Advertisement

ভিড় টানতে ব্যর্থ শাহ-নাড্ডা-যোগী, সাধের জঙ্গলমহলে কোন অশনিসঙ্কেত BJP-র

এবারের নবান্ন অভিযানে জঙ্গলমহলের ওপর বিরাট ভরসা রয়েছে শাহ-নাড্ডাদের। সেইমত গেমপ্ল্যানও সাজিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা সকলেই বঙ্গ বিজয়ে জঙ্গলমহলের জনসমর্থন পেতে মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক চিত্রটা আশা জাগানোর বদলে তাঁদের কপালে চিন্তার ভাজ গাঢ় করছে। মাত্র দু'বছরের মধ্যে কি বদলে গেল জঙ্গলমহলের জনতার মন? সেই প্রশ্নও এখন উকিঝুঁকি দিচ্ছে বিজেপি শিবিরের আনাচে-কানাচে।

BJP Flag
সুমনা সরকার
  • কলকাতা,
  • 17 Mar 2021,
  • अपडेटेड 5:44 PM IST
  • আদিবাসী-অধ্যুষিত জঙ্গল-মহল লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখে হাসি ফুটিয়েছিল
  • জঙ্গলমহলকে দিয়েই বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন শাহ-নাড্ডারা
  • কিন্তু ভোট যত এগোচ্ছে ততই যেন তাল কাটছে সুর, কারণটা কী?

লোকসভা ভোটে বঙ্গ বিজেপিকে ২২টি আসনের টার্গেট বেঁধে দিয়েছিলেন অমিত শাহ। তখন তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। শাহের দেওয়া লক্ষ্য ছুঁতে না পারলেও খুব কাছাকাছি পৌঁছেছিল ভারতীয় জনতা পাটি। ১৮টি আসন নিয়ে বঙ্গীয় রাজনীতিতে প্রথমবার বিরোধী শক্তি হয়ে উঠেছিল বিজেপি। আর সেই জয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিল জঙ্গলমহল। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামের মানুষের সমর্থন গিয়েছিল  গেরুয়া শিবিরের দিকেই। পরিসংখ্যান বলছে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলের ৪৬.৫ শতাংশ ভোট গিয়েছিল গেরুয়া শিবিরের ঝুলিতে। তাই এবারের নবান্ন অভিযানে জঙ্গলমহলের ওপর বিরাট ভরসা রয়েছে শাহ-নাড্ডাদের। সেইমত গেমপ্ল্যানও সাজিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা সকলেই বঙ্গ বিজয়ে জঙ্গলমহলের জনসমর্থন পেতে মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক চিত্রটা আশা জাগানোর বদলে তাঁদের কপালে চিন্তার ভাজ গাঢ় করছে। মাত্র দু'বছরের মধ্যে কি বদলে গেল জঙ্গলমহলের জনতার মন? সেই প্রশ্নও এখন উকিঝুঁকি দিচ্ছে বিজেপি শিবিরের আনাচে-কানাচে।

'জঙ্গলমহলের মা' থেকে সম্পর্ক তলানিতে, তাল কেটেছিল কিসে?

লোক টানতে ব্যর্থ অমিত শাহ
গত নভেম্বর থেকেই ভোটের কথা মাথায় রেখেই এরাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। স্বয়ং দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নভেম্বরে দু 'দিনের বঙ্গ সফরে এসে জনসংযোগ বাড়াতে ছুটে গিয়েছিলেন বাঁকুড়ায়। বোঝাই যাচ্ছিল এবারের নির্বাচনী পরিকল্পনায় বিজেপি আলাদা গুরুত্ব দিতে চলেছে জঙ্গলমহলকে। এবার রাজ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ২৭শে মার্চ ও পয়লা এপ্রিল ভোট অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে। তাপমাত্রার পারদের সঙ্গে তাই চড়ছে নির্বাচনী উত্তাপও। কিন্তু তার মাঝেই কোথায় যেন তাল কেটেছে গেরুয়া শিবিরের। অন্তত গত দু'দিনের ঘটনাপ্রবাহ কিন্তু তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। রাজ্যে ভোটের দিন ঘোষণার পর রবিবার প্রথম বাংলায় পা রেখেছিলেন অমিত শাহ। খড়গপুরে রোড শো তাঁকে যতটা আশার আলো দেখিয়েছিল পরেরদিন কিন্তু ততটাই চিন্তা বাড়িয়ে দিল ঝাড়গ্রাম ও খাতরা। সোমবার জঙ্গলমহলে দুটি সভা ছিল শাহের। তার মধ্যে ঝাড়গ্রামের সভা বাতিল করতে হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, তাঁর হেলিকপ্টারে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল। সেই কারণে তিনি সভাতে যেতে পারেননি। তবে এটাও ঠিক এগরায় অমিত শাহের সভায় কিন্তু তেমন লোক হয়নি। এরপর খাতরার জনসভায় অবশ্য সশরীরে হাজির হয়েছিলেন শাহ। তারপরেও বাঁকুড়ার  খাতড়া স্টেডিয়ামের মাঠের অর্ধেকের বেশি অংশ সোমবার ফাঁকা ছিল। তাই নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। । ওই সভায় রোদ থেকে বাঁচতে দর্শকদের জন্য গড়া হয়েছিল তিনটি শামিয়ানা। তার মধ্যে একটি ভরলেও, বাকি দু’টি কার্যত ফাঁকা থাকতে দেখা গিয়েছিল। গত নভেম্বরে জেলা সফরে আসা শাহের সভায় দলীয় কর্মীদের যে  স্রোত দেখা গিয়েছিল মাত্র  চার মাসের মধ্যে তা কোথায় চলে গেল? তা নিয়ে কার্যত চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গিয়েছে দলের অন্দরে।

Advertisement
কী ভাবছেন দুই মহারোথী?

