সাবেক নাম গৌড়। ঐতিহাসিক সব বড় বড় ইমারত এবং সৌধ, নবাবী আমলের সাক্ষ্য বহন করছে। তবে স্বাধীনতার পর থেকে বিশেষ করে গত কয়েক দশক থেকে আবু বরকত গনি খান চৌধুরী আবির্ভূত হওয়ার পর মালদহের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে তাঁর ব্যাপক প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা তাঁর মৃত্যুর পনেরো বছর পরও সমানভাবে মালদহবাসীকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
মালদহবাসীর কাছে আজও তিনি প্রিয় বরতকতদা। আজীবন জাতীয় কংগ্রেসে থাকা গনি খান চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার পরিবারের মধ্যে অবশ্য সেই বন্ধন অটুট থাকেনি। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকা কংগ্রেসের ক্ষমতা যত কমেছে, গনি খানের পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে সেই বন্ধন অনেকটাই ঢিলে হয়েছে। বরকতদার দুই ভাই ও তার পরিবার রাজনৈতিক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে দুই মেরুতে চলে গিয়েছেন। আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) কংগ্রেসে থেকে গেলেও আরেক ভাই আবু নাসির খান চৌধুরী (লেবু) তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। দীর্ঘদিন নিজেকে কংগ্রেসে রাখলেও বছর দুয়েক আগে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন বরকতদার ভ্রাতুষ্পুত্রী মৌসম বেনজির নূরও।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে গনি পরিবারের এই ভাঙ্গন যেমন কংগ্রেসকে দুর্বল করেছে, তেমনি মৌসম কিংবা লেবুদা তৃণমূলে যোগ দিলেও তাদের মধ্যে বরকতদার ছায়া এতটাই প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে যে তারা তা থেকে আজ পর্যন্ত বের হতে পারেননি। পারিবারিক সূত্রে বাঁধা থেকে কোনও জায়গায় চূড়ান্ত বিরোধিতার জায়গায় যেতে পারেননি কেউই। ফলে ডালুদা এবং মৌসম তৃণমূলে যাওয়ায় যে তৃণমূলের সংগঠন শক্তিশালী হবে বলে আশা করা গিয়েছিল তাও হয়নি। বরং বিব্রত তৃণমূল কর্মীরা অনেকটাই ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছেন। ফলে সংগঠন দুর্বল হয়েছে। যদিও না কংগ্রেস, না তৃণমূল কেউই এই তত্ব মানতে নারাজ, তবে সেই সুযোগে মালদহে শ্রীরূপা মিত্রকে সামনে রেখে অনেকটাই জমি দখল করতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। শ্রীরূপা মিত্রর ডাকাবুকো ইমেজ তাকে মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার করতে অনেকটাই সহজ করেছে।
অন্যদিকে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল তৃণমূলকে স্থায়ী পোক্ত জমি পেতে দেয়নি। যেখানে পুরনো ঐতিহ্য এবং বরকত ব্যাটে ভর করে বরং কংগ্রেস এখনো মানুষের মনে কিছুটা জায়গা ধরে রাখতে পেরেছে। মালদহে বরাবরই অন্তঃসলিলা অবস্থায় থাকা সিপিএম এবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে সংযুক্ত মোর্চায় রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে আইএসএফ। যা সিপিএম ও তাদের সহযোগী দলের পক্ষে সহায়ক হয়েছে। তবে পারিপার্শ্বিকতা এবং রাজনৈতিক পটভূমি বিচার করে ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যেই মালদহের সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির খবর রাখা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।