বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বদলে যাচ্ছে বঙ্গ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট। একদা দিলীপ-মুকুলের (Dilip Ghosh) (Mukul Roy) বিজেপিতে (BJP)এখন শুভেন্দু-রাজীবের (Suvendu Adhikari) (Rajib Banerjee) রমরমা। দিল্লির সবুজ সংকেত পেয়েই এখন জোর কদমে ছুটছে এই রাম-লক্ষণ ব্রিগেড। ভোটের আগে মোদী-শাহের নেক নজরে যুব জুটি।
মুকুলের 'বৈরাগ্য কথা'- কিছুদিন আগেও বিজেপিতে দিলীপ-মুকুল আলাদা ক্যাম্প নিয়ে চর্চার অন্ত ছিল না। যদিও সেই দ্বন্দ্ব এখন অতীত কথা। খোদ মুকুলের মুখেই শোনা যাচ্ছে বৈরাগ্য় কথা। সম্প্রতি কালনায় রাজ্য় বিজেপির অন্য়তম কান্ডারি বলেন ''এখন জায়গা ছেড়ে দেওয়ার পালা এসেছে। আমি জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি। জায়গা ছেড়ে দেওয়াটাও একটা আর্ট। কখন ছাড়তে হবে সেটা শিখতে হয়।'' পূর্ব বর্ধমানের কালনায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতির মুখে এহেন বাক্য়বন্ধ শুনে অবাক হয়েছেন অনেকেই। রাজ্য় রাজনীতির কুশীলবরাই বলতে শুরু করেছেন, বিজেপিতে শুভেন্দু-রাজীবের মতো যুব নেতারা আসায় প্রচারের আলো থেকে সরে গিয়েছেন মুকুলরা। যদিও নিজের যুক্তিতে অনড় থেকেছেন বিজেপির 'রায়বাবু'। নিজের ছেলের উদাহরণ দিয়ে মুকুল বলেছেন, আমার একটি পুত্র আছে। সে দু'বারের বিধায়ক। আমি যদি বলি আমিই রাজনীতি করব,তাহলে ওদের কী হবে ?
মুকুল নিয়ে ফিরহাদের খোঁচা- মুকুল রায়ের 'বৈরাগ্য় কথা' নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম। শুভেন্দু বাংলার মুখ শুনে ফিরহাদ বলেন,বিজেপিতে তাহলে এখন আর মুকুল রায়ের মুখ বিক্রি হচ্ছে না। তাই নতুন মুখ খোঁজা শুরু হয়েছে। সেই তালিকায় শুভেন্দুর নাম এসেছে। বাংলায় একটাই মুখ ,সেটা মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের। সেই জায়গাটা নতুন করে কেউ নিতে পারবে না।
শুভেন্দুর সাংগঠনিক ক্ষমতা- রাজ্য় রাজনীতির হাওয়া মোরগ বলছে,শুভেন্দুই এখন রাজ্য়ে মোদী-শাহের অশ্বমেধের ঘোড়া। তাঁকে দিয়েই তৃণমূল কাঁটা হটাবে বিজেপি। মমতা-অভিষেককে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই ওদের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল শুভেন্দু। এছাড়াও প্রশাসনিক দক্ষতাও তাকে মাত দেওয়া কঠিন। নিজে একাধিক দফতরের মন্ত্রী থাকার দরুণ সরকার চালানোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। তৃণমূলের দুর্বল জমিতেও ঘাসফুল ফুটিয়ে দেখিয়েছেন শুভেন্দু। সেই কথা বিলক্ষণ জানেন মোদী-অমিত শাহরা।
রাজীবের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি- শুভেন্দুর মতো রাজনৈতিক ক্যারিশ্মা না থাকলেও দলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্য় রাজীবের প্রতি আলাদা কদর রয়েছে বিজেপির। স্পষ্ট বক্তা হিসাবে ইতিমধ্য়েই বিজেপির সভায় নিজেকে মেলে ধরেছেন রাজীব বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। শুভেন্দু যখন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে নিয়ে খোঁচা দিচ্ছেন, তখন কটূক্তির খেলায় নামব না বলছেন হাওড়া ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক। যার জেরে রাজীব সম্পর্কে কুকথা বলতে গিয়েও বাঁধছে তৃণমূলের। ঘাসফুলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, রাজীব নিয়ে কাঁদা ছোড়ায় নামতে রাজি নন মুখপাত্ররা। ইতিমধ্য়েই উত্তরবঙ্গ থেকে নাম না করে রাজীবের বিরুদ্ধে বন সহায়ক পদে কারসাজির অভিযোগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার পাল্টা কালীঘাটের বিরুদ্ধে নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে পর্দাফাঁস করেছেন রাজীব। যার জেরে পদ্ম শিবিরের নেক নজরে তিনি।
দিলীপ জানেন না, রাজীব জানেন- সম্প্রতি বঙ্গে অমিত শাহের সফর বাতিল হয়। তবে সশরীরের উপস্থিত না থাকতে পারলেও হাওড়ায় ভার্চুয়াল কংফারেন্সে ভাষণ দেন তিনি। যদিও খোদ রাজ্য় বিজেপির সভাপতির কাছে ডুমুরজলার সভা নিয়ে এই তথ্য় ছিল না। যা ছিল রাজীবের কাছে। মনে করা হচ্ছে, দিল্লির সুনজরে থাকায় ইতিমধ্য়েই বঙ্গ বিজেপির অঙ্গ হয়ে উঠেছেন রাজীব বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। যদিও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন দিলীপপন্থীরা। তাদের মতে, রাজীব চার্টার্ড প্লেনে দিল্লির যাওয়ার দিন, শাহের সঙ্গে ডুমুরজলার ভার্চুয়াল কনফারেন্স নিয়ে কথা হয়ে থাকতে পারে। সেই খবর তখনও দিলীপবাবুর কাছে পৌঁছয়নি। তাই এরকমটা হয়ে থাকতেই পারে।
কোর কমিটিতে শুভেন্দু-রাজীব- দলে যোগ দেওয়ার তিন দিনের মধ্য়েই বিজেপির কোর কমিটিতে স্থান পেলেন রাজীব। ইতিমধ্য়েই শুভেন্দুর মতো তাকে জেড ক্য়াটিগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে শুভেন্দুর সঙ্গে ডেকে পাঠানো হয়েছে তাকেও। শোনা যাচ্ছে, দিল্লিতে দিলীপ ঘোষের বাড়িতে বসেছে বঙ্গ বিজেপির এই কোর কমিটির বৈঠক। দল যে তাঁকে এত তাড়াতাড়ি এই গুরু দায়িত্ব দেবে তা ভাবতেও পারেননি তিনি। সব মিলিয়ে মুকুল, দিলীপের পাশাপাশি বঙ্গ বিজেপির নতুন রাম-লক্ষণ শুভেন্দু-রাজীব।