বুধবার বিধানসভায় গিয়ে তৃণমূলের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই এবার দলের সমস্ত পদ ছাড়লেন নন্দীগ্রামের বেতাজ বাদশা। এদিন তৃণমূলনেত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে শুভেন্দু দলে তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদও ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে অমিত শাহের বঙ্গ সফরের আগেই তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক কাগজে কলমে মিটিয়ে দিলেন শুভেন্দু। তবুও সবকিছু শেষ হইয়াও যেন হল না। কাঁটা এখনও রয়ে গেল। কারণ বিধানসভায় গিয়ে ইস্তফা দেওয়ার পরও এখনও সেই ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়নি।
বুধবার বিকেল চারটে নাগাদ শুভেন্দু যখন বিধানসভায় ইস্তফাপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই নিয়েই যত বিতর্ক। অধ্যক্ষ না থাকায় গতকাল বিধানসভার রিসিভ সেকশনেই নিজের ইস্তফাপত্র জমা দেন শুভেন্দু। যা একেবারেই বিধিসম্মত নয়, বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ উঠেছে, শুভেন্দুর হাতে লেখা ইস্তফাপত্রে ত্রুটি রয়েছে। তাতে কোনও তারিখেরও উল্লেখ নেই বলে বিধানসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। তিনি কোন কেন্দ্রের বিধায়ক তাও জানান হয়নি।
ফলে দল থেকে পদত্যাগ করা শুভেন্দুকে বিধয়াক পদ থেকে দেওয়া দেওয়া হল কিনা, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবারও ঝুলে রইল। তাই প্রশ্ন উঠছে, শুভেন্দু অধিকারী কি এখনও তৃণমূলের বিধায়ক? যার উত্তরে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘যতক্ষণ না শুভেন্দুর ইস্তফাপত্র গৃহীত হচ্ছে ততক্ষণ তাঁর সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছে তা বলা যাবে না।’ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগপত্র আজ আমার সচিবালয় থেকে আমাকে দেওয়া হয়েছে। আমি সেটা পর্যালোচনা করে দেখছি। ওই পদত্যাগপত্র দেখে তার ওপর আমি একটা বিবেচনাপ্রসূত অর্ডার দেব। যতক্ষণ না সেই অর্ডার দেওয়া যাবে ততক্ষণ এটা বলা যাবে না যে পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে বা এটা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।’
ফলত বিধানসভায় পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় এখনও খাতায় কলমে নন্দীগ্রামের বিধায়ক হয়ে রয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। ধাপে ধাপে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছেন শুভেন্দু। গত ২৫ নভেম্বর তিনি প্রথমে ইস্তফা দেন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে। ২০১১ সাল থেকে এই পদে বহাল ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। দুদিন পরেই ২৭ নভেম্বর ছাড়েন মন্ত্রীত্ব। তৃণমূল সরকারের মন্ত্রিসভায় রাজ্যের পরিবহণ, সেচ এবং জলসম্পদ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু ৷ সেই সমস্ত পদ থেকেই ইস্তফা দেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা ৷ তবে মন্ত্রীত্ব ছাড়লেও বিধায়ক পদ তখনও ছাড়েননি তিনি ৷ সেই বিধায়ক পদ থেকে অবশেষে বুধবার ইস্তফা দেন। তারপরদিনই দলত্যাগ। ধাপে ধাপে ঘুঁটি সাজিয়ে গেরুয়া শিবিরের পথেই শুভেন্দু এগোচ্ছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেখানেও এবার কাঁটা থেকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণ বিধিসম্মত নয় কারণ দেখিয়ে সহজেই শুভেন্দু অধিকারীকে বিধায়কপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না। তাঁর ইস্তফাপত্র ঝুলিয়ে রাখা হতে পারে। তবে শুভেন্দুর তা নিয়ে কোনও হেলদোল নেই বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি। তাঁর অনুগামীদের বক্তব্য স্পিকার ডাকলে শুভেন্দু আবার গিয়ে তাঁর সামনে বসে ইস্তফাপত্রে সই করে দিয়ে আসবেন।