৬ তারিখ বঙ্গ সফরে আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। লক্ষ্য বাংলায় পরিবর্তন যাত্রার সূচনা করা। সেই একই কর্মসূচিতে ১১ তারিখ উত্তরবঙ্গে পা রাখছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কোচবিহার থেকে বাংলার পরিবর্তনের রথ ছোটাবেন তিনি। এর মাঝেই টুক করে বঙ্গ সফর প্রধানমন্ত্রীর। না এই সফর একেবারেই রাজনৈতিক নয়। সরকারি সফর। তবে প্রধানমন্ত্রীর এই ঝটিকা সফর ঘিরেই এখন বঙ্গ রাজনীতিতে চলছে নতুন আলোচনা। কারণে সরকারি সফর হওয়ায় আমন্ত্রণপত্রে ডাক পেয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
গত ২৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার আয়োজিত ভিক্টোরিয়ার নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেবার মোদী-মমতাকে পাশাপাশি দেখা গেলেও তাল কেটে গিয়েছিল অনুষ্ঠানের। মমতা ভাষণ দিতে উঠতেই তাঁকে লক্ষ্য করে 'জয় শ্রী রাম' ধ্বনি ওঠে। ক্ষুব্ধ মমতা সেদিন পোডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমেই হিন্দিতে বলেছিলে, ‘‘আমার মনে হয়, সরকারি অনুষ্ঠানের একটা শালীনতা থাকা উচিত। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নয়। এটা সমস্ত দলেরই কর্মসূচি। জনতার কর্মসূচি।’’এরপর প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্যই রাখেননি না মমতা। এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে অনেক জলঘোলা হয়েছে। তারপর রাজ্যে ফের সরকারি অনুষ্ঠানে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রটোকল মেনে যেখানে থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রীরও। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিন হলদিয়ার অনুষ্ঠানে থাকছেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট করেনি নবান্ন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি:
চালু হবে ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে এলপিজি টার্মিনাল। এই প্রজেক্টের জন্য খরচ হয়েছে ১,১০০ কোটি টাকা। উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস পরিষেবা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতেই এই এলপিজি টার্মিনাল তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আত্মনিভর ভারত মিশনে হলদিয়া পেট্রোলিয়াম এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কারখানা তৈরি করছে, যেখানে লুব্রিক্যান্ট বেস তৈল তৈরি হবে, তারও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের এই দুটি প্রকল্পের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন মন্ত্রকের আওতায় একটি সড়ক প্রকল্পেরও শিলান্যাস হবে। ইউরিয়া গঙ্গা প্রকল্পের আওতায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহেরও সূচনা করবেন মোদী। এই প্রকল্পটির জন্য ব্যয় হচ্ছে ২,৪৩৩ কোটি টাকা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৯০ কোটি টাকায় ব্যয়ে হালদিয়া রাঁচি চার লেনের ফ্লাইওভারেরও সূচনা করবেন।
সামনেই বাংলার নির্বাচনের দিন ঘোষণা
নির্বাচন কমিশন আর কয়েকদিনের মধ্যেই বাংলায় বোটের দিন ঘোষণা করতে চলেছে। মনে করা হচ্ছে এবার নির্বাচনের দিন এগিয়ে নিয়ে আসতে চাইছে কমিশন। এই আবহে হলদিয়ার সরকারি মঞ্চ থেকে মোদী বাংলার জন্য কী ঘোষণা করেন সেদিকেই তাকিয়ে সকলে। বিহার নির্বাচনের আগে বিহারবাসীর জন্য একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলার জন্যও তেমনি কিছু রয়েছে কিনা তার জন্যই অধীর আগ্রহে চলছে অপেক্ষা। কমিশন ভোটের দিন ঘোষণা করে দিলে নির্বাচনী কোড অব কনডাক্টে কোনও ঘোষণা করা যাবে না। তার আগে মোদীর এই সভা তাই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সামনে আসছে অন্য সমীকরণও
প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল ছাড়াও আমন্ত্রন জানান হয়েছে অধিকারী পরিবারের দুই সাংসদ শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারীকে। আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন ঘাটালের সাংসদ দেবও। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের যুক্তি, স্থানীয় সাংসদ হিসেবেই আমন্ত্রণ পেয়েছেন দিব্যেন্দু। কারণ, হলদিয়া তমলুক লোকসভা এলাকার মধ্যে।তবে কাঁথির সাংসদ শিশির ও ঘাটালের সাংসদ দেবকে কেন আমন্ত্রণ জানান হল সরকারি অনুষ্ঠানে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও বুধবারই দেব ট্যুইট করে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে থাকবেন না। শারীরিক অসুস্থতার কারণে যাচ্ছেন না শিশিরও। তবে দিব্যেন্দু জানিয়েছেন তিনি থাকবেন। এমনিতেই অধিকারী পরিবারকে নিয়ে তৃণমূলে টেনশন বাড়ছে। তারমধ্যে মোদীর সভায় দিব্যেন্দুর উপস্থিতি নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের গন্ধ দেখতে পাচ্ছেন অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞই।