অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী আজও বাংলায় বিপুল জনপ্রিয়। তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত মিঠুন চক্রবর্তীর মুম্বইয়ের বাসভবনে যেতেই রাজ্য রাজনীতিতে জোর আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এবার কি মিঠুনকে বিজেপি শিবিরে দেখা যাবে তা নিয়ে বেট লাগাচ্ছেন অনেকেই। তবে মিঠুনের সঙ্গে রাজনীতির যোগ কিন্তু বহু পুরনো।
বাম আমলে তৎকালীন মন্ত্রী প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে মিঠুনের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। সুভাষ চক্রবর্তীর মৃত্যুর খবর শুনে মুম্বই থেকে ছুটি এসেছিলেন মিঠুন। সুভাষ চক্রবর্তীকে নিজের বড় দাদার মতই মান্য করতেন অভিনেতা।
রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতার আসার খানিক আগে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল মিঠুনের। ২০১১ সালে বাংলায় তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই সম্পর্ক আরও পোক্ত হয়। পরে ২০১৪ সালে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও সেই সফর মিঠুনের জন্য খুব একটা সুখবর হয়নি।
শোনা যায় চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে তদন্তকারী সংস্থার একের পর এক নোটিস এবং দলের নেতাদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়া – এইসব কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাজনীতি থেকে সরে এসেছেন তিনি৷ চুপিসাড়ে রাজ্যসভার সদস্য পদ ত্যাগ করেছিলেন৷
রাজ্যসভায় তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২০ সালের এপ্রিলে। সাংসদ হিসাবে মেয়াদ শেষের ৩ বছর আগেই রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। তৃণমূল নেতৃত্বকে জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সেই সময় জানিয়েছিলেন মিঠুন।
সেই সময় জানানো হয়েছিল শারীরিক অসুস্থতার কারণেই মিঠুন চক্রবর্তী ইস্তফা দিচ্ছেন। তিনি দলকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, সাংসদ না থাকলেও দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।
হঠাৎই রাজনীতির আঙিনা থেকে আড়ালে চলে গিয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। বিশেষ করে সারদা কাণ্ডে তাঁর নাম জড়ানোর পর তিনি অন্তরাল থেকে বের হতেন না। দলের সঙ্গেও চাঁর সেভাবে কোনও সম্পর্ক ছিল না। এমনকী রাজ্যসভাতেও দীর্ঘ সময় তাঁকে দেখা যায়নি। রাজ্যসভা থেকে তিনি দীর্ঘ ছুটি নিয়েছিলেন।
ঘনিষ্ঠমহলে মিঠুন চক্রবর্তী সেই সময় জানিয়ে ছিলেন, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল। তাঁর বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। তাই শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়েই তিনি রাজনীতি থেকে 'সন্ন্যাস' নিয়েছিলেন।
দলের সঙ্গে বিভিন্ন চিটফান্ড সংস্থার নাম জড়ানোর পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন মিঠুন চক্রবর্তী। সারদাকাণ্ডে তাঁর নামও জড়িয়ে যায়। এরপরেই রাজনীতির সঙ্গে সংসর্গ রাখা বন্ধ করে দেন তিনি। সারদাকাণ্ডে নাম ডড়িয়ে যাওয়ার ফলে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছিলেন এই অভিনেতা।
সারদাকাণ্ডে নাম জড়ানোর পর ইডি দফতরে গিয়ে সারদা থেকে নেওয়া ১ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছিলেন মিঠুন। তারপর থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেন প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে।
২০১৯ সালে দুর্গাপঞ্চমীর দিন নাগপুরে আরএসএসের সদর দফতরে হাজির হয়েছিলন মিঠুন। বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান সেখানে। পাশাপাশি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ারের মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপণও করেন তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ। তখনি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝুঁকছেন বলিউডের ডিস্কো ডান্সার?
সরস্বতী পুজোর দিনে মিঠুনের মুম্বইয়ের বাড়িতে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের উপস্থিতি সেই জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিল।