Advertisement

Saumitra Khan-Sujata Political Drama: রাজনীতির পাশা খেলায় ১০ বছরের সম্পর্ক, বিচ্ছেদের সীমানায় কী বললেন সৌমিত্র-সুজাতা

লোকসভা ভোটের সময় বিষ্ণুপুরে বিজেপির জন্য নয়, নিজের স্বামীর জন্য লড়েছিলেন সুজাতা। সেই সময় সৌমিত্রর জন্য সুজাতার লড়াই প্রশংসাও কুড়িয়েছিল বিভিন্ন মহলে। স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসার যে সম্পর্কের উদাহরণ তাঁদের দিয়ে টানা যেত সহজেই তাই আজ খাদের কিনারায়। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর সৌমিত্র খাঁ ও সুজাতার জীবনের রাস্তা আলাদ করে দিল। যাকে এখনও মন থেকে ভালবাসেন বলে জনসমক্ষে স্বীকার করেন সৌমিত্র, কেঁদে ভাসান সংবাদমাধ্যমের সামনে, তাঁকেই বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিস পাঠালেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ। কিন্তু সত্যিই কি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেবল কাগজের ওপর নির্ভরশীল। কান্না ভেজা গলায় একে অপরকে কী বলছেন সৌমিত্র-সুজাতা?

বিচ্ছেদের কথায় চোখে জল দু'পক্ষেরইবিচ্ছেদের কথায় চোখে জল দু'পক্ষেরই
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 21 Dec 2020,
  • अपडेटेड 10:06 PM IST
  • বিচ্ছেদের কথায় চোখে জল দু'পক্ষেরই
  • দাবি করছেন একে অপরকে আজও ভালবাসেন
  • তাহলেও কেন ভালবাসার সম্পর্কের মাঝে এই বিচ্ছেদের কাঁটা?

একসময় তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ হয়েছিলেন সৌমিত্র খাঁ। কিন্তু গত লোকসভা ভোটের আগে পুরনো দলের প্রতি ক্ষোভ উগরে তৃণমূল ছেড়েছিলেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিষ্ণুপুর আসনে সৌমিত্রর উপরেই আস্থা রেখেছিল বিজেপি। কিন্তু  একাধিক মামলায় অভিযুক্ত সৌমিত্র বাঁকুড়া জেলার কোথাও, মানে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ছ’টি বিধানসভা ক্ষেত্রে প্রচারের জন্য ঢুকতেই পারেননি আদালতের নির্দেশে। সৌমিত্রর অনুপস্থিতিতে প্রচার করেছিলেন স্ত্রী সুজাতা। কেন্দ্রের প্রায় ৮০ শতাংশ জায়গায় প্রচার না করেও প্রার্থী জিতেছেন, এমনটা এই রাজ্যের লোকসভা ভোটে এক রকম নজিরবিহীন। বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে খণ্ডঘোষ বিধানসভা ক্ষেত্রটি পূর্ব বর্ধমান জেলায়। মামলায় অভিযুক্ত সৌমিত্র খাঁ আদালতের নির্দেশে সীমাবদ্ধ ছিলেন শুধু ওই কেন্দ্রে। অথচ, বিষ্ণুপুরের সাতটি বিধানসভা ক্ষেত্রের মধ্যে কেবল ওই খণ্ডঘোষেই লিড পেয়েছে তৃণমূল। তা-ও আবার ৩০ হাজারের বেশি ভোটে। আর বাকি যে ছ’টি বিধানসভা ক্ষেত্র যেখানে সৌমিত্র ঢুকতেই পারেননি, তার প্রতিটিতেই তিনি লিড পেয়েছিলেন। সৌমিত্রর হয়ে কার্যত একাই বিজেপির প্রচার সামলান সুজাতা মণ্ডল খাঁ। ভোটের দিনও তৃণমূলের বাহিনীর বিরুদ্ধে একা লড়তে দেখা যায় তাঁকে। 

একা কুম্ভ হয়ে সাংসদ করেছিলেন ‘মেঘনাদ’ স্বামীকে,আজ আলাদা কেন ভালবাসার পথ

নিজের জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী সুজাতা, সেকথা বারবার স্বীকার করেছেন সৌমিত্র। লোকসভা ভোটে সৌমিত্র অনুপস্থিতিতে বারবার সুজাতা প্রচারের আলোতেও আসতেন। কখনও টেলিভিশনে তাঁকে দেখা যেত স্বামীর জয়ের জন্য যজ্ঞ করছেন, আবার কখনও দেখা যেতে গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাতজোড় করে ভোট চাইছেন। বিষ্ণুপুরে  দলের জয়ে সুজাতার প্রশংসা করতে শোনা গিয়েছিল বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। সেই সময় বিজেপির এক শীর্ষ নেতা মজা করে বলেছিলেন, ‘সৌমিত্রর উচিত সাংসদ পদটা ওর স্ত্রীকে দিয়ে দেওয়া।’ 

একে অপরকে আজও ভালবাসেন

লোকসভা ভোটের সময় বিষ্ণুপুরে বিজেপির জন্য নয়, নিজের স্বামীর জন্য লড়েছিলেন সুজাতা। সেই সময় সৌমিত্রর জন্য সুজাতার লড়াই প্রশংসাও কুড়িয়েছিল বিভিন্ন মহলে। স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসার যে সম্পর্কের উদাহরণ তাঁদের দিয়ে টানা যেত সহজেই তাই আজ খাদের কিনারায়। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর সৌমিত্র খাঁ ও সুজাতার জীবনের রাস্তা আলাদ করে দিল। যাকে এখনও মন থেকে ভালবাসেন বলে জনসমক্ষে স্বীকার করেন সৌমিত্র, কেঁদে ভাসান সংবাদমাধ্যমের সামনে, তাঁকেই বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিস পাঠালেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ। কিন্তু সত্যিই কি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেবল কাগজের ওপর নির্ভরশীল। কান্না ভেজা গলায় একে অপরকে কী বলছেন সৌমিত্র-সুজাতা?

Advertisement

আরও পড়ুন

অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা বজায় রাজীবের, কাটল না জট

সোমবার দুপুরে বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের  স্ত্রী সুজাতা যোগ দেন তৃণমূলে । সুজাতা মণ্ডল খাঁ জানান, দল বদল করে তিনি প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন। তাঁর দাবি, বিজেপিতে তিনি যোগ্য সম্মান ও মর্যাদা পাননি। সেই কারণেই দল বদল করলেন। এদিকে মানুষের কথা ভাবতে গিয়ে, মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেননি, কখন ঘরের লক্ষ্মীকেই তৃণমূল চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। এমনই প্রতিক্রিয়া ছিল সৌমিত্রর। স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল খাঁ তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকাশ্যে কেঁদে ফেলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ। এরপরই সাংবাদিক বৈঠকে অশ্রুসজল বিজেপি সাংসদ বলেন, বিবাহবিচ্ছেদের নোটিস পাঠাচ্ছি, হাতজোড় করে বলছি সই করে দিও,সব সম্পর্ক শেষ, খাঁ পদবি ছেড়ে দিও।

ভালবাসার সম্পর্কের মাঝে বিচ্ছেদের কাঁটা

নিজের দলবদলের সিদ্ধান্তে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের এই চরম পরিণতি অবাক করছে সুজাতাকে। দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গীর এই ঘোষণায় যেমন বিস্মিত সুজাতা, তেমনই আহতও। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, তৃণমূলে যোগদানকারী স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য বিজেপিই সৌমিত্রকে চাপ দিচ্ছে। তাই কান্নাভেজা গলায় সুজাতা বলছেন, ”স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে কোনও তৃণমূল, বিজেপি আসতেই পারে না। সুজাতার উত্তর, "জানি না কারা তোমায় আমাকে বিচ্ছেদের বুদ্ধি দিচ্ছে।” স্বামী তাঁকে ছেড়ে গেলেও তিনি যে চিরকাল সৌমিত্রর স্ত্রী হিসেবেই পরিচয় বহন করবেন, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন সুজাতা।

মেলায় অবাধে জুয়া খেলছেন মহিলারা, দেখছে পুলিশ, রয়েছে এই রাজ্যেই

 স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে সৌমিত্র বলেছেন, বাচ্চা মেয়ে, অনেক উচ্চাকাঙ্খা ছিল। সৌমিত্রর অভিযোগ , 'তৃণমূল কংগ্রেস চুরি করত জানি, কয়লা চুরি করত, গরু চুরি করত, মেধা চুরি করত জানতাম কিন্তু ঘরের মা লক্ষ্মীকে চুরি করে নিয়ে যাবে এটা ভাবিনি। কারণ সুজাতা আমার কাছে ছিল মা লক্ষ্মীর মতো। যাই হোক ভালো থাকুক। বিজেপি পরিবারকেন্দ্রীক নয়। বিজেপি পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে। সেখানে স্বামী-স্ত্রীকে দুটো জায়গা দেওয়া যায় না। সেটা ওঁ জানে। আমায় যদি ওঁ বলতো আমায় সাংসদ পদ ত্যাগ করতে হবে আমি সেটাও করতাম। দলকে বলতাম। সুজাতা তুমি এগিয়ে চল। খাঁ পদবি আর ব্যবহার করো না। কারণ খাঁ আমার বংশ পরিচয়।'  কিন্তু শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতের পার্থক্যের জন্য মুহূর্তের মধ্য এতদিনকার সমস্ত লড়াইয়ের সাথীর সঙ্গে সম্পর্ক চিরতরে শেষ করে দেওয়া যায়, ভাবনাতেই ছিল না সুজাতার। তাই ধাক্কাটা সামলাতে একটু সময় লেগেছিল। তবু কি পারলেন সুজাতা খাঁ? সবটা সামলে উঠতে? পারেননি, তা বোঝাই গেল তাঁর কথায়। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে অনেক চেষ্টা করেও কান্না চাপতে পারলেন না কিছুতেই। আবেগভরা গলায় বলে উঠলেন, ”আমি সৌমিত্রের নামেই সিঁদুর পরেছি। আগামী দিনেও পরব। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্বর্গে তৈরি হয়। স্বর্গে তৈরি হওয়া সেই সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারে মর্ত্যের কোনও রাজনৈতিক দল? আমরা রাম-সীতার মত, আমরা লক্ষ্মী-নারায়ণের মত। কেউ আমাদের সম্পর্ক ভাঙতে পারে না। আজও আমি সৌমিত্রকে ভালবাসি। ওর নামে সিঁদুর, নোয়া পরেছি। আজীবন এসব আমার সঙ্গে থাকবে।” 

এদিকে সৌমিত্রর আশঙ্কা খুন হয়ে যেতে পারেন স্ত্রী সুজাতা৷  স্ত্রীকে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিস পাঠানোর কথা জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সৌমিত্র৷ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ''মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী দয়া করে সুজাতাকে খুন করে ফেলবেন না৷' বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদের অভিযোগ, সুজাতার এই রাজনৈতিক উচ্চাশাকে কাজে লাগিয়েই তাঁকে ভুল বুঝিয়েছে তৃণমূল৷ সুজাতা যে এমন করবেন, তা তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি বলে স্বীকার করে নিয়েছেন সৌমিত্র৷ অন্য়দিকে স্বামীর প্রতি সুজাতার  বার্তা, ”ওর ভালো হোক। বিজেপি ক্ষমতায় এলে ও যেন মুখ্যমন্ত্রী হয়। ওর এই আত্মত্যাগ যেন বিজেপি না ভোলে।” দুই তরফই দাবি করছেন, তাঁরা একে অপরকে আজও ভালবাসেন৷  প্রেম পর্ব ধরলে তাঁর এবং সুজাতার সম্পর্ক প্রায় দশ বছরের৷ সেই সম্পর্কেই আপাতত ইতি টানল রাজনীতি৷

Advertisement


 

Read more!
Advertisement
Advertisement