তৃতীয় দফার লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় প্রচারে এসে এই প্রথম বার শেখ শাহজাহানের নাম নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার বর্ধমানের সভায় ফের সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলকে নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, 'সন্দেশখালির অভিযুক্তকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। অভিযুক্তের নাম শেখ শাহজাহান বলে?' মোদী এ-ও বলেছেন, 'সন্দেশখালিতে মা-বোনেদের সঙ্গে জঘন্য অপরাধ হয়েছে। সারা দেশ দেখেছে।'
এর আগেও বাংলায় নির্বাচনী সভায় সন্দেশখালি প্রসঙ্গে সরব হয়েছিলেন মোদী। আরামবাগ, কৃষ্ণনগরের পর বারাসতের সভাতেও সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছিলেন, 'মা-বোনেদের অত্যাচার করে ঘোর পাপ করেছে তৃণমূল। গোটা বাংলায় সন্দেশখালির ঝড় উঠবে।' একথা বাংলাতেই বলেন মোদী। মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়া 'মোদীর গ্যারান্টি' বলেও বারাসতের সভায় আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বারাসতের সভায় বাংলার নারীদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা তুলে ধরেছিলেন মোদী। মা সারদা, রানি রাসমণি, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাতঙ্গিনী হাজরাদের নাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, 'বাংলার নারীশক্তি দেশকে দিশা দেখিয়েছে।' এরপরই সন্দেশখালির ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেছিলেন, 'মা-বোনেদের অত্যাচার করে ঘোর পাপ করেছে তৃণমূল। তৃণমূল সরকার মহিলা বিরোধী। সন্দেশখালিতে যা হয়েছে তাতে সকলের মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে গিয়েছে। বাংলার নারীরা আক্রোশে রয়েছেন। বিজেপিই একমাত্র দল, যারা সুরক্ষা দেবে। তৃণমূল কখনও মা-বোনেদের সুরক্ষা দেয়নি।' সারা দেশে বিজেপি সরকার মহিলাদের জন্য কী কী করেছে, সে কথাও তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ শাহজাহানের মতো অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও সরব হয়েছিলেন মোদী। তবে সেবার শাহজাহানের নাম নেননি প্রধানমন্ত্রী। বলেছিলেন, 'অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল সরকার। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার।'
সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইডির আধিকারিকরা। যে ঘটনা ঘিরে সরগরম হয় রাজনীতির ময়দান। ঘটনার ৫৫ দিন পর গ্রেফতার করা হয় শাহজাহানকে। এই মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তারপর থেকেই সিবিআইয়ের হাতে শাহজাহান। গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালির দাপুটে তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে ইডির তল্লাশি অভিযান ঘিরে গোলমালের ঘটনার পর থেকেই তেতে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার ওই এলাকা। শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয়রা। একের পর এক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। জোর করে জমি দখল, মহিলাদের উপর অত্যাচার, যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে। গ্রেফতার করা হয়েছে উত্তম, বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহকে। পরে জামিন পান বিকাশ। গ্রেফতার করা হয়েছে শিবপ্রসাদকেও। গ্রেফতার করা হয়েছে তৃণমূল নেতা অজিত মাইতিকেও। ঘটনার ৫৫ দিন পর গ্রেফতার করা হয় শাহজাহানকে। বর্তমানে তিনি জেলবন্দি।