Advertisement

প্রেস্টিজের লড়াইয়ে নন্দীগ্রামের সঙ্গে জঙ্গলমহলও, শুভেন্দুর পরীক্ষা শুরু শনিতেই

২০১১-এর বিধানসভা ভোটে জঙ্গলমহলে ঘাসফুল ফোটানোর নায়ক ছিলেন শুভেন্দু। উনিশে লোকসভায় ভরাডুবির পরে তাই তাঁর উপরই আস্থা রেখেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। নন্দীগ্রাম শুভেন্দুর কাছে মরন-বাঁচনের লড়াই তাতে সন্দেহ নেই। দীর্ঘদিন যে নেত্রীর ছত্রছায়ায় থেকে কাজ করেছেন তিনি আজ তাঁর বিরুদ্ধেই লড়াইয়ের ময়দানে নেমে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারকে বাজি রাখছেন শুভেন্দু। তিনি দলবদল করে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা তার উত্তর দেবে নন্দীগ্রাম। তবে কেবল নন্দীগ্রাম নয় শুভেন্দু অধিকারীর পরীক্ষা নেবে জঙ্গলমহলও।

Suvendu Afhikari
সুমনা সরকার
  • কলকাতা,
  • 24 Mar 2021,
  • अपडेटेड 9:46 PM IST
  • ২০১১-এর বিধানসভা ভোটে জঙ্গলমহলে ঘাসফুল ফোটানোর নায়ক ছিলেন শুভেন্দু
  • উনিশের ভোটে পর্যদুস্ত হতেই জঙ্গলমহলের দায়িত্ব শুভেন্দু অধিকারীর হাতেই তুলে দিয়েছিলেন মমতা
  • নতুন দলে গিয়ে নিজের সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে এবার জঙ্গলমহলে পদ্ম ফোঁটাতে সফল হবেন তিনি?

আগামী পয়লা এপ্রিল রাজ্যে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। এই পর্যায়তেই রয়েছে একুশের ভোটে সবচেয়ে হাইপ্রফাইল কেন্দ্র নন্দীগ্রাম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ের মঞ্চে অবতীর্ণ নিজেকে এলাকার ভূমিপুত্র বলে দাবি করে থাকা শুভেন্দু অধিকারী। ভোটের সাতদিন আগে প্রচার এখন তাই সপ্তমে। নন্দীগ্রাম শুভেন্দুর কাছে মরন-বাঁচনের লড়াই তাতে সন্দেহ নেই। দীর্ঘদিন যে নেত্রীর ছত্রছায়ায় থেকে কাজ করেছেন তিনি আজ তাঁর বিরুদ্ধেই লড়াইয়ের ময়দানে নেমে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারকে বাজি রাখছেন শুভেন্দু। তিনি দলবদল করে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা তার উত্তর দেবে নন্দীগ্রাম। তবে কেবল নন্দীগ্রাম নয় শুভেন্দু অধিকারীর পরীক্ষা নেবে জঙ্গলমহলও। একদা তৃণমূলে থাকাকালীন যার দায়িত্বে ছিলেন স্বয়ং শুভেন্দু। সেখানে দলবদলের পর তাঁর প্রভাব এখনও কতটা অক্ষুন্ন রয়েছে তার জবাব মিলবে দোসরা মে। তবে নন্দীগ্রামের আগেই একুশের ভোটে শুভেন্দুর পরীক্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছে আগামী শনিবার থেকে। সেদিন ভোট রয়েছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপর ও ঝাড়গ্রামের আদিবাসী এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গলমহলের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই একুশের ভোটে জঙ্গলমহলেও নিজের ক্যারিশ্মা ধরে রাখা শুভেন্দুর কাছে আরেক অগ্নিপরীক্ষা।

নিজেকে প্রমাণের লড়াই

শুভেন্দুর জঙ্গলমহল যোগ
দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গলমহলের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর সম্পর্ক রয়েছে। মাওবাদী আন্দোললের সময়েও তিনি একাধিকবার জঙ্গলমহলের নানা জায়গায় সভা, মিছিল করেন। তৃণমুল কংগ্রেসে থাকাকালীন এই অঞ্চলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আদিবাসী সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।  লোকসভা ভোটে দলের খারাপ ফলের জন্য সাংগঠনিক স্তরে একাধিক রদবদল করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  সেই সময় মমতা জঙ্গলমহলের দায়িত্ব দিয়েছিলেন  শুভেন্দু অধিকারীকে।

অধিকারী জমানাতেও 'কাস্তে-হাতুড়ি'! নজরে তমলুক

জঙ্গলমহল উদ্ধারে শুভেন্দুই ভরসা ছিলেন মমতার
 ২০১১-এর বিধানসভা ভোটে জঙ্গলমহলে ঘাসফুল ফোটানোর নায়ক ছিলেন শুভেন্দু। উনিশে লোকসভায় ভরাডুবির পরে তাই তাঁর উপরই আস্থা রেখেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েতে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের খারাপ ফলের পরে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ঝাড়গ্রামে দলীয় পর্যবেক্ষক করেছিলেন মমতা। শুভেন্দুকে সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে শুভেন্দু তাতে আগ্রহী হননি। মজার কথা, গত লোকসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া  এই দুটি জেলার পর্যবেক্ষক ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও দুই মেদিনীপুরও তিনি দেখতেন। বাঁকুড়ার দুটি কেন্দ্রেই হেরে যায় তৃণমূল। বাঁকুড়ায় পরাজিত হন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। আর বিষ্ণুপুরে তো প্রচারে ঢুকতে না পেরেও জিতে যান বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। মেদিনীপুরেও জয়ী হন দিলীপ ঘোষ। উনিশের ভোট মিটতেই তাই  জঙ্গলমহলের দায়িত্ব  শুভেন্দু অধিকারীর হাতেই তুলে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
তখন ছিল সুদিন

নন্দীগ্রামে সাফল্যের পর জঙ্গলমহলের পরিদর্শক করা হয় শুভেন্দুকে
নন্দীগ্রামে সাফল্যের পর মমতা শুভেন্দুকে জঙ্গলমহলের পরিদর্শকের দায়িত্ব দেন। পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া- জঙ্গলমহলের এই তিন জেলায় তাঁর তত্ত্বাবধানেই মূলত সংগঠন মজবুত করে তৃণমূল। ২০১৫-র জুনে মমতা শুভেন্দুকে দায়িত্ব দেন রাজ্য কংগ্রেসের শেষ ঘাঁটি মুর্শিদাবাদ ও মালদা ছিনিয়ে আনতে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর চোখের সামনে দিয়েই মুর্শিদাবাদের একের পর এক পুরসভা, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করতে থাকে তৃণমূল। একইভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে মালদায় গনি খান পরিবারের বহু বছরের রাজনৈতিক দুর্গ। বোঝাই যাচ্ছে শুভেন্দুর সাংগঠনিক দক্ষতা প্রশ্নাতীত। 

বিরোধীদের অস্ত্র আমফান দুর্নীতি, ভোটবাক্সে কোন ঝড়ের অপেক্ষায় সাগর?

