ভোটের আগে অনেকেই দলবদল করছেন। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন দলের প্রথম সারির অনেক নেতৃত্বই। তারপর নিজের পুরনো দল নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেছে দলত্যাগীদের অনেককেই। তাই বলে কানধরে ওঠবস! হ্যাঁ এমন ঘটনারই সাক্ষী থাকল পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর ব্লকের গোপীনাথপুর। বুধবার এখানেই সভা ছিল বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর। তাতে স্থানীয় বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা-কর্মী যোগ দেন গেরুয়া শিবিরে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন খড়গপুর ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক সুশান্ত পাল। তিনিই বিজেপির পতাকা হাতে নেওয়ার পর সকলকে অবাক করে দিয়ে মঞ্চে কান ধরে ওঠবস শুরু করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত হয়ে পড়েন সভায় উপস্থিত থিকা অনেকেই। এই ঘটনায় সভামঞ্চে হাসির রোল ওঠে। হাসতে শুরু করেন স্বয়ং শুভেন্দুও। তবে সদ্য দলত্যাগী সুশান্ত পালের দাবি ছিল, "আমি তৃণমূলে থেকে যে পাপ করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত করতে এই কান ধরে ওঠবোস করলাম ৷"
দলের সঙ্গে বহু বছরের সম্পর্কে ছেদ
তৃণমূলে থাকাকালীন জেলা সভাপতি অজিত মাইতির ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত ছিলেন সুশান্ত। শুভেন্দু দল ছাড়ার পর এই অজিত মাইতিকেই তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দাগতে দেখা গিয়েছে একাধিকবার। দলের একদম প্রথম থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে ছিলেন সুশান্ত। মদন মিত্রর সঙ্গে তাঁর ভাল সম্পর্ক রয়েছে বলেই জানা যায় ৷ জেলা সভাপতি অজিত মাইতি ছাড়াও আর এক তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক ছিল৷ তবে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেও বহু সভা করেছেন তিনি৷ তৃণমূলের বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতেও তাঁর সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মত৷দীর্ঘ সেই সম্পর্ক এবার ছিন্ন করে বিজেপিতে যোগ দিলেন খড়গপুর ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক সুশান্ত পাল।
দল ছাড়ার কারণ জানালেন নিজের মুখেই
তৃণমূলে থাকাকালীন ‘অজস্র ভুল’ করেছেন। বিজেপির ‘যোগদান মেলা’র মঞ্চে উঠে শুভেন্দু অধিকারীর সামনে স্বীকারোক্তি সুশান্ত পালের। দলত্যাগী নেতাকে বলতে শোনা যায় 'ভুল করেছি'৷ পাশাপাশি তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি আজ এই জনসভা থেকে তৃণমূলকে দেউলিয়া করার অঙ্গীকার নিচ্ছি৷' মঞ্চে তাঁর হাতে শুভেন্দু অধিকারী মাইক্রোফোন তুলে দিতেই তৃণমূলকে আক্রমণ করেন সুশান্ত। কথা বলতে বলতে হঠাৎ কান ধরে ওঠবস শুরু করে দেন তিনি। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষকে এমন অদ্ভূত আচরণ করতে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন মঞ্চে থাকা বিজেপি নেতৃত্ব।
অনুগামীর কীর্তি দেখে অস্বস্তিতে শুভেন্দু
৪ বার ওঠবস করার পর থামেন সুশান্ত পাল। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলকে জেতানোর জন্য যা করেছিলাম তা ঠিক করিনি। তাই কান ধরে ওঠবস করে তার প্রায়শ্চিত্ত করে বিজেপি-তে যোগ দিলাম।’’তবে নিজের অনুগামীর এই আচরণ দেখে অস্বস্তি এড়াতে অন্য দিকে ঘুরে যান শুভেন্দু। ওদিকে তখন দর্শকাশনে ওঠে গিয়েছে হাসির রোল। এই মঞ্চ থেকেই শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলনেত্রীকে ফের একবার তোপ দেগেছেন। সভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, "আমরাই বলেছিলাম পশ্চিমবঙ্গকে ঋণের বোঝা দিয়েছে বামফ্রন্ট। দু'লক্ষ তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ করে গিয়েছিল বাম সরকার। বর্তমানে দিদিমণি চার লক্ষ ষাট হাজার কোটি টাকা ঋণ করে দিয়েছেন রাজ্যের। গোটা বাংলাকে দেউলিয়া করে দিয়েছেন। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন আমি নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে হারাবো। দল আমাকে প্রার্থী করলে সরাসরি হারাবো, অন্য কাউকে প্রার্থী করলেও আমি পদ্ম ফুল ফোটাবো। এই দায়িত্ব আমার।" যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন সেদিনও শুভেন্দু প্রাক্তন নেত্রীকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০ হাজার ভোটে হারাবেন এমন কথাও শোনা গিয়েছে শুভেন্দুর গলায়।