একুশের নির্বাচনের আগে পূর্ব মেদিনীপুরে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা নিয়ে উতেজনা ছিলই রাজ্য-রাজনীতিতে। যে নন্দীগ্রাম দিয়ে বাংলায় 'পরিবর্তন' এনেছিলেন মমতা সেই নন্দীগ্রামে বদল এসেছে। 'ভূমিপূত্র' শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল শিবির ত্যাগ করে গিয়েছেন পদ্ম শিবিরে। কিন্তু তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাস্টারস্ট্রোক দেওয়ায় তিনি পটু। দিলেনও। ঘোষণা করলেন ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকেই অংশ নিতে পারেন তিনি।
২০১১ সালে যে কেন্দ্র তাঁকে ক্ষমতায় এনেছিল এক দশক পর তাই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিজের 'লাকি' জায়গাই বেছে নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মমতা বলেন, "আমার অন্তরাত্মা জানায় এই নন্দীগ্রাম আমার জন্য লাকি জায়গা, পবিত্র স্থান। এখান থেকে লড়াই করা ভাগ্যের। ভবানীপুর হল বড় বোন আর নন্দীগ্রাম হল ছোট বোন।"
এখন প্রশ্ন হল কেন নন্দীগ্রামকেই বাছলেন মমতা? কেবল 'লাকি' এলাকা বলেই? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা কিন্তু অন্য হিসেব দিচ্ছেন। কারণ হিসেবে প্রাধান্য দিচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারীকে। তৃণমূল অস্বীকার করলেও নন্দীগ্রাম আন্দোলনে অধিকারী পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য, একথা সকলেই জানে। নির্বাচনের প্রাক মুহুর্তে তাই শুভেন্দু দল ছাড়তেই তড়িঘড়ি 'ভোট বাঁচাতে' ছুটে এলেন মমতা। প্রায় ছ' বছর পর এলেন নন্দীগ্রামে।
দ্বিতীয় কারণ, নিজের কেন্দ্র ভবানীপুর এখন মমতার লড়াইয়ের জন্য 'সেফ' নয়। লোকসভা নির্বাচনে সেখানের কয়েকটি ওয়ার্ডে অত্যন্ত স্বল্প ব্যবধানে জিতেছে তৃণমূল। যা চিন্তা বৃদ্ধি করেছে তৃণমূল সুপ্রিমোর। ভবানীপুর, রাসবিহারী এলাকায় এক হাজারেরও কম ভোটে জিতেছে ঘাসফুল শিবির। ভবানীপুর সংলগ্ন চেতলা এলাকা, যা ফিরহাদ হাকিম দুর্গ হিসেবে খ্যাত। সেই দুর্গেও চিড় ধরেছে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে।
দক্ষিণ কলকাতায় গুজরাটি, পাঞ্জাবি, মারওয়ারিদের একটা বড় অংশের বাস। বাঙালি বনেদি বাড়ি এখন তাঁরাই কিনছেন। কলকাতা পৌরসভার পরিসংখ্যান বলছে কলকাতায় ৫৫ শতাংশ বাংলাভাষী, হিন্দিভাষী ২০ শতাংশ এবং ইংরেজিভাষী ১০ শতাংশ। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমল কুমার মুখোপাধ্যায় জানান, "আগে এই বিভেদ ছিল না। কিন্তু লোকসভা ভোটের সময় থেকে মমতা প্রচার করেন যে বাংলায় যারা থাকবেন তাঁদের বাংলায় কথা বলতে হবে। এরপর মনক্ষুণ্ণ হন হিন্দিভাষীরা। আর নির্বাচন ফলাফলে বিজেপির আসন জেতা সেই বিভেদটি স্পষ্ট করেছে।"
সোশিওলজিস্ট বিভাগের অধ্যাপক তথা প্রফেসর এমিরেটাস প্রশান্ত রায় বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী এক একটা জেলার জন্য বিভিন্ন সুবিধা ঘোষণা করে থাকেন। নন্দীগ্রামের মানুষের মমতার প্রতি দুর্বলতা ছিল। উনি যদি এখান থেকে লড়াই করেন তাহলে পড়শি জেলাদের কাছেও উনি ঘরের মেয়ে হতে পারবেন। এই মনস্তত্ব থেকেও এই সিদ্ধান্ত। এছাড়াও শুভেন্দুও বড় কারণ।"