যাঁর বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজের অভিযোগ উঠেছিল, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছিল, তাঁকেই প্রার্থী করেছে। এমন নজির সিপিআইএম-এ বিশেষ নেই। তবে তাঁর জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতার কাছে হার মানতে হয়েছে। জঙ্গলমহলে নিজেদের মাটি ফের পোক্ত করতে সিপিআইএম-কে ভরসা করতে হয়েছে সুশান্ত ঘোষের ওপর। শালবনী থেকে লড়ছেন তিনি।
তবে ওই কেন্দ্র তাঁর নয়। তিনি গড়বেতার বিধায়ক ছিলেন দীর্ঘদিন। প্রায় ৩ দশক। ঘটনা হল, জনপ্রিয়তার জোরে সুশান্ত শুধু নিজে টিকিট পাননি, পেয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আরও ২ জন। তাঁর গড়বেতা কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছেন তপন ঘোষ। আর খেঁজুরিতে হিমাংশু দাস।
সুশান্ত ঘোষ দীর্ঘদিন গড়বেতার বিধায়ক ছিলেন। পরে রাজ্যের মন্ত্রীও হন। ২০১১ সালের 'কঠিন' ভোটেও তিনি সেই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন। পরে বিভিন্ন মামলা এবং বিতর্কে জড়ান। অভিযোগ, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ওই সব মামলা দায়ের করেছিল। আর যার জেরে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে লড়তে পারেননি বলে অভিযোগ।
মামলার জেরে নিজের এলাকায় ঢুকতে পারতেন না তিনি। পরে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে স্বস্তি দেয়। নিজের এলাকায় ঢুকতে আর কোনও বাধা থাকে না। এরপর তিনি নিজের এলাকায় সভা করেছেন। তারপর রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় তিনি সভা করেছেন। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা প্রশ্নাতীত। ছাত্র-যুবদের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়। সিপিআইএম এই দুটি বিষয়কে কাজে লাগাতে চাইছে।
দলের একাংশের কর্মীদের মধ্যে সুশান্ত ঘোষ বেশ জনপ্রিয়। দল যাতে তাঁকে পুরোদমে কাজে লাগায়, সে ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মী-সমর্থকেরা প্রচার চালান। তাঁকে তুলনা করা হয় বাঘের সঙ্গে। দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ তাঁকে 'টাইগার' বলেন।
কঙ্কাল কাণ্ডে অভিযুক্ত সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। প্রথমবার আদালত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর দল সংশোধনাগারের বাইরে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করেছিল। তবে ২০১৯ সালে দলবিরোধী কাজ করার অভিযোগে তাঁকে শো-কজ করা হয়েছিল। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকেও বাদ যেতে হয় থাকে। তবে সময় সব ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছে।
সেই তিক্ততা আর বাড়াতে চায়নি দল। তিনিও আর কথা বাড়াননি। দলের সংগঠন বাড়ানোর দায়িত্ব পেয়েছেন। আর দায়িত্ব পেয়েই জঙ্গলমহলে ফের লাল পতাকা ওড়ানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি ফিরে আসায় দলের কর্মী-সমর্থকেরা বেশ চাঙ্গা। তাঁকেও দেখা গিয়েছে পুরনো মেজাজেই।