বিজেপিতে (BJP) যোগ দিয়েছেন বেশ কিছুটা সময়। তবে তারপরেও সেভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি তাঁকে। এমনকি মাঝে এমন জল্পনাও শোনা গিয়েছিল নতুন দলের নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ থেকে হয়ত ফের তৃণমূলে ফিরে যাবেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বরং সম্প্রতি ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে তাঁকে বড় দায়িত্ব দিয়েছে পদ্ম শিবির। তিনি আর কেউ নন, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমান বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি কলকাতায় বিজেপির পর্যবেক্ষক করা হয়েছে শোভনকে। সহ পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে পরিস্থিতি যে বদলাতে পারে তেমন ইঙ্গিতটা গত নভেম্বরেই পাওয়া গিয়েছিল। সেই সময় রাজ্যে সফরে এসে শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee) ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Baisakhi Banerjee) সঙ্গে বৈঠক করেন অমিত শাহ (Amit Shah)। যার কিছু সময় পরেই দায়িত্ব পান শোভন ও বৈশাখী।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই পদক্ষেপ তো আগেও নেওয়া যেত,তাহলে ঠিক নির্বাচনের আগেই কেন? সূত্রের খবর, বিজেপিতে যোগ দিয়ে প্রথম থেকেই কলকাতায় কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন শোভন। শুধু তাঁর দাবি ছিল উপযুক্ত পদ। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, শোভনের সেই দাবি মেনে নিয়ে একদিকে যেমন তাঁর ঘর ওয়াপসির সম্ভাবনা আটকে দিল বিজেপি, তেমনই তাঁকে কলকাতার দায়িত্ব দিