দেখতে দেখতে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার শেষ। কোভিড পরিস্থিতিতে শেষ ৩ দফার প্রচার ভোটের দিনের ৭২ ঘণ্টা আগেই সমাপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই অনুযায়ী চলতি বিধানসভা নির্বাচনের শেষ প্রচার সোমবারই। অন্যবারের মতো এবারেও ভোটের প্রচারে ঝড় তুলেছিল রাজনৈতিক দলগুলি। ছিল বেশকিছু অভিনবত্বও। এছাড়াও ২০২১-এর নির্বাচনী প্রচার ময়দানে এমন কিছু ঘটনা দেখেছেন রাজ্যবাসী, যা হয়ত এবারেই প্রথম। একবার ফিরে দেখা যাক পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার পর্ব।
হুইলচেয়ারে প্রচার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
নন্দীগ্রামে গিয়ে পায়ে চোট পান তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। তবে পায়ে চোট পেলেও প্রচার থেমে থাকেনি মমতার। পায়ে প্লাস্টার নিয়ে হুইলচেয়ারে বসেই প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। আর শুধু নন্দীগ্রামে নিজের জন্য প্রচার নয়, গোটা রাজ্যজুড়ে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনেও প্রচার করেছেন তৃণমূল নেত্রী।
মিঠুন চক্রবর্তীর প্রচার
নির্বাচনের আগেই বিজেপিতে যোগ দেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। এরপর বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে গোটা রাজ্যজুড়ে প্রচার চালান তিনি। করেন বেশকিছু রোড শো। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ থাকাকালীন তাঁকে কয়েকবার প্রচারে দেখা গেলেও এতটা সক্রিয় ভাবে হয়ত দেখা যায়নি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এবারের ভোটের প্রচারে মিঠুনের সক্রিয় অংশগ্রহণ বঙ্গবাসীর কাছে নিঃসন্দেহে নয়া পাওনা।
জয়া বচ্চনের প্রচার
এবারের ভোটে তৃণমূলকে সমর্থন জানিয়েছে আরজেডি ও সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলিও। আর শুধু সমর্থনই নয়, তৃণমূলের হয়ে প্রচারের জন্য জয়া বচ্চনকে প্রতিনিধি করে বাংলায় পাঠান সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। রাজ্যে বেশ কয়েকদিন টানা প্রচার করেন জয়া। এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ মনে করেছিলেন মিঠুনের পালটা জয়াই হয়ত তৃণমূলের অস্ত্র।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আনাগোনা
এবারের নির্বাচনে বাংলায় বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। লাগাতার বাংলায় সভা, রোড শো করেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডার মতো শীর্ষ বিজেপি নেতারা। এছাড়াও ভোটের প্রচারে বাংলায় আসেন যোগী আদিত্যনাথ স্মৃতি ইরানি, রাজনাথ সিং-এর মতো নেতা নেত্রীরাও। বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এতবার বঙ্গে আগমনও এর আগে তেমন দেখা গিয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
আব্বাস সিদ্দিকীর মন্তব্যে প্রকাশ্যে সংযুক্ত মোর্চার অভ্যন্তরীণ বিবাদ
গণতান্ত্রিক কাঠামোর জোট করে লড়াই নতুন কোনও ঘটনা নয়। পশ্চিমবঙ্গেও এর আগে একাধিকবার জোট করে লড়তে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন দলকে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, জোট থাকলে তার ভিতরে কিছু সমস্যাও থাকে। তবে প্রচারের ময়দানে তা খুব একটা প্রকাশ্যে আসতে দেখা যায়নি। কিন্তু এবারে আইএসএফ নেতা আব্বাস সিদ্দিকীর বক্তব্যে তা বারেবারেই প্রকাশ পেয়েছে। আসন বণ্টন নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আইএসএফ যে মতপার্থক্য তা সেই ব্রিগেডের ময়দান থেকে মুর্শিদাবাদ, মাঝেমধ্যেই জনসমক্ষে উঠে এসেছে।
খেলা হবে স্লোগান
এবারের নির্বাচনের প্রচারে অন্যতম বহুল ব্যবহৃত শব্দবন্ধ, যা শাসক বিরোধী সবার মুখেই শোনা গিয়েছে তা হল 'খেলা হবে'। প্রথম এই শব্দবন্ধটি শোনা গিয়েছিল বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মুখে। পরে তা তৃণমূলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের মাধ্যমে তা স্লোগানের রূপ নেয়। এমনকী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও শোনা যায় 'খেলা হবে' স্লোগান।
টুম্পা-হাল্লা গাড়ি-পিসি যাও
চিরাচরিত ধারা ছেড়ে এবার প্রচারের নতুন পন্থা অবলম্বন করে সিপিআইএম তথা বামেরা। যার অন্যতম টুম্পা গানের প্যারোডি। টুম্পা নিয়ে পরপর ২টি প্যারোডি তৈরি করে সিপিআইএম, যা রীতিমতো জনপ্রিয় হয়। এছাড়া এবার সোশ্যাল মিডিয়াতেও জোরদার প্রচার চালান হয় বামেদের তরফে। পাশাপাশি সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের সমর্থনে বিশেষ ভাবে রাস্তায় রাস্তায় প্রচার চালায় 'হাল্লা গাড়ি'। অন্যদিকে বিজেপির তৈরি করা 'বেলা চাও'-এর প্যারোডি 'পিসি যাও' গানটিও বেশ জনপ্রিয় হয়।