Advertisement

পরেশের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব সামলাতে হিমশিম দল,২১-এ কল্যাণের কাছে গোল খাবেন সাধন?

এবারের একুশের ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ ভারতীয় জনতা পার্টি তাতে কোনও দ্বিমত নেই। তবে এরসঙ্গে দলনেত্রীর আরও এক অন্যতম চিন্তার বিষয় গোষ্ঠীদ্বন্দ। দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ কোনভাবে রেয়াত করা হবে না। বারবার এই বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেখতে গেলে গত দুই বারের বিধায়ক সাধন পাণ্ডের এবারে মানিকতলা থেকে হ্যাটট্রিক করা উচিত। তবে একুশের লড়াইটা তেমন সোজা নয় রাজ্যের মন্ত্রীর। কারণ সেই পদ্ম কাঁটা। এবার মানিকতলায় বিজেপি প্রার্থী করেছে ফুটবলার কল্যাণ চৌবেকে। তিনিও আবার এলাকারই ছেলে। এই আবহে ঘাসফুল ও পদ্মফুলের লড়াইয়ে জনতা কাকে বাছবে তা কিন্তু লাখ টাকার প্রশ্ন।

উত্তর কলকাতার রাজনীতিতে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের সঙ্গে বেলেঘাটার বিদায়ী বিধায়ক পরেশ পালের লড়াই নতুন নয়
সুমনা সরকার
  • কলকাতা,
  • 23 Apr 2021,
  • अपडेटेड 10:56 PM IST
  • উত্তর কলকাতার অন্য়তম বিধানসভা কেন্দ্র মানিকতলা
  • এখান থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে
  • গত ২ বার মানিকতলার বিধায়ক এবার পারবেন জয়ের ধারা বজায রাখতে

এবারের একুশের ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ ভারতীয় জনতা পার্টি তাতে কোনও দ্বিমত নেই। তবে এরসঙ্গে দলনেত্রীর আরও এক অন্যতম চিন্তার বিষয় গোষ্ঠীদ্বন্দ। দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ কোনভাবে রেয়াত করা হবে না। বারবার এই বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেও হেভিওয়েট নেতাদের কানে সেই কথা যায় কোথায়? উত্তর কলকাতার রাজনীতিতে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের সঙ্গে বেলেঘাটার বিদায়ী বিধায়ক পরেশ পালের লড়াই তেমনি নতুন নয়। শাসক দলের বর্ষীয়ান এই দুই নেতাকে দলের অনুশাসনের তোয়াক্কা না করে সুযোগ পেলেই এক-অপরের বিরুদ্ধে বারবার ব্যক্তিগত আক্রমণ শানাতে দেখা গেছে। এবারের ভোটযুদ্ধেও টিকিট পেয়েছেন দু'জনেই। বেলেঘাটা থেকে লড়ছেন পরেশ পাল। আর পাশের কেন্দ্র মানিকতলায় মমতা ভরসা রেখেছেন সাধন পাণ্ডের উপরেই। পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেখতে গেলে  গত দুই বারের বিধায়ক সাধন পাণ্ডের এবারে মানিকতলা থেকে হ্যাটট্রিক করা উচিত। তবে একুশের লড়াইটা তেমন সোজা নয় রাজ্যের মন্ত্রীর। কারণ সেই পদ্ম কাঁটা। এবার মানিকতলায় বিজেপি প্রার্থী করেছে  ফুটবলার কল্যাণ চৌবেকে। তিনিও আবার এলাকারই ছেলে। এই আবহে ঘাসফুল ও পদ্মফুলের লড়াইয়ে জনতা কাকে বাছবে তা কিন্তু লাখ টাকার প্রশ্ন। 

 

সাধন পাণ্ডের রাজনৈকি যাত্রা
 মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। ১৯৯৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানের আগে সাধন পাণ্ডে কংগ্রেসে ছিলেন। তিনি  কংগ্রেসে থাকাকালীন বটতলা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৬ বার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কলকাতা উত্তর-পূর্ব থেকে কংগ্রেসের টিকিটে হেরে যান। এরপরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধন পাণ্ডেকে ক্যাবিনেটে নিয়েছিলেন। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে মানিকতলা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে পরপর দু'বার বিধায়ক হয়েছেন সাধন। এহেন রাজনীতিবিদের একুশের ভোটের আগে দলবদলের জল্পনা নিয়ে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। 

Advertisement

করেছিলেন মমতাকেও চ্যালেঞ্জ , এবার গড় রাখতে পারবেন পরেশ?

দলের একাধিক নেতার সঙ্গে শীতল সম্পর্ক
এক দলে থাকলেও পাশাপাশি দুই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক সাধন পাণ্ডে ও পরেশ পালের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরি আদায়-কাঁচকলায়।  পরেশ পাল একবার অভিযোগ করেছিলেন সাধন পাণ্ডে সিঙ্গুরের সময় থেকেই টাটাদের দালালি করেন। কংগ্রেসে থাকার সময়েও সোমেন মিত্র, প্রণব মুখোপাধ্যায়, বরকত গণিখান চৌধুরীর পিছনেও তিনি লেগেছিলেন।  এমনকি পরেশ পাল গতবছর হুমকি দিয়েছিলেন সাধন পাণ্ডেকে দল থেকে তাড়াতে ১৫ হাজার মানুষ নিয়ে রাস্তায় নামবেন। এমনকি শোনা যায় তৃণমূলের আরেক মন্ত্রী শশী পাঁজা, কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন কারও সঙ্গেই সাধনের তেমন ভাল সম্পর্ক নেই। 

লোকসভায় এগিয়ে BJP, খেলা ঘোরাবেন অজিত পাঁজার পুত্রবধূ?