এবার জঙ্গলমহল পরীক্ষা শুভেন্দুর কাছেও
২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম দুর্গ দুরমুশ করে বাংলায় ‘মা-মাটি-মানুষের সরকার’-এর ক্ষমতায় আসার নেপথ্য়ে নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শুভেন্দুর ‘বড়’ ভূমিকা উল্লেখযোগ্য় বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।  একের পর এক নির্বাচনে জয় সেইসঙ্গে সাংগঠনিক দক্ষতায় তৃণমূলের অন্য়তম প্রধান সৈনিক হয়ে উঠেছিলেন শুভেন্দু। শুধু নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরই  নয়, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামেও শুভেন্দুর দাপট চোখে পড়ার মতো। এই ৫ জেলায়  ৫৬ টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে।  অতীতে শুভেন্দুর সাংগঠনিক দক্ষতাকে রাজ্য়ের অন্য় প্রান্তেও কাজে লাগিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। জঙ্গলমহল, মালদা, মুর্শিদাবাদে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু। তাই তৃণমূল ছাড়লেও জঙ্গলমহল এলাকায় যে তার প্রভাব এখনও অটুট তা প্রমাণের দায় রয়েছে শুভেন্দুর। এদিকে রাজ্যের প্রাক্তন পরবহন মন্ত্রী দল ছাড়তেই বাঁকুড়া জেলা যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ দাস-কে বহিষ্কার করে তৃণমূল। তিনি শুভেন্দু পন্থী হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। একই অবস্থা হয় শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ আরও বেশকিছু নেতার।

 

শুভেন্দুর সাংগঠনিক দক্ষতা কিন্তু প্রশ্নাতীত

কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে জঙ্গলমহল
২০১৬ তে ঘসফুলের জয়জয়কার দেখেছে জঙ্গলমহল। সেই চিত্র পাল্টে গিয়েছে উনিশের লোকসভা ভোটে।  বিধানসভাওয়াড়ি ফলের নিরিখে জঙ্গলমহলের চার জেলা অর্থাৎ ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ার মোট ৪০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩০টিতে এগিয়ে বিজেপি, ১০টিতে তৃণমূল। বাংলা জয়ে আদিবাসী ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা জানে গেরুয়া শিবির। তাই প্রধানমন্ত্রী থেকে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবাই এখন ভোট প্রচারে ভিড় করছেন জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে। পিছিয়ে নেই তৃণমূলনেত্রীও। হারানো জমি ফেরাতে পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে তিনিও জেলাসফর করে বেড়াচ্ছেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে। এই দুই শিবিরের মাঝে বড় ফ্যাক্টর হতে পারেন শুভেন্দু। প্রথম দুই দফাতে ভোট হচ্ছে জঙ্গলমহলে। নিজের কেন্দ্রে ভোট রয়েছে শুভেন্দুরও। হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়াইয়ের কারণে এখন অনেকটা সময় নন্দীগ্রামেই দিতে হচ্ছে তাঁকে। তাই জঙ্গলমহলের বাকি জেলাগুলির প্রচারে তেমন ভাবে পাওয়া যায়নি শুভেন্দুকে। তবে নিজের  সংগঠনকে আরও সক্রিয় করতে ভোটের আগেই নিয়মিত পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম সফর করতে দেখা গেছে তাঁকে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হোল, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে সংখ্যালঘু ভোট কম। কোথাও ৯ শতাংশ, কোথাও বা ৫ শতাংশ। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে লোকসভা ভোটের আগে থেকেই বিজেপি  এই অঞ্চলে সংখ্যাগুরু ভোটের মেরুকরণের চেষ্টা করেছে। তা উনিশের ভোটে অনেকটাই ফল দিয়েছে। এবার বিজেপির কৌশলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শুভেন্দুর সাংগঠনিক দক্ষতা।  মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গলমহলে এক সময়ে তৃণমূলের সংগঠন তৈরির দায়িত্বে থাকা শুভেন্দু আদিবাসী, জনাজাতিদের রাজনৈতিক মূলস্রোতে আনতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। জঙ্গলমহলের মাওবাদী সমস্যাও তাতে কমেছিল। সেই কারণে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ, পি চিদম্বরমের প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন তিনি। শুভেন্দু সেই জনভিত্তিকেই ভরসা করে  তাই  এবার জঙ্গলমহল উনিশের মতো একুশের যুদ্ধেও নিজেদের দখলে রাখার স্বপ্ন দেখছে গেরুয়া শিবির। 

Advertisement

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement