কেউ দিয়েছেন এক লক্ষ, কেউ দেড়, কেউবা লাখ তিনেক দিয়ে বসে রয়েছেন চার বছর হল। স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতিতে চা বাগানের জমিতে মার্কেট কমপ্লেক্স এর ঘর পাওয়ার আশায়। বছরের-পর-বছর ঘুরলেও প্রতিশ্রুতি ছাড়া মিলছে না কিছুই।ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা এলাকার বিস্তীর্ণ জায়গায় অন্যতম মূল অর্থনীতির জায়গা হল চা বাগান। স্বাধীনতার আগে থেকেই বাগানগুলি দেশ-বিদেশের চা রফতানিতে গোটা দেশের মধ্যেই একটা জায়গা তৈরি করেছে।
ফলে প্রতিবার লোকসভা থেকে বিধানসভা, কিংবা পঞ্চায়েত ভোট, চা বাগান অধ্যুষিত এলাকার চা শ্রমিক এবং শ্রমিক পরিবারের ভোট পেতে শ্রমিকদরদী হতে হয় সব দলের প্রার্থীকেই। এবারও তার অন্যথা নয়। তবে গত কয়েক বছরর চা বাগান বেআইনিভাবে উঠিয়ে দিয়ে মার্কেট কমপ্লেক্স, একের পর এক জমি দখল করে জমির মালিককে উচ্ছেদ হতে বাধ্য করা, শাসক দলের পাশাপাশি স্থানীয় স্তরের সমস্ত দলেরই নেতাকর্মীদের নাম জড়িয়ে যাওয়া, এই এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের এবং প্রশাসনের উপর ক্ষোভ তৈরি করেছে মানুষের। প্রকাশ্যে বিভিন্ন ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে মুখ না খুললেও আড়ালে আবডালে গুঞ্জন থাকছেই। এলাকায় কান পাতলেই জমি হারাদের ক্ষোভ হতাশা সামনে চলে আসছে। অনেকে আবার আগাম অর্থ দিয়ে রেখেছেন কয়েক বছর ধরে চা বাগান সরিয়ে মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করার পর সেখানে দোকানঘর নেবেন বলে। চার বছর পার হয়ে গেলেও এখনও দোকান ঘরের দখল পাননি। ফলে ক্ষোভ রয়েছে তাঁদেরও। খড়িবাড়ি থেকে বিধাননগর, ফাঁসিদেওয়া থেকে পানিট্যাঙ্কি সর্বত্রই ক্ষোভের সুর একই তারে বাঁধা। খড়িবাড়িতে চা বাগানের জমি দখল করে বিক্রি কিংবা পানিট্যাঙ্কিতে জমি কেলেঙ্কারিতে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ। ভাগের টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন দলের জেলা রাজ্য নেতৃত্ব বিরুদ্ধেও। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের দাবি সমস্ত প্রক্রিয়া আইন মেনে করা হয়েছে। অথচ চা বাগানের জমি হস্তান্তর আইন তা বলছে না বলেই বিরোধীদের অভিযোগ।নির্বাচনী প্রচার করতে গিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে নাজেহাল হতে হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের। সমস্যার কথা জানা রয়েছে প্রার্থীদেরও।
তৃণমূলের প্রার্থী ছোটন কিস্কুকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানিয়েছেন, জমি নিয়ে সমস্যার কথা তিনি জানেন। তবে সে সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। মানুষ খুশি। এলাকাবাসী আর সেসব মনে রাখছে না। সত্যিই কি তাই? তার জবাব মিলবে ব্যালট বাক্সে। বাম-কংগ্রেস প্রার্থী তথা বর্তমান সুনীল তিরকের বিরুদ্ধে জনসংযোগের অভাবের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় থেকে বিরোধী সকলেরই। পাশাপাশি দীর্ঘ ১০ বছর বিধায়ক থাকার পরও তার তরফ থেকে স্থানীয়রা কোনও রকম সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে তাঁকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে জোড়া অভিযোগের। সিপিআরএমের প্রার্থী সুমন্তি এক্কা একাই পুরোপুরি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। যদিও সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হওয়ায় তার প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রাখতে পারছেন না স্থানীয়রা। বিজেপির তরফ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী দুর্গা মুর্মু। এখনও তরফে সরকারিভাবে নাম ঘোষণা না হওয়ায় তিনি মুখ খুলছেন না। তবে স্থানীয় বাসিন্দা বিজেপির সাংগঠনিক জেলা যুব সভাপতি কাঞ্চন দেবনাথ জানিয়েছেন, বিজেপি এলাকায় বিধানসভা ফোনে জিতলে সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে বিধানসভায় পেশ করা হবে। গরিব মানুষের জমি এবং টাকা মেরে একটা শ্রেণি বড়লোক হবে তা বরদাস্ত করব না।