সপ্তম দফায় মালদার ৬ বিধানসভা আসনে ভোট হয়েছে। রাত পোহালেই অষ্টম দফায় আরও ৬টি আসনে ভোট। ঠিক তার কয়েক ঘণ্টা আগে মালদায় দলের ভালো হওয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করলেন জেলার তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী তথা রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম বেনজির নুর। যদিও তিনি করোনায় আক্রান্ত। আপাতত হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।
প্রশ্ন : ভোটের কয়েক দিন আগেই করোনায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেলেন। প্রচারে ক্ষতি হয়ে গেল তো?
মৌসম : না না। তেমন ক্ষতি হয়নি। অনেকদিন আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছিলাম। জেলায় ভোট শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়লাম।
প্রশ্ন: এখন কেমন আছেন?
মৌসম : (হেসে) আগের থেকে ভালো। তবে দুর্বল। প্রচারে বের হতে না পারলেও বাড়ি থেকেই ফোনে কো-অর্ডিনেট করছি।
প্রশ্ন: তাও বাইরে সশরীরে প্রচার করলে তার গ্রহণযোগ্যতা তো অনেক বেশি।
মৌসম: সেটা কিছুটা হলেও সত্যি। তবে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন তো কদিন আগেই। কর্মীরা সব চাঙ্গা আছে। নেত্রীর নির্দেশ মতোই প্রচার হয়েছে। অসুবিধে হয়নি।
প্রশ্ন: সে তো লোকসভা ভোটের আগেও নেত্রী একাধিকবার জেলায় এসেছিলেন, একটাও আসন তো পেলেন না
মৌসম: লোকসভা আর বিধানসভার ভোট মিলিয়ে দিলে চলবে না। লোকসভার সময় মোদী হাওয়া কাজ করেছে। আর বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নই শেষ কথা। উনি যা করেছেন তাতে মানুষ খুশি। আমরা সারাবছর মানুষের পাশে ছিলাম। তার ফল পাব।
প্রশ্ন: প্রথম দফার কতগুলি আসন পাবেন?
মৌসম: আমাদের হিসেব বলছে ৫টা।
প্রশ্ন: আর পরের দফায়?
মৌসম: সেটা ভোটের পরই বলতে পারব। তবে সার্বিকভাবে ফল ভালো হবে।
প্রশ্ন: লোকসভায় এত খারাপ ফলের পর ভালো রেজাল্ট করবেন, কীভাবে বলছেন?
মৌসম : দলনেত্রী একাধিকবার জেলায় এসেছেন। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বসে ভোটের কৌশল ঠিক করে দিয়েছেন। আমরা সেই মতো কাজ করেছি। তাই সুফল পাব।
প্রশ্ন: বিধানসভা ভোটের আগেই মালদাল একাধিক নেতা, কর্মকর্তা দল ছেড়েছেন। বিজেপিতে গিয়েছেন। জেলার শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যেও দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে...
মৌসম: ঠিকই বলেছেন। এসব সমস্যা ছিল। আমরা বসে মিটিয়ে নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল সবাইকে এক ছাতার নিচে এনে বিধানসভায় লড়াই করা। সেটা করতে পেরেছি। সবটাই দলনেত্রীর নির্দেশে হয়েছে। এবার বিজেপির ফল খারাপ হবেই। গোটা রাজ্যের পাশাপাশি এই জেলাতেও ওদের অবস্থা খারাপ।
প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা হয়?
মৌসম: হ্যাঁ এই তো কয়েকদিন আগেই হল। রাজনীতি, সংগঠন, রণকৌশল এসব নিয়েই কথা হয়। উনিই তো আমার অনুপ্রেরণা।
প্রশ্ন: সে কী ? আপনার মামা গনিখান চৌধুরী?
মৌসম : মামাকে দেখেই তো রাজনীতিতে এসেছি। শুধু আমি কেন, আমাদের বাড়ির সবাই।
প্রশ্ন: তাহলে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এলেন কেন?
মৌসম : মামার স্বপ্ন পূরণ করতে।
প্রশ্ন: বুঝলাম না
মৌসম : মামার স্বপ্ন ছিল মালদাকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাখা। জাত-পাতের রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। সারাজীবন তিনি এই কাজটাই করেছেন। কিন্তু, সেই মালদায় এখন ধর্মীয় মেরুকরণ করছে বিজেপি। মানুষের মধ্যে হানাহানি করাচ্ছে। এক ধর্মের নামে আর এক ধর্মের মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। তাই তো লোকসভায় ফল খারাপ হল।
প্রশ্ন: এবারও বিজেপি সেরকম কিছু করছে না, কীভাবে বুঝলেন?
মৌসম : লেকসভায় হেরে গেলেও মানুষের সঙ্গে সংযোগ রেখেছি। আমাদের যা ভুল ভ্রান্তি ছিল সেগুলো মিটিয়ে নিয়ছি। তাই শক্তিশালী হয়েছি। এবার দেখে নেবেন বিজপিকে জেলা থেকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দেব।
প্রশ্ন: ধর্ম-নিরপেক্ষ রাজনীতির কথা যদি বলেন, তাহলে তো কংগ্রেস থেকে গেলেই পারতেন
মৌসম : বিজেপির মতো শক্তিকে রাজ্য থেকে তাড়াতে গেলে কংগ্রেস-সিপিএমের জোট কোনও কাজে আসবে না। দরকার তৃণমূলের মতো শক্তি। তাই মামাকে স্মরণ করে তৃণমূলে যোগ দিই। আমি নিশ্চিত মামা বেঁচে থাকলে আমার সিদ্ধান্তে খুশি হতেন।
প্রশ্ন: গত লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে জিততে পারেননি। এবার আপনার হাতে গোটা জেলার দায়িত্ব। এবারও যদি জেলায় খারাপ ফল হয়, দলনেত্রীকে কী জবাব দেবেন?
মৌসম: আমি সাধ্যমতো দল করছি। দলের দায়িত্ব নিয়েছি। ফলাফল ভালো হবেই। তারপরও যদি খারাপ হয়, তাহলে দলনেত্রীর কাছে মাথা নত করে যাব। উনি যা বলবেন শুনব। পরবর্তী নির্দেশ মেনে কাজ করব।
প্রশ্ন: আর কংগ্রেসে ফিরবেন না?
মৌসম : না.....