দূরত্ব বেড়েছিল ঘাসফুলের সঙ্গেও
আমফান পরবর্তীয় সময়ে কলকাতা পুরসভার প্রশাসক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছিলেন সাধন পাণ্ডে।  ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁর কোনও পরামর্শ নেওয়া হয়নি বলে দাবি ছিল রাজ্যের ক্রেতা-সুরক্ষা মন্ত্রীর। পরেশ পালকে বিঁধতে গিয়ে  একবার দলের শীর্ষনেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেছিলেন তিনি। সাধন বলেছিলেন, ‘নেতা-নেত্রীকে বলে হবে না। তারা মনে করে যারা গুন্ডামি করে তাদের করতে দিতে হবে’। এখানেই থেমে থাকেননি সাধন, রাজ্য়ের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী বলেছিলেন,'আমফান দুর্নীতির কান্ডারীদের দল থেকে তাড়িয়ে দিলেই হবে না । এদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে হবে।' তৃণমূল নেতার এই বক্তব্য়কে ঘিরে রাজ্য় রাজনীতিতে শুরু হয় নয়া জল্পনা। তবে কি বিজেপি মুখী সাধন ?

 

মেয়ের সঙ্গে সাধন পাণ্ডে

 

সাধনের বিজেপি যোগের জল্পনা
একবার সাধন পাণ্ডেকে বিধান রায়ের জন্ম ও মৃত্যু দিনে উত্তর কলকাতা জেলা বিজেপির সভাপতি শিবাজি সিংহ রায়ের সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গিয়েছিল একেবারে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। তখনই জল্পনা হয়েছিল তাহলে কি সাধন পাণ্ডে বিজেপির পথ ধরছেন। রাজ্য়ের রাজনৈতিক মহলের মত ছিল, বার বার দলকে অস্বস্তিতে ফেলে ২১-এর জল মাপছিলেন সাধনবাবু। সেই সময়  সাধন পাণ্ডের বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযোগ করে পরেশ পাল বলেছিলেন , রোজভ্যালি মামলায় সিবিআই আর ইডির হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে বিজেপির সাথে বোঝাপড়া করে তৃণমূলের ক্ষতি করেছেন সাধন পাণ্ডে। যদিও বিধানসভা ভোটের আগে দলবদল করতে দেখা যায়নি তাঁকে। উল্টে মানিকতলা কেন্দ্রে তাঁর ওপরেই ভরসা রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী।

মানিকতলা কেন্দ্রর পরিস্থিতি
একসময় বামেদের দখলে থাকা মানিকতলা লোকসভা কেন্দ্র থেকে ২ বার বিধায়ক হয়েছিলেন পরেশ পাল। ২০১১ সালে পরিবর্তনের বছরে মানিকতলা থেকে বিধায়ক হন সাধন পাণ্ডে। ২০০৬ সালের বিধায়ক তথা বাম প্রার্থী রূপা বাগচিকে সেবার সাধনবাবু হারিয়েছিলেন ৩৬ হাজার ৫৫০ ভোটের ব্যবধানে। পেয়েছিলেন মোট ভেটের ৬০.০৫ শতাংশ। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এই বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল লিড পায় ১৮,৭৮৫ ভোটের। ২০১৬ সালেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। সেবার বামপ্রার্থী রাজীব মজুমদার কে সাধন পাণ্ডে হারিয়েছিলেন ২৫,৩১১ ভোটে। কিন্তু এবারে জয় আর অতটা সহজ নয়। কারণ মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে তাদের ব্যাপক প্রভাব বেড়েছে বলে দাবি বিজেপির। সাম্প্রতিক চিত্রটাও কিন্তু সেদিকেই দিক নির্দেশ করছে। ইতিমধ্যে সাধনকে কটাক্ষ করে পরেশ পালকে বলতে শোনা গিয়েছে, 'লোকসভা নির্বাচনে বেলেঘাটায় ৫৪,০০০ ভোটের লিড ছিল তৃণমূলের। মানিকতলায়  হেরেছে’।

 

কল্যাণ চৌবে

 

Advertisement

পেশায় তিনি  সর্বক্ষণের রাজনীতিক। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, বর্তমান সরকারের মন্ত্রী, ভোটের ময়দানে তাঁর প্লাস পয়েন্ট। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বেফাঁস মন্তব্য করে দলের একাংশেরই অসন্তোষের কারণ হয়েছেন সাধন। তাই সেই ক্ষোভ ভোটবাক্সে পড়বে কিনা তা দোসরা মে বোঝা যাবে। এদিকে এবার বিজেপির হয়ে ময়দানে নেমেছেন প্রাক্তন ভারতীয় গোলকিপার কল্যাণ চৌবে। জোটের তরফে প্রার্থী হয়েছেন একদা বিধায়ক থাকা সিপিএমের রূপা বাগচি। তবে লড়াইটা তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির সেই বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই। গত লোকসভা   ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে মহুয়া মৈত্রের কাছে হেরেছিলেন কল্যাণ চৌবে। এ বার মানিকতলা কেন্দ্রে হেভিওয়েট সাধন পাণ্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েও ম্যাচ কঠিন মানতে রাজি নন কল্যাণ। বাংলার ভোটে 'খেলা হবে' স্লোগান তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে সাধনের গোল আটকে কল্যাণ নিজে গোল করতে পারেন কিনা সেটাই এখন দেখার।

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement