তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy)-এর মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শনিবার আগরপাড়া (Agarpara)-য় তিনি বলেন, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের গায়ে হাত দিলে একবার নয়, ১০০ বার বিধানসভা ভাঙচুর হবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আগরপাড়ার উদয়ন সংঘের ময়দানে একটি দলীয় জনসভায় এই মন্তব্য করেন দমদমের সাংসদ।
তিনি বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সম্পর্কে কুকথা বলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিধানসভায় তৃণমূলের ভাঙচুরের ঘটনা কার্যত স্বীকার করে নেন তিনি। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সুনীল মণ্ডলকে আক্রমণ করতে গিয়েও শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়েছেন।
সৌগত এদিন জানান, ২০০৬ সালে সিঙ্গুর আন্দোলন শুরু হয়। আমরা তখন বিধানসভায়। হঠাৎ করে মমতা বিধানসভার লবিতে আসেন। চুল উস্কোখুস্কো, পায়ে চটি নেই, মুখে অত্যাচারের ছাপ। উনি বললেন, আমি সিঙ্গুর যাচ্ছিলাম। কিন্তু পুলিশ জোর করে গাড়িতে তুলেছিল। শারীরিকভাবে আমায় অত্যাচার করেছিল। এর পর তিনি বিধানসভায় আসেন। ওইদিন বিধানসভার শুরুর পরে তৃণমূলের বিধায়করা হইচই শুরু করেন।
তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে আমাদের অর্জুন সিং এবং দুলাল বেঞ্চগুলো উল্টে দেয়। এর মধ্যে আবার অর্জুন সিং সবচেয়ে বেশি চেয়ার এবং টেবিল ভাঙচুর করে। বিধানসভার তৎকালীন স্পিকার আমায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন কী হয়েছে? আমি তখন বলেছিলাম হ্যাঁ একটু ভাঙচুর হয়েছে। স্পিকার বললেন কেন? আমি বললাম, আমরা যে দলের সদস্য, সেই দলের নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তাঁকে বামফ্রন্টের পুলিশ মারবে, হেনস্থা করবে, চটি খুলে যাবে, আর কিছু হবে না বলে ভাববেন না। তবে আপনি মুখের স্বর্গে বাস করছেন। মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের গায়ে হাত দিলে একবার নয়, ১০০ বার বিধানসভা ভাঙচুর হবে।"
তৃণমূলত্যাগী সাংসদ সুনীল মন্ডলের ওপর হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন "সুনীল মন্ডল প্রথমে ফরওয়ার্ড ব্লকে ছিল, পরে মুকুল রায় হাত ধরে তৃণমূলে যোগদান করে। মুকুলের যে মালগুলো, সেগুলোই বেশি করে বিজেপিতে যাচ্ছে। তারপর ২০১৪ ও ২০১৯ সালে পরপর দুবার সাংসদ নির্বাচিত হলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি অমিত শাহর মিটিংয়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন। শুনলাম সুনীলের ওপর হামলা হয়েছে। সুনীলের ওপর বিক্ষোভ কোনও পরিকল্পিত বিক্ষোভ নয়। এটা স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ। আমাদের তৃণমূলের মিটিং ছিল বিজেপির লোকেরা আসছে যাচ্ছে ওরা কিছু বলেনি। কিন্তু সুনীলকে দেখে তারা আর শান্ত থাকতে পারেনি। যে ব্যক্তি (সুনীল) মমতার টিকিট পেয়ে, মমতার আশীর্বাদ পেয়ে সাংসদ হয়েছে, সে হেঁটে হেঁটে বিজেপিতে চলে গেল। কেউ যদি ভাবে যে বিক্ষোভ হবে না, আমি বলব একবার নয় ১০০ বার বিক্ষোভ হবে।"
তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া দলের নেতা বিধায়ক সাংসদদের মীরজাফর এর সঙ্গে তুলনা করে সৌগত রায় "শুভেন্দু অধিকারী কে মমতা কী দেননি। তিনি তিনটি দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন, তিনটি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন, হলদিয়া বন্দর দিয়ে যতগুলো ট্রাক বের হয়, তার প্রত্যেকটা র উপর থেকে শুভেন্দুর লোকেরা নজরানা নেয়। এত পেয়েও তার পেট ভরেনি। তাই সে ছেড়ে চলে গেলো।"
সৌগতর দাবি, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কোনও বৈঠকে কখনই অভিষেক ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়নি। অথচ অমিত শাহ এর বৈঠকে উপস্থিত থেকে তোলাবাজ ভাইপো বলে অভিযোগ করেন। তবে কেন আমাদেরকে তিনি একথা বললেন না?
তিনি বলেন, "দিলীপ ঘোষের এক রকম রোগ আছে। সকাল বেলার দিকে ওঁর মাথা ঠিক মতো কাজ করে না। সকালবেলায় বৈঠক করার পর ও হাফ প্যান্ট পড়ে কিংবা গলাবন্ধ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। রোজ উল্টোপাল্টা কথা বলে ওর হাঁটা দেখে মনে হয় বেনারসের ধর্মের ষাঁড়ের মত। ওঁকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন দরকার নেই। একটু চেঁচাবে, এর বাইরে এর বেশি কিছু করতে পারবে না। দিলীপ ঘোষ আজ বলেছেন যে এমন মার মারবো যে ব্যান্ডেজ বাঁধা জায়গা পাবে না। দেখি আপনি কেমন বাপের ব্যাটা। এটার রোজ রোজ বললে হবে না, করে দেখাতে হবে। তোমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসন আছে।"