নাড্ডা-যোগী-রাজনাথরাও তেমন সাড়া পেলেন না
সোমবার এগরায় বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি নিতিন গড়কড়ির সভাতেও তেমন লোক হয়নি। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার বিষ্ণপুরে রোড শো ও জনসভা ছিল গেরুয়া শিবিরের বর্তমান সর্বভারতীয় সভাপতির। গত লোকসভা ভোটে বিষ্ণুপুর থেকে বিপুল ভোটে জেতে বিজেপি। সেখানেও উল্লেখযোগ্য ভিড় নজরে আসেনি। এর সঙ্গেই মাত্র এক মাস আগে বর্ধমানে  বিজেপি সভাপতির রোড শোতে যে উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল তার বিস্তর ফারাক রয়েছে। মঙ্গলবার বিজেপির স্টার প্রচারক যোগী আদিত্যনাথের  সভাতেও ভরেনি মাঠ। পুরুলিয়ার বলরামপুরে যোগীর সভায় মাঠ ছিল অর্ধকের বেশি খালি। কার্যত ফাঁকা মাঠেই হিন্দুত্বের জয়গান করতে দেখা যায়  আদিত্যনাথকে। দাসপুরে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সভাতেও নজরে আসেনি আহামরি জনসমাগম। এর আগে গত রবিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির শালবনির সভাতেও লক্ষ্য করা যায়নি ভিড়। স্টার প্রচারকদের সভার এই হাল উৎকন্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবিরের আন্দরে। 

জমল কই নাড্ডার রোড শো?

বিরোধী শিবিরের কটাক্ষ শুরু
তৃণমূল চক্রান্ত করে সমর্থকদের সভায় আসতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করছে বিজেপি শিবির। এদিকে সোম ও মঙ্গলবার ভোট প্রচারে জঙ্গলমহলেই ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট প্রচারে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কর্মসূচিতে এই হাল দেখে নিয়মিত গেরুয়া শিবিরের দিকে কটাক্ষ ছুঁড়ছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। শাহের সভার থেকে পাড়ার চায়ের দোকানে বেশি ভিড় হয় এমন মন্তব্যও প্রকাশ্য জনসভায় করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সভায় ভিড় না হলে লোক পাঠিয়ে দেব, এমন খোঁচা দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী স্বয়ং। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং-সহ একাধিক জায়গায় বিজেপির সভায় লোক হচ্ছে না। ঝাড়গ্রামেও এই একই ছবি ধরা পড়েছে। সভায় লোক না হওয়ায় এর আগে অর্জুন সিং, ভারতী ঘোষের মতো রাজ্যস্তরের নেতাদেরও ফেরত যেতে হয়েছে। 

'চাচা' নেই, কংগ্রেসও নেই! খড়গপুরে বিজেপি বনাম তৃণমূলই

 তবে কি জঙ্গলমহলে বিজেপির সমর্থন কমছে? 
জঙ্গলমহলে ভোটের আগে একের পর এক সভায় ভিড় না হওয়ার জন্য চাপানউতোরও শুরু হয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। সূত্রের খবর, এই নিয়ে অমিত শাহ রাজ্য নেতৃত্বের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছেন। সার্বিক ভাবে ব্যবস্থাপনায় যে ত্রুটি রয়ে গিয়েছে তা বুঝতে পারছেন শাহ-নাড্ডারাও। সেই কারণে সোমবার রাতে অসম সফর সেরে ফের কলকাতার হোটেলে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ-সহ রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শাহ। যেখানে উপস্থিত ছিলেন নাড্ডাও। মঙ্গলবার রাজ্য নেতৃত্বকে ফের একবার দিল্লিতে ডেকে পাঠান হয়। 

Advertisement
যোগীর সভায় ফাকা পড়ে চেয়ার

এদিকে জঙ্গলমহলে হঠাৎ করেই বিজেপির সভায় ভিড় কমে যাওয়ার জন্য  রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বিভিন্ন ‘তত্ত্ব’ খাড়া করছেন। তার মধ্যে রয়েছে বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে মাল্যদান প্রসঙ্গও। গত  নভেম্বরে বাঁকুড়ায় বিজেপির আয়োজিত বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে মালা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্কে জড়ান শাহ। সে বিতর্ক নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছে। পুরুলিয়ার ঝালদায় ভোটপ্রচারে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে সেই  কথা ফের শোনা গিয়েছে। ওই বিতর্কের রেশ আদিবাসী সমাজের মনে রেখাপাত করেছে কি না, তা নিয়ে  নানা মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। এছাড়া  তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে যাওয়া নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলের পুরনো সৈনিকদের মধ্যে অসন্তোষ জমছে, এই বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।   একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে  বিজেপির ‘ক্লিন সুইপ’ পাওয়া বেশ কঠিন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। জঙ্গল মহলের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনে বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই পালন করেনি তাঁরা। উলটে বিজেপির প্রতি ক্ষুব্ধ আদিবাসীদের একাংশ। বরং আমজনতার মন জিতেছে রাজ্য সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘দুয়ারে সরকারে’র মতো প্রকল্পগুলি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রকল্পগুলি তৃণমূলের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়েছে খানিকটা। তাই লোকসভা ভোটে গেরুয়া ঝড় দেখা জঙ্গলমহল এবারের বিধানসভা ভোটে কার মুখে হাসি ফোটাবে তা এখন দুই শিবিরের কাছেই সবচেয়ে দামি প্রশ্ন। 


 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement