আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যের ত্রিমুখী লড়াই এখন তুঙ্গে! অভিযোগ-পালটা অভিযোগে ‘খেলা’ ইতিমধ্যেই জমে উঠেছে! বাংলায় প্রায় এক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল কংগ্রেসকে গদিচ্যুত করতে রাজ্যজুড়ে প্রচার চালাচ্ছে বাম-কংগ্রেস-সিদ্দিকির জোট আর গেরুয়া শিবির।
বাম-কংগ্রেস-সিদ্দিকির জোট মোটামুটি চূড়ান্ত হতেই নিজেদের ‘সেকুলার’ প্রমাণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রাজ্যের বাম-কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বকে। এ দিকে অমিত শাহ, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র মতো বিজেপির শীর্ষনেতাদের পর রাজ্য বিজেপির সমর্থনে বাংলার নির্বাচনী প্রচারে এলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। প্রচার মঞ্চ থেকে বাংলায় মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে চড়ালেন তিনি। কিন্তু নারী সুরক্ষায় মমতার বিরুদ্ধে যতই সুর চড়ালেন যোগী, ততই সমালোচনার রসদ পেলেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। কারণ, মঙ্গলবার যখন মালদহের গাজোলের জনসভায় বাংলার নারী সুরক্ষা, আইন ব্যবস্থা নিয়ে গলা ফাটাচ্ছেন যোগী, তখন তাঁর নিজের রাজ্য-সহ গোটা দেশ উত্তাল হাথরসে নির্যাতিতার বাবার খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই সংবাদ শিরোনামে উত্তরপ্রদেশের হাথরস। ২০১৮-এ এক তরুণীর যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত গৌরব শর্মা সম্প্রতি জেল থেকে জামিনে ছাড়া পান। সোমবার যৌন হেনস্থার শিকার ওই তরুণীর বাবাকেই গুলি করে খুন করার অভিযোগ উঠেছে গৌরবের বিরুদ্ধে। শুধু সোমবারের এই ঘটনাই নয়, হাথরস বা বদায়ূঁর মতো গণধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের ঝুড়ি ঝুড়ি উদাহরণ রয়েছে যোগীর রাজ্যে। এ ছাড়াও খুন, ডাকাতি, বন্দুকবাজের হামলার মতো ‘ছোট-খাটো’ ঘটনা তো আখচার ঘটছে উত্তরপ্রদেশে। উত্তরপ্রদেশের খবরের কাগজগুলি বাদ দিলেও প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নানা অপরাধের কারণে উঠে আসে যোগীর রাজ্যের নাম। তৃণমূল নেত্রীত্বের কথায়, এ যেন ‘ভূতের মুখে রাম নাম’!
হাথরসকাণ্ড নিয়ে তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা আক্রমণ করেন। তৃণমূলের সঙ্গে সদ্য যুক্ত হওয়া ক্রিকেটার মনোজ তিওয়াড়ি টুইট করেন, ‘আবার এক ঘৃণ্য ঘটনা, আবার সেই হাথরাস এবং সেই যোগী আদিত্যনাথ শাসিত উত্তরপ্রদেশ। নিজের ঘর যিনি সামলাতে পারে না তিনি আসছেন বাংলায় প্রচার করতে। উনি কি জবাব দেবেন কি করে এক নির্যাতিতার বাবাকে সেই নির্যাতনে অভিযুক্ত অপরাধী ১২-বার গুলি করে হত্যা করতে পারে?’
রাজ্যের মহিলা ও শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা টুইট করেন, ‘যখন যোগী আদিত্যনাথ বাংলায় মহিলাদের সুরক্ষার বিষয়ে সমালোচনা করছেন, তখন তাঁর নিজের রাজ্যের অবস্থাটা দেখুন। বিজেপি বরাবরই দেশের মহিলাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। হাথরসের ঘটনাই তার উদাহরণ।’
যোগী অবশ্য গাজোলের জনসভায় নিজের রাজ্যে অপরাধদমনের নানা দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। তাঁর প্রশাসনের ভয়েই (একের পর এক পুলিশি অভিযান আর এনকাউন্টারের ভয়ে অপরাধীদের আত্মসমর্পন) অপরাধীরা ত্রস্ত, দাবি করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু যোগী যতই বলুন, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, হাথরসে প্রকাশ্য দিবালোকে যৌন হেনস্থার শিকার তরুণীর বাবার খুন হওয়া আর সেই রক্তের দাগ শুকনোর আগেই বাংলার নারী সুরক্ষা আর আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গলা ফাটানো আদপে কী বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দিল রাজ্য বিজেপির! বাংলায় নির্বাচনী প্রচারে ‘স্থান, কাল, পাত্র’ চয়নে কি ভুল হয়ে গেল বিজেপির শীর্ষ নেত্রীত্বের!