২০০৭ সালের ১৪ মার্চ দিনটা মনে পড়ে আপনাদের। পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিল ১৪ জন। রক্তে লাল হয়েছিল মাটি। আর সেই সঙ্গেই গোটা বাংলা তথা সারা দেশ, এমনকি দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল আমার নাম। বুঝলেন না? আমি নন্দীগ্রাম! বাম আমলের শেষের দিকে জমি আন্দোলনের আগে সেভাবে কেউ আমার কথা শোনেওনি। আর পাঁচটা গ্রামের মতোই একেবারে অতি সাধারণ ছিলাম আমি। কিন্তু সিঙ্গুর ও পরবর্তী সময়ে ঘটে যাওয়া সেই জমি আন্দোলন, যেন রাতারাতি দেশের মানচিত্রে আলাদা ভাবে চিনিয়ে দিয়েছিল আমাকে। তারপরের ঘটনাতো আপনারা সবাই জানেন। আমার বুকের ওপরে চলা লাগাতার আন্দোলন ৩৪ বছরের বাম শাসনের ভিত পর্যন্ত নড়িয়ে দিয়েছিল।
তবে সেসব অবশ্য এখন অতীত। রাজ্যে পালাবদলের পর আগামীর পথে এগোচ্ছিলাম ভালই আমি। কিন্তু হঠাৎ আবার সব উথালপাথাল, আবার সেই আলোচনার কেন্দ্রে আমি। তার কারণটাও আপানার জানেন। একসময়ের সতীর্থরা আজ একে অপরের প্রধান প্রতিপক্ষ। আর তাঁরা তাঁদের কুরুক্ষেত্রে হিসেবে বেছে নিয়েছেন আমাকেই। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে আমার মাটিতেই লড়াইয়ে নেমেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই দুই মহারথীর টক্কর নাকি বঙ্গ নির্বাচনের এপিসেন্টার করে দিয়েছে আমাকে। হঠাৎই করে আবারও সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার মুখ সেই আমার দিকে।
তবে কদিন আগেও চিত্রটা এমন ছিল না জানেন। জীবন যাত্রা ছিল একেবারে ছাপোসা। কিন্তু যেই না মমতা বন্দ্যোপাধ্যয় বলে বসলেন যে তিনি এখান থেকে লড়বেন, ব্যস তখনই আমায় নিয়ে শুরু হয়ে গেলে আলোচনা। জল্পনা চলতে লাগল তবে কি বিপরীতে শুভেন্দু অধিকারী? আর জল্পনার পারদ যত চড়েছে, ততই আমায় নিয়ে বেড়েছে সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলগুলির ব্যস্ততা। শুরু হয়ে গিয়েছে সভা, পালটা সভা। আর এখন তো শুভেন্দু অধিকারীর নামও ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। তাই একচুলও জায়গা ছাড়তে রাজি নয় কোনও পক্ষ। এমনকি তৃণমূল নেত্রীতো আমার কাছে কয়েকদিন থাকবেন বলে বাড়িও নিয়েছেন। তৈরি হয়েছে হেলিপ্যাড। শুনছি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও নাকি আসবেন। মানে একেবারে হৈ হৈ ব্যাপার, রৈ রৈ কাণ্ড। কেন্দ্রীয় নেতাদের আসার অর্থ, ফের একবার জাতীয় রাজনীতিতে আমায় নিয়ে চর্চা। তবে আশঙ্কাও আছে, ক্ষমতার দখলের লড়াইতে আবার না রক্ত ঝড়ে! আর এই আশা-আশঙ্কার দোলাচল যে ২ মে-এর আগে বন্ধ হবে না, তা ভালই বুঝতে পারছি।