গত শনিবার সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অমিক শাহের হাত থেকে গেরুয়া পতাকা নিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। দলবদল করে নেমে পড়েছেন ময়দানে। একা নন, প্রাক্তন দলের একাধিক বিধায়ককে সঙ্গে নিয়েই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাক্তন সহযোগীর এভাবে দলত্যাগ ২০২১-এর ভোটের আগে তৃণমূলের কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহল। যদিও তৃণমূল নেতারা শুভেন্দুর দলত্যাগকে প্রকাশ্যে পাত্তা দিতে নারাজ। আর এই আবহে যাতে আরও বড় কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে তাই আগেভাগেই সতর্ক হয়েছে দলীয় নেতৃত্ব। তাই 'বেসুরো' রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আরও একবার বৈঠকে বসলেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যদিও দীর্ঘ বৈঠকের নিট ফল শূন্যই থাকল। বনমন্ত্রীকে নিয়ে কাটল না ‘জটিলতা’।
শুভেন্দু অধিকারীর সুরেই গত কয়েকদিন হল বেসুরো গাইতে দেখা যাচ্ছিল বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি। এদিকে শুভেন্দু হাতছাড়া হওয়ার পর ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূল শিবির। রাজীবের মান ভঞ্জন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। পার্থর সঙ্গে প্রথম বৈঠকের পর কিছুটা আশার আলো দেখতে পেয়েছিল তৃণমূল শিবির। সাংগঠনিক আলোচনা সংবাদ মাধ্যমকে জানানোনর জন্য নয়। দলের সঙ্গে আলোচনা দলের অন্দরেই থাকুক। বৈঠক নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছিলেন রাজীব। কিন্তু শুভেন্দ দলত্যাগ করতেই রাজীবকে নিয়ে আরও তৎপর হয়ে উঠেছ ঘাসফুল শিবির। শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাই তাঁকে নিয়ে আরও একবার দীর্ঘ বৈঠকে বসলেন মমতা মন্ত্রিসভায় রাজীবের সহকর্মী পার্থ। যদিও সেই বৈঠক থেকে রফাসূত্র বেরোয়নি বলেই জানা যাচ্ছে। তবে রাজীবকে নিয়ে এখনি হাল ছাড়তে নারাজ কালীঘাট। তাই আগামী সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রী ফের একবার বনমন্ত্রীকে নিয়ে আলোচনায় বসতে চলেছেন বলেই খবর।
সোমবার নাকতলায় নিজের বাসভবনে রাজীবকে নিয়ে প্রায় দুঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়। সেই বৈঠকে কী হয়েছে তা নিয়েও অত্যন্ত কৌশলী জবাব দিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন দলের বিষয় দলের ভেতরে থাকাই ভাল। নিজের অবস্থান নিয়ে রীতিমত কৌশলী পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন ডোমজুড়ের বিধায়ক।
এদিন বৈঠক শেষে সংবাদ মাধ্যমকে সাবধানী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “দলীয় নেতৃত্ব ডেকেছিল। দলের নির্দেশ পালন করে কর্মী হিসেবে এখানে এসেছি। এর আগেও পার্থদার বাড়িতে এসেছি। তখন তো কেউ জানতই না।” প্রসঙ্গত কয়েকদিন আগেই রাজীব অভিযোগ করেছিলেন দলে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছেন। আর যাঁরা স্তাবকতা করেন তাঁরা পদ পাচ্ছেন। দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রসঙ্গে সোমবার সাংবাদিকরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে রাজী জানান, “নিন্দুকদের কাজই নিন্দা করা। আমি নিজের থেকে এখনও কিছু বলিনি।” বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, দলের মধ্যের কথা। সে কথা আমি সংবাদমাধ্যমকে জানাব না।” এর আগে শুভেন্দু চলে যাওয়া বড় ক্ষতি বলেছিলেন রাজীব। এদিন অবশ্য শুভেন্দু প্রসঙ্গে কিছুটা সাবধানী ছিলেন তিনি। মন্তব্য করেন, “সবারই একটা নিজস্ব মতামত থাকে। শুভেন্দু একটা আলাদা মানুষ, আমিও আলাদা মানুষ।” রাজীবের প্রতিক্রিয়া শুনে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, আপাতত খুব মেপে পা ফেলছেন তিনি। তাই সংবাদ মাধ্যমের সামনে এখনই কিছু বলতে রাজি নন।
এদিকে শহর কলকাতা সহ একাধিক জায়গায় রাজীবের নামে পোস্টার পড়তে শুরু করেছিল। তাতেই জল্পনা শুরু হয়েছে রাজীবও শুভেন্দুর মত বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন। বিজেপির নেতাদেরও রাজীবকে দলে নিতে আপত্তি নেই, সেই প্রমাণও মিলেছে। সোমবারের ‘অসম্পূর্ণ’ বৈঠক সেই চাপ আরও বাড়াল। যদিও পার্থ শিবিরের দাবি, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় দলেই রয়েছেন। দলেই থাকবেন।