লাভপুর (Labpur) আর মনিরুল ইসলাম (Manirul Islam), নামদুটো যেন সমার্থক। অর্থাৎ একটি নাম উঠলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই যেন চলে আসে দ্বিতীয় নামটি। একটা সময় পর্যন্ত বীরভূমের (Birbhum) যে সমস্ত এলাকা ও ব্যক্তির নাম সংবাদ শিরোনামে প্রায়শই উঠে আসত তার অন্যতম ছিল এই লাভপুর ও মনিরুল ইসলাম। তবে সাম্প্রতিককালে তাতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে বলেই মনে করছে জেলার রাজনৈতিকমহলের একাংশ। কিন্তু কেন? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, সেই বিশ্লেষণে যেতে গেলে অবশ্যই একবার ফিরে দেখতে হবে লাভপুরের ইতিহাস।
সালটা ছিল ২০১০। লাভপুরে খুন হন সিপিআইএম সমর্থক ৩ ভাই। সেই ঘটনায় মনিরুল ইসলাম সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। মনিরুল অবশ্য সেই সময় ফরওয়ার্ড ব্লকে ছিলেন। এরপর তৃণমূলে যোগ দেন মনিরুল এবং ২০১১ সালের নির্বাচনে ঘাসফুলের টিকিটে লড়ে লাভপুরের বিধায়কও হন তিনি। ২০১৬ সালেও ওই কেন্দ্র থেকেই তৃণমূলের হয়ে জেতেন মনিরুল। তখনও পর্যন্ত মোটামুটি সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু তার কিছুদিন পর থেকে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে বিবাদকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরেই ক্রমশ কোণঠাসা হতে থাকেন মনিরুল। যার জেরে একটা সময় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে বিজেপিতে যোগ দেন লাভপুরের এই নেতা।
তবে বিজেপিতে যোগদান কিন্তু খুব একটা স্বস্তি দেয়নি মনিরুলকে। কারণ তাঁকে দলে নিতেই বীরভূমে বিজেপির অন্দরে একাংশের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ তো প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আর জেলা নেতৃত্বের একাংশের এই আপত্তির জেরেই কার্যত মনিরুলকে নিয়ে বিশেষ মাতামাতি করতে দেখা যায়নি বিজেপির রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। যার জেরে বিজেপিতে যোগ দিলেও খুব একটা সুবিধাজনক জায়গায় আসতে পারেননি মনিরুল ইসলাম।
যদিও তারপরেও মনিরুল বিধানসভা ভোটে লাভপুরে বিজেপির টিকিটের আশায় ছিলেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। কিন্তু টিকিট পাচ্ছেন না সেকথা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরেই নির্দল হিসেবে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন মনিরুল ইসলাম। সেই মতো এবারে নির্বাচনে ফোয়ারা চিহ্নে লড়ছেন তিনি। তবে আদালতের নির্দেশে লাভপুর থানা এলাকায় তাঁর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই সেখানে প্রচারে দেখা যায়নি তাঁকে। যদিও তা নিয়ে অবশ্যে খুব একটা ভাবছেন না মনিরুল। এক্ষেত্রে মনোনয়ন পেশের পরেই সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছিলেন, লাভপুরে ব্যক্তি মনিরুল ইসলামের নামে ভোট হবে।
অন্যদিকে তৃণমূলের কারও কারও অভিযোগ,তাদের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাতেই মনিরুলকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। প্রসঙ্গত এবারের নির্বাচনে লাভপুরে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন বীরভূমের আরও এক হেভিওয়েট নেতা অভিজিৎ সিংহ। আর বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন বিশ্বজিৎ মণ্ডল। অন্যদিকে সংযুক্ত মোর্চার সিপিআইএম প্রার্থী হয়েছেন সৈয়দ মাহফুজুল করিম। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত কাকে সমর্থন দেন লাভপুরের মানুষ।