বছরের পর বছর একই দাবি জানিয়ে এসেছেন তারা। আগে বাম আমলে, পরে দশ বছরে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরও। ক্ষমতায় মুখ বদলেছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি তাদের। ফলে নিজেদের দাবি পূরণ না হওয়ায় গোটা বুথে ভোট বয়কট করলেন রাজগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের বেলাকোবা এলাকার দেমধাপাড়ার মানুষ।
তাদের দাবি কি?
দাবি সামান্যই। এলাকার উপর দিয়ে চলে যাওয়া রেললাইনের ওপর একটি স্থায়ী রেলগেট। সঙ্গে ওভারব্রিজ। এই একই দাবিতে বছরের-পর-বছর আবেদন-নিবেদন আন্দোলন চালালেও কোনও সুরাহা হয়নি। রাজ্য, কেন্দ্র একে অপরের ওপর চাপান উতর চালিয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। ফলে তারা এবার না বিজেপি, না তৃনমূল, না সংযুক্ত মোর্চা। কাউকে ভোট দেবেন না বলে ঠিক করেছেন। বারোশো ভোটার সমৃদ্ধ এই বুথ সকাল থেকে খাতা খোলেনি। বেলা বারোটা বেজে গেলেও বুথের আশপাশে পা বাড়াননি একজনও গ্রামবাসী। ভোটকেন্দ্র খুলে রীতিমতো মাছি মারার জোগাড় কর্মীদের। ফলে কর্মীরা এ খবর জানিয়েছেন সেক্টর অফিসার থেকে নির্বাচনী আধিকারিকদের। বেলা সাড়ে নটা নাগাদ নির্বাচনী আধিকারিক রা এসে অন্তত বুথ এসে নিজেদের পছন্দ জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাদের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। তাতেও অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি।
তারপরও ভোট দিতে অস্বীকার
ভোট দিতে অস্বীকার করার সিদ্ধান্তে তারা অনড় থেকেছেন দুপুর পর্যন্ত। ভোট বয়কট এর সিদ্ধান্তে এখানে কোনও রাজনৈতিক ভেদাভেদ নেই। তাই বলে তারা অসংগঠিত, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। ভোটকেন্দ্রের কিছুটা দূরেই নিজেরাই চাঁদা তুলে মন্ডপ বানিয়েছেন। সেখানে বিকেলের পর তারা জমায়েত হন। প্রত্যেকে যাতে তাদের ভোট বয়কট এর সিদ্ধান্তে অনড় থাকে, সে বিষয়ে চলে রেগুলার ক্লাস। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, রেললাইনের দুপার নিয়ে ওই গ্রাম এবং একটি ভোট কেন্দ্র। মাঝখান দিয়ে উঁচু রেল লাইন চলে যাওয়াতে, বাচ্চা বৃদ্ধ কেউ চট করে এপারে আসতে পারেন না। গাড়ি নিয়ে এপার থেকে ওপারে যেতে হলে দশ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়। ফলে অনেক সময় মুমূর্ষু রোগীকে কিংবা জরুরী প্রয়োজনে সাধারণ মানুষকে ভুগতে হয়। তাই একটি ওভারব্রিজ এবং রেলগেট তাদের আশু প্রয়োজন। যে দল ক্ষমতায় এসে তাদের দাবি পূরণ করবে গোটা গ্রাম তারা গিয়ে সেই দলেই ভোট দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক মতবিরোধের জমানায় এমন অরাজনৈতিক মতৈক্য পেশ করে বিরল নজির গড়লেন দেমধাপাড়ার বাসিন্দারা। অবাক ভোটকর্মী থেকে নির্বাচনী আধিকারিকরা তাদের বিস্ময় গোপন করেননি।