Advertisement

আবেগ নাকি অঙ্ক! ১১০ আসনে শুভেন্দুকে আটকাতে নন্দীগ্রামই কি অস্ত্র মমতার?

বাংলা রাজনীতির রণাঙ্গনে শুভেন্দু অধিকারী একটি বড় নাম তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। নন্দীগ্রাম আন্দোলেনর হাত ধরে বাংলার রাজনীতিতে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তার পথে যাওয়া শুভেন্দু নিজেই পুরনো দলে থাকাকালীন জানিয়েছিলেন, তিনি লিফ্টেও আসেননি আর প্যারাশ্যুটেও নামেননি। দলবদলের পরও তৃণমূল শিবিরের কাছে তিনি যে বড় চ্যালেঞ্জ তা তাঁর পুরনো দল স্বীকার না করলেও নেতৃত্বের হাবেভাবে স্পষ্ট। তাই শুভেন্দুর গড় নন্দীগ্রামে সভা করতে গিয় সেখান থেকেই ভোটপ্রার্থী হওয়ার মাস্টারসট্রোক দিতে হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে তৃণমূলনেত্রী অঙ্ক কষেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাকি আবেগের বশেই সভামঞ্চ থেকে নিয়ে ফেলেছেন বড় ঝুঁকি। শুভেন্দু দল ছাড়লে কতগুলো আসন হারাতে হতে পারে তৃণমূলকে তা নিয়ে দলের অন্দরে যে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেননি নেত্রী এমন হতে পারে না। তাই নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্রকে আটকাতেই মমতা এখান থেকে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

নন্দীগ্রামে মমতার ভোটে দাঁড়ানোর অঙ্ক কী?
সুমনা সরকার
  • কলকাতা,
  • 20 Jan 2021,
  • अपडेटेड 3:10 PM IST
  • তৃণমূলে সাংগঠনিক দায়ভার সামলেছিলেন শুভেন্দু
  • রাজ্যের ১৮টি জেলাতে ভালমত প্রভাব ছিল তাঁর
  • নন্দীগ্রামে মমতার ভোটে দাঁড়ানোর অঙ্ক কি সেই কারণেই?

বাংলা রাজনীতির রণাঙ্গনে শুভেন্দু অধিকারী একটি বড় নাম তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। নন্দীগ্রাম আন্দোলেনর হাত ধরে বাংলার রাজনীতিতে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তার পথে যাওয়া শুভেন্দু নিজেই পুরনো দলে থাকাকালীন জানিয়েছিলেন, তিনি লিফ্টেও আসেননি আর প্যারাশ্যুটেও নামেননি। দলবদলের পরও তৃণমূল শিবিরের কাছে তিনি যে বড় চ্যালেঞ্জ তা তাঁর পুরনো দল স্বীকার না করলেও নেতৃত্বের হাবেভাবে স্পষ্ট। তাই শুভেন্দুর গড় নন্দীগ্রামে সভা করতে গিয় সেখান থেকেই ভোটপ্রার্থী হওয়ার মাস্টারসট্রোক দিতে হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে তৃণমূলনেত্রী অঙ্ক কষেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাকি আবেগের বশেই সভামঞ্চ থেকে নিয়ে ফেলেছেন বড় ঝুঁকি। শুভেন্দু দল ছাড়লে কতগুলো আসন হারাতে হতে পারে তৃণমূলকে তা নিয়ে দলের অন্দরে যে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেননি নেত্রী এমন হতে পারে না। তাই নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্রকে আটকাতেই মমতা এখান থেকে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

মমতার টার্গেটে নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র! একুশের ভোটে বাংলায় গেরুয়া-তারকা কি শুধুই শুভেন্দু?

জেলায় জেলায় কতটা প্রভাব শুভেন্দুর
২০২১ এর ভোটযুদ্ধে তৃণমূলের লক্ষ্য নিজের ভোটব্যঙ্ক ধরে রাখা। তেমনি বিজেপির রণনীতি সেই ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসানো। আর এই দুই দলের মাঝে বড় ফ্যাক্টর শুভেন্দু অধিকারী।  তৃণমূলে থাকাকালীন শুভেন্দু একাই নিজের 'বলয়'তৈরি করতে সমর্থ হয়েছিলেন এমনি মত একাধিক বিশেষজ্ঞের। আর সেই  শুভেন্দু বলয়ের মধ্যে থআকা জেলগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তরবঙ্গ থেকে জঙ্গলমহল সব প্রান্তই। তৃণমূলে থাকাকালীন শুভেন্দুকে নানা ভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  দলনেত্রীর নির্দেশেই একসময়  মেদিনীপুরের মাটি ছাড়িয়ে মুর্শিদাবাদে দাপটের সঙ্গে দলের সাংগঠনিক দায়ভার সামলেছিলেন শুভেন্দু। এছাড়াও নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্রের প্রভাব রয়েছে উত্তরবঙ্গের মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং দক্ষিণ বঙ্গের হাওড়া ও হুগলির বহু এলাকায়।  নিজের গড় মেদিনীপুর আর  জঙ্গলমহলে এখনও তাঁর দাপট বর্তমান। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের হলদিয়ার ইন্ডাস্ট্রিয়াল এবং দক্ষিণবঙ্গের সমবায়গুলিতেও প্রভাব বিস্তার করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাই দল ছাড়ার পড় এইসব জায়গায় শুভেন্দু ক্যারিশ্মা কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়ে তৃণমূল চিন্তায় রয়েছে বলাইবাহুল্য। নিজের রাজনৈতির জবীনে বহু দুঃস্থ , দুর্বল ,দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে নেতা শুভেন্দুকে। আর সেই জায়গা থেকেই রাজ্যে একটা বড় অনুগামীর সংখ্যা তৈরি হয়েছে তাঁর। ২৯৪ আসনের বাংলা বিধান সবায় তাই ১১০টি আসনে শুভেন্দুর ভালমত প্রভাব রয়েছে বলেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দাবি করেন বহু বিশেষজ্ঞই। 

Advertisement
তখন ছিল সুখের দিন

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শুভেন্দু ঘোষণা করেছেন দুই মেদিনীপুরের ৩৫ টি আসলেই তিনি পদ্ম ফোটাবেন। কিন্তু আসল কথা হল  হোমটর্ফ পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে তাঁর প্রবল দাপট রয়েছে। ৯ টি লোকসভা ও ৬৩ টি বিধানসভা সম্বলিত এই এলাকা রীতিমতো মাইলেজ দিতে পারে শুভেন্দু শিবিরকে। 

তৃণমূলনেত্রীর রণনীতি
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই একের পর এক জনসভায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক মেজাজে পাওয়া গিয়েছে শুভেন্দুকে। আর  শুভেন্দুর এই  হুঙ্কার যে তৃণমূল চ্যালেঞ্জ হিসেবেই গ্রহণ করেছে, তা শাসক শিবিরের ইঙ্গিতেই স্পষ্ট।  তাই শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদানের পর গত ৭ তারিখ প্রথমবার নন্দীগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল মমতার। কিন্তু, অখিল গিরি করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় সেই সফর পিছিয়ে দেওয়া হয়। সেই সফর অবশ্য ১৮ তারিখ করলেন মমতা। ২০১৬ এর জানুয়ারি মাসে শেষবার নন্দীগ্রাম গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘ ৫ বছর পর ফের একবার তিনি পা রাখলেন সেই নন্দীগ্রামে যার হাত ধরেই ২০১১ সালে বাংলার মসনদে এসেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। নির্বাচনী বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, সারা দেশে ভোটের রাজনীতি বোঝার ক্ষেত্রে তাঁর তুলনা বেশি নেই। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম! সোমবার তেখালির জনসভায় তা আরও একবার প্রমাণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের বিশাল জনসভা থেকে তিনি ঘোষণা করে দিলেন, আগামী বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে তিনিই লড়বেন তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে। ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে যে তিনি সম্মুখসমরেই যাচ্ছেন সেই বার্তাই যেন দিলেন মমতা।  মমতার এই ঘোষণার পর নন্দীগ্রাম নিয়ে শুভেন্দুকে আরও বেশি করে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে তা বলাই বাহুল্য৷ তাই এটা সচেতন ভাবে তৃণমূলনেত্রীর কৌশল হতে পারে সেই সম্ভাবনা কিন্তু একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷

Shah Kolkata Visit:মোদীর হপ্তা খানেক বাদেই বাংলায় অমিত শাহ, যাবেন মায়াপুরেও

বিজেপিতে যোগ দিয়ে পূর্বস্থলীর জনসভায় শুভেন্দু দাবি করেছিলেন আসন্ন বিধানসভা ভোটে  লড়ার ইচ্ছাই তাঁর নেই। বিজেপির মঞ্চে তাঁর প্রথম জনসভায় শুভেন্দুর বক্তব্য ছিল, ‘‘পার্টিকে বলব, আমাকে এমএলএ টিকিট দেওয়ার দরকার নেই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা খাটব। যেখানে বলবে, সেখানে যাব। এদের ( তৃণমূল) বিসর্জন দিতে, যা করার করব।’’ শুভেন্দুর কথায় স্পষ্ট বার্তা ছিল তৃণমূলকে গদিচ্যুত করতে তিনি রাজ্য জুড়ে প্রচারের কাজে নামবেন। সত্যি কথা বলতে, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর সেই পরিশ্রম অবশ্য তিনি করতে শুরু করে দিয়েছেন। নিয়মিত মিটিং, মিছিল, রোড শোয়ে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে ভোটে দাঁড়ালে তাঁর মোকাবিলা করতে অনেকটা সময়ই শুভেন্দুকে নিজের গড়ে কাটাতে হবে তা বলাই বাহুল্য। তৃণমূলনেত্রীকে হাফ লাখ ভোটে নন্দীগ্রামে না হারালে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন শুভেন্দু যতই মুখে বলুন তিনিও জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মা। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাওয়াড়ি ফলের নিরিখে জঙ্গলমহলের চার জেলা অর্থাৎ ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ার মোট ৪০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩০টিতে এগিয়ে বিজেপি, ১০টিতে তৃণমূল। শুভেন্দু গেরুয়া শিবিরে আসায় এই এলাকায় বিজেপির আরও ভাল ফলের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছিল।  এই প্রেক্ষাপটে আবেগে নয় বরং অনেক অঙ্ক কষেই তৃণমূলনেত্রী শুভেন্দুকে আটকাতে নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়ার ঘোষণা করেছেন বলেই মতই বিশেষজ্ঞ শিবিরের একাংশের। 

Advertisement

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement