওই নির্বাচনে তিনি হেরেছিলেন। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন কীর্তি।
আসানসোল থেকে ফের মাঠে নেমেছেন শত্রুঘ্ন সিনহা। তিনি টিএমসি প্রার্থী হিসাবে আসানসোল থেকে ২০২২ সালের লোকসভা উপনির্বাচনে জিতেছেন।
জোট ভাঙল কেন?
পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া ব্লক ভাঙার অনেক কারণ বলা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে টিএমসি এবং কংগ্রেস জোট সম্ভব না হওয়ার পিছনে মূল কারণ হল কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী, কারণ অধীর রঞ্জন গত বছর ২০২৩ সাল থেকে ক্রমাগত মমতার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে মমতা যে অধীরের বিরুদ্ধে কোনও সুযোগ ছাড়তে চান না তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। আর তাই অধীরকে পরাজিত করতে মাঠে নেমেছেন দলের সবচেয়ে নামকরা মুখ।
প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় একা চলার সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের জন্য খুব একটা ভাল নয়, কারণ এর আগে তিনি বহুবার কংগ্রেস নেতৃত্বকে তার পরামর্শ ও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য মঞ্চ থেকে অভিযুক্ত করেছিলেন। আর এর পর বাংলায় এককভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা।