'সিঁদুরে মেঘ'টা কি বাংলাতেও দেখছে বিজেপি?
ভোট-বোদ্ধারা অনেকেই বলছে, একুশের বাংলায় লড়াইটা আসলে বিজেপি বনাম তৃণমূল। বাম, কংগ্রেসকে অনেকেই লড়াইয়ের মধ্যে রাখতে রাজি নন। কিন্তু দেশের কয়েকটি রাজ্যের সাম্প্রতিক অতীত যা বলছে, সব বিরোধীরাই বিজেপি-র কাছে দুশ্চিন্তার। যার নির্যাস, হলদিয়ার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি বাম ও কংগ্রেসকেও আক্রমণ করতে ছাড়লেন না। বললেন, 'বাংলায় প্রধান লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে। তবে এদের লুকনো বন্ধুদের থেকে সাবাধান। দিল্লিতে তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস বন্ধ ঘরে বৈঠক করে। পর্দার পিছনে ম্যাচ ফিক্সিং করেছে। কেরলেও বাম ও কংগ্রেস ডিল করেছে। ৫ বছর তোমরা লুঠ করো, ৫ বছর আমার লুঠ করবো। তাই এদের ভোট দেওয়া মানে পর্দার পিছনের খেলার শিকার হয়ে যাওয়া। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। '
ঠিক এই জায়গাতেই প্রশ্ন হল, তা হলে কি কর্নাটক ও মহারাষ্ট্রের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ভোট-পরবর্তী বিরোধী জোটের আভাস পাচ্ছে বিজেপি? পশ্চিমবঙ্গে প্রথম নির্বাচনী জনসভায় তৃণমূলের পাশাপাশি যে ভাবে বাম ও কংগ্রেসকেও একহাত নিলেন মোদী, তাতে প্রশ্নটা উঠছেই।
আরও পড়ুন: PM Modi In Haldia: বাংলায় বিরোধীদের একহাত মোদীর! 'তৃণমূল-বাম-কংগ্রেসের মধ্যে চলছে ম্যাচ ফিক্সিং'
কর্নাটক-মহারাষ্ট্রে কী হয়েছিল
২০১৮ সালে কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে কড়া টক্কর দিয়েছিল কংগ্রেস। বিজেপি পেয়েছিল ১০৪টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল ৮০টি আসন ও জেডিএস পেয়েছিল ৩৭টি আসন। স্বাভাবি ভাবেই বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সে ক্ষেত্রে সরকার বানানোর ক্ষেত্রে চালকের আসনে ছিল জেডিএস। বিজেপি-কে রুখতে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলায় জেডিএস। শর্ত ছিল, মুখ্যমন্ত্রী হবেন জেডিএস নেতা কুমারস্বামী। তা-ই মেনে নেন রাহুল গান্ধী। বিজেপি বৃহত্তম দল হলেও, কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী করেই কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকার তৈরি হয় কর্নাটকে। যদি এক বছর পরেই একাধিক বিধায়ক বিজেপি-তে ভিড়তে শুরু করায় জোট সরকারের পতন হয়।
মহারাষ্ট্রেও অভাবনীয় জোট দেখা গিয়েছে। তা হল, শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোট। বস্তুত, শিবসেনা ও বিজেপি-র মূল অ্যাজেন্ডাই হল হিন্দুত্ব রাজনীতি। শিবসেনার সঙ্গে জোট বেঁধেই ভোটে লড়ে বিজেপি। কিন্তু হঠাত্ শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে দাবি করে বসেন, তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে। বিজেপি রাজি ছিল না। দেবেন্দ্র ফড়নবীশকেই তারা মুখ্যমন্ত্রী করতে চায়। ঠাকরে পরিবারের কেউ কখনও মুখ্যমন্ত্রী হননি, বাল ঠাকরে বরাবর রিমোট কন্ট্রোল হাতে বসে থাকতেই পছন্দ করেছেন। কেন হঠাত্ উদ্ধব মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, সে কারণ পরে একদিন আলোচনা করা যেতে পারে।
২৮৮ আসনের বিধানসভায় এনডিএ জোটে বিজেপি পেয়েছিল ১০৫টি আসন, শিবসেনা ৫৬টি আসন। ইউপিএ জোটে কংগ্রেস পেয়েছিল ৫৪টি আসন, এনসিপি ৪৪। এখানেও বৃহত্তম দল বিজেপি। কিন্তু শিবসেনার সঙ্গে কংগ্রেস ও এনসিপির নজিরবিহীন জোট রুখে দিল বিজেপি-কে।
কর্নাটক-মহারাষ্ট্রের পুনরাবৃত্তি হতে পারে বাংলায়?
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী কয়েকটি জনসভায় বাম ও কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেও বামেদের ক্ষেত্রে আক্রমণের ঝাঁঝ ওতোটা প্রবল নয়। এমনকী বিজেপি কতটা বিপজ্জনক, তা বোঝাতে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের তালেই তাল মিলিয়েছেন মমতা। বিজেপি-কে ঠেকাতে অবশ্য মমতা বামেদেরকে একমঞ্চে ডেকেছিলেন সিএএ-এনআরসি বিরোধী মঞ্চেও। মমতার সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করতে চান না, স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ওদিকে বিজেপি-ও কিন্তু জানে, বাংলায় বামেদের ভোট কেটে অনেকটাই ঝুলি ভরে। নব্য বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীও বাম আমলের প্রশংসা করেছেন। বাম সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি কয়েক দিন আগে এক জনসভায় বলেন, 'লাল ঝান্ডা হাতে সিপিএম-এর সভায় যান। কিন্তু ভোটটা দেবেন বিজেপি-তে।'
জোট রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছুঁত্মার্গ নেই। ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতি যদি কর্নাটক বা মহারাষ্ট্রের মতো হয়? মোদীর 'ম্যাচ ফিক্সিং' আক্রমণ তাত্পর্যপূর্ণ। আফটার অল, রাজনীতি তো!