হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। কারণ টিকিট কেনার মতো টাকা ছিল না পকেটে। ছিল না ট্রেন। ব্যবস্থাও করা হয়নি বলে অভিযোগ। সেটা ২০২০ সালের কথা। তখন দেশে লকডাউন চলছে।
ট্রেন-বিমান থেকে স্কুল- বলতে গেলে সব কিছুই বন্ধ। চালু জরুরি পরিষেবা। সবার মনে শঙ্কা কী হয়। সবাই বিভ্রান্ত। চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী- সবাই করোনা নিয়ে নাজেহাল। রোজ বদলে যাচ্ছে সব কিছু। লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। আর এর মাঝে ওঁদের ফিরতে হয়েছিল হেঁটে।
কোনও কোনও রাজ্য সরকার তাঁদের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিল। কোথাও বা রাজনৈতিক দল, চিত্র তারকা। তবে অনেকের অভিযোগ, কেন্দ্র সরকারের যে ভূমিকা নেওয়া দরকার ছিল, তা হয়নি। ফলে বাড়ি ফেরার পথে খাবার না পেয়ে, জলের তেষ্টা না মেটাতে পেরে অনেকে মারা গিয়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে তীব্র ক্লান্ত। আর রেললাইনের ওপরেই শুয়ে পড়েছিলেন। খেয়ালই নেই ট্রেন এলে প্রাণ হারাতে হতে পারে। আর হয়েছেও।
বছর ঘুরে কেমন আছেন সেই পরিযায়ী শ্রমিকেরা? সিটু নেতা দেবাঞ্জন চক্রবর্তী জানান, অনেকেই সে সময় কাজ হারিয়েছিলেন। কাজ না থাকায় বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন। অন্তত ২০ লক্ষ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। হয় তারা কাজ হারিয়েছেন। আর না হলে কাজের জায়গায় থাকলেও এখনও কাজ পাননি।
রাজ্যে কত পরিযায়ী শ্রমিক আছেন
এর নির্দিষ্ট কোনও হিসেব নেই। তবে সিটুর হিসেব, এ রাজ্যে প্রায় ৭০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। যাঁরা কাজের খোঁজে এ রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন। কখনও একা। আবার কখনও বা দল বেঁধে, সপরিবারে। এর কারণ সেখানে বাড়তি আয়ের সুযোগ।
কোন জেলা থেকে
বাংলা ছাড়াও প্রতিবেশি রাজ্য থেকে অনেক মানুষ কাজের খোঁজে বাইরে যান। তাঁদের মধ্যে দক্ষ, অদক্ষ- সব রকমের শ্রমিকই রয়েছেন। বাংলার প্রায় সব জেলা থেকেই তাঁরা বাইরে পাড়ি দেন। কোথাও বেশি, কোথাও কম। যেমন হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীরে কাঠের কাজের জন্য উত্তর দিনাজপুরের ব্লকের পর ব্লক থেকে শ্রমিক যান।
কোন রাজ্যে কী কাজ
নির্মাণের কাজের জন্য তাঁরা যান গোয়া, মহারাষ্ট্র, কেরালার মতো রাজ্যে। হোটেলে কাজ করার জন্য কেরালা, গোয়া। এর পাশাপাশি পর্যটন শিল্পে কেরালা, গোয়ায় বাংলার শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে। সেখানে হাইজবোট, লঞ্চ সহকার, রান্নার কাজ করেন তাঁরা। গয়নার কাজ করতে যান দিল্লি, মহারাষ্ট্র, গুজরাতে। অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানায় রয়েছে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ। হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীরে কাঠের কাজ। পঞ্জাব, হরিয়ানায় কৃষিকাজে সহায়কের ভূমিকা থাকে। গুটরাত, মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে জরির কাজ পাওয়া যায়।
কোন জেলার কারা
নির্মাণে প্রায় সব জেলা থেকেই। তবে দুই দিনাজপুর, দুই ২৪ পরগণা, মালদা থেকে বেশি। হোটেলের কাজে পূর্ব মেদিনীপুরের চাহিগা বেশি। কারণ রান্নায় তাঁরা ভাল হন। জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশে বিদ্যুতের টাওয়ার বসানোর কাজে মালদার শ্রমিকদের তারিফ করেন সবাই।
সুবিধা
যাঁরা গোয়া, কেরালা, মহারাষ্ট্রে মালিক থাকার জায়গার ব্যবস্থা করে দেন। খাবারও দেন। ফলে তাঁদের উপার্জনের বড়সড় অংশ পাঠিয়ে দিতে পারেন বাড়িতে। দেখা গিয়েছে, তাঁরা অনেক সময় বাড়ি ফেরেন বিমানে চেপে।
অসুবিধা
দিল্লিতে থাকার জায়গার অভাব। হরিয়ানাতে পরিচারিকার কাজ করতে যান অনেকে। সেথখানে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকে। সেখানে নারীর সংখ্যা কম। ছোট নির্মাণ সংস্থা থাকার জায়গা করে দিলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অনেক অভিযোগ।
এখন কী অবস্থা
লকডাউনের জন্য অনেকে কাজ খুইয়েছেন। রাজ্যে এসে যে কাজের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন, তেমনও নয়। বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এর পাশাপাশি রয়েছে, জিনিসের চাহিদা কমে যাওয়া. মানুষের হাতে টাকা নেই। ফলে তাঁরা পোশাক, গয়না না কেনার দিকেই ঝুঁকবেন।
সিটু নেতা দেবাঞ্জন চক্রবর্তী জানান, সরকার যদি পরিকাঠামোয় জোর না দেয়, তা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।