রাজ্য রাজনীতি এখন উত্তাল শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশেই গুলি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। অন্যদিকে বিজেপি সুর চড়াচ্ছে মমতার কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাওয়ের উস্কানি নিয়ে। এই আবহেই দিলীপ ঘোষ মুখ খললেন শীচলকুচি নিয়ে। রবিবার উত্তর চব্বিশ পরগনার বরানগরের বিজেপি প্রার্থী তথা অভিনেত্রী পার্নো মিত্রের সমর্থনে এলাকার প্রগতি সংঘের মাঠে জনসভা করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। সেখানে দিলীপ ঘোষ বলেন, কেউ যদি বাড়াবাড়ি করে, তবে জায়গায় জায়গায় শীতলকুচির মতো ঘটনা। বিজেপি রাজ্য সভাপতির কথায়, "মানুষ সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। আগামী ১৭ তারিখও আপনারা সকালবেলায় গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেবেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথে থাকবে। কেউ লাল চোখ দেখাতে পারবে না। আমরা আছি। আর কেউ যদি বাড়াবাড়ি করে... আপনারা শীতলকুচি দেখেছেন কি হয়েছে। জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে। তাই সাবধানে থাকবেন।"
মমতাকেই দোষ দিচ্ছেন দিলীপ
চতুর্থ দফার ভোটের দিন শীতলকুচির ঘটনার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ি করছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। প্রকাশ্য জনসভায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাওয়ের কথা বলেছিলেন মমতা। তৃণমূলনেত্রীর উস্কানিতেই এমন ঘটেছে, দাবি করেন দিলীপ। আগামী দিনে মমতাকে নির্বাচনী প্রচার থেকে ব্যান করা উচিত। না হলে এরকম ঘটনা আরো ঘটাবে বলে মন্তব্য করতে দেখা যায় বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে। দিলীপ বলেন "গতকাল উত্তরবঙ্গে ভোট হয়েছে, দিদিকে আয়না দেখিয়ে দিয়েছে। মমতা সারা জীবন লাশের রাজনীতি করেছেন। গতকাল কুচবিহারে আবার লাশ পরেছে। সেই লাশ নিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে হয়তো তিনি বলতে চেয়েছেন দেখুন আমার লোক কে মেরে ফেলেছে, আমাকে ভোট দিন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ঠিক করেছে ওই উপদ্রুত এলাকায় কোন নেতা-নেত্রীকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। যাতে আগুন জ্বালাতে না পারেন। আর ওই কষ্টেই তিনি শিলিগুড়িতে গিয়ে সংবাদিক সম্মেলন করেছেন।"
দুষ্টু ছেলেরা গুলি খেয়েছে: দিলীপ
দুষ্টু ছেলেরা গতকাল শীতলকুচিতে গুলি খেয়েছে। এই দুষ্টু ছেলেরা বাংলাতে থাকবে না। যদি কেউ আইন হাতে নিতে আসে, তবে তার যোগ্য জবাব দেওয়া হবে। এই দুষ্কৃতকারীদের ভোটের মধ্যে নিয়ে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মাথা নিচু করিয়েছেন। বরানগরের জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমন কথাই বলতে শোনা যায় দিলীপ ঘোষকে। তিনি বলেন, "জঙ্গলমহলে তৃণমূল ছিল না তাই সংঘর্ষ হয়নি। যেখানে যেখানে তৃণমূল আছে সেখানে সেখানে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হিংসার আশ্রয় নিচ্ছে। রক্ত বইছে বন্দুকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নিজে মানুষকে উস্কাচ্ছেন। উনি হেরে যাবেন বলে দুষ্কৃতীদের রাস্তায় নামিয়ে দিচ্ছেন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপরে আক্রমণ করছেন। এতে কিছু নিরীহ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে এটা খুবই দুঃখজনক।"
সিএএ নিয়ে দিলীপ
দিলীপ ঘোষ বলেন, দিদি অভিযোগ করেছেন দুই কোটি টাকা দিয়ে আমরা নাকি বিধায়ক কিনছি। কিন্তু আমি দিদিকে বলতে চাই আপনার কোন বিধায়ক এর দাম দু'কোটি টাকা? আমার কাছে নিয়ে আসুন। আজকে আপনার দামও দুই কোটি নয়। আপনাকে বিক্রি করলেও দুই কোটি টাকা পাওয়া যাবে না। আর আপনার বিধায়কের গায়ে এত দুর্গন্ধ যে টাকা দিলেও তাদের কেউ কিনবে না। দিলীপ ঘোষ জনসভায় আরো বলেন "ওপার বাংলা থেকে নিজেদের সম্মান বাঁচাতে যেসব মা-বোনেরা এখানে চলে এসেছেন, চোদ্দপুরুষের ধর্ম বাঁচাতে ভারতে এসেছেন, সেই হিন্দু বাঙালিকে এদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। আমরা সিএএ পাস করিয়ছি। যেদিন বিজেপি সরকার আসবে, প্রথম ক্যাবিনেট মিটিং-এই এটা নিশ্চিত হয়ে যাবে যে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।"
শীতলকুচি যাবে বিজেপিও
শনিবার কমিশন জানিয়ে দিয়েছে আগামী ৭২ ঘণ্টা কোচবিহারে প্রবেশ করতে পারবেন না কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী। রবিবার শীচলকুচি যাওয়ার কথা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এর ফলে সেই সফর বাতিল করতে হয় তৃণমূলনেত্রীকে। মমতা জানিয়ে দিন তিনি চতুর্থদিন শীতলকুচি যাবেন। এদিন দিলীপ ঘোষও জানান, ৭২ ঘণ্টা পর বিজেপির প্রতিনিধি দলও পা রাখবে শীতলকুচিতে। শনিবার প্রথমবার ভোট দিতে গিয়ে মায়ের চোখের সামনে মৃত্যু হয় ১৮ বছরের তরুণ আনন্দ বর্মনের। ভোটের লাইনে দাঁড়ানো ওই তরুণের পিঠে গুলি লাগে। মৃতের বাবার দাবি, তাঁর ছেলে বিজেপি সমর্থক। গুলি চালানোর অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে তৃণমূলনেত্রীকেই নিশানা করেন দিলীপ। দমদমে বিজেপি প্রার্থী বিমলশঙ্কর নন্দের হয়েও এদিন ভোট প্রচার করতে দেখা যায় দিলীপ ঘোষকে।