একুশের ভোট যতই এগিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে বাংলার রাজনীতি। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো সহজ নয়। কারণ, মমতা স্ট্রিট ফাইটার ও জননেত্রী। ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে গত ১০ বছর ধরে বাংলায় সরকার চালাচ্ছেন। গেরুয়া শিবিরের ভোট স্ট্র্যাটেজি মাস্টার অমিত শাহও জানেন, দিদিকে বাংলায় হারানো খুব একটা মসৃণ হবে না। মমতার উপরে পুরো টিমওয়ার্ক করেই বাংলার রাজনীতিতে নেমেছেন শাহ। পরিকল্পনা করে এগোচ্ছেন।
বিজেপির বড় পরিবার
বিজেপির মিশন বাংলার ক্ষেত্রে অমিত শাহের এই সফর অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একুশের নির্বাচনের ব্লুপ্রিন্ট ইতিমধ্যেই তৈরি করে রেখেছে বিজেপি। কোন কোন ইস্যুতে তারা ভোট লড়বে, কী অ্যাজেন্ডা-- সব গোল সেট করে দিয়েছেন অমিত শাহ। শনিবার বাংলায় বিজেপি সংসার আরও বড় হয়েছে। ১১ জন বিধায়ক ছাড়াও একজন সাংসদ ও আরেক পূর্ব সাংসদ দলে যোগ দিলেন।
মা, মাটি, মানুষের স্লোগান দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় যে মাটি থেকে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন, সেই মাটিতে মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়েই মমতাকে কড়া চ্যালেঞ্জ করলেন অমিত শাহ। রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সফর শুরু করে গোটা বাংলাকে একটি বড় বার্তা দিলেন অমিত।
এবার ভোজন কৃষকের বাড়িতে
গত মাসে বাংলা সফরে এসে এক দলিত পরিবারের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন শাহ। এবারে তিনি খাচ্ছেন এক কৃষক পরিবারের বাড়িতে। যার নির্যাস, অমিত শাহের টার্গেট, বাংলার দলিত ও কৃষকদের মন জয় করা। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার বাংলা সফরের কিছুদিনের মধ্যেই শাহ এলেন বাংলায়।
হাতের তাসটি ফেলল বিজেপি
একুশের নির্বাচনের আগে মিশন বাংলায় বিজেপি তাদের তাস ফেলে দিয়েছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাউন্টার অ্যাটাক করতে গেরুয়া শিবিরের কী প্ল্যাম, তা জানতে এখনও একটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে একথা স্পষ্ট, একুশের নির্বাচনে বাংলার রাজনৈতিক গতিবিধি অতীতের সব নির্বাচনের চেয়ে একেবারে আলাদা হবে।
গত ৭ ডিসেম্বর মেদিনীপুরের যে এলাকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শক্তি প্রদর্শন করেছিলেন, ১৯ ডিসেম্বর সেই মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ করলেন শাহ। মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে মমতা যখন বহিরাগত ইস্যুতে বিজেপি আক্রমণ করলেন, তখন সেই মেদিনীপুরেই মমতার সরকারকে উপড়ে ফেলার হুংকার দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অমিত শাহের নির্বাচনী ভূমিকা
বাংলা জয়ের জন্য বিজেপি চেষ্টা এবারই নতুন নয়। এর আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সাফল্য আসেনি। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই বাংলা জয়ের রূপরেখা তৈরি করতে শুরু করেন অমিত শাহ। যার নির্যাস, ২০১৯-এর লোকসভায় ১৮টি আসন পেয়ে বিজেপির উত্থান। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতির আসনে বসার পরে অমিত শাহ যে সব কাজ প্রথমেই শেষ করার তালিকা তৈরি করেছিলেন, তাতে বাংলা জয় ছিল প্রথম সারিতে। ২০১৬ সালেই কলকাতায় র্যালিতে তা ঘোষণা করেছিলেন শাহ। বাংলায় বিজেপির উত্থান কিন্তু আকস্মিক নয়, যথেষ্ট পরিকল্পনামাফিক।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই বাংলায় এসে অমিত শাহ বলেছিলেন, ২২টি আসন পাবে বিজেপি। ভোটের ফলে দেখা গেল ১৮টি পেয়েছে। এবারে তিনি বলেছেন ২০০-র বেশি আসন পাবে বিজেপি। শাহের ভবিষ্যত্ বাণী মিলবে? অপেক্ষা ২০২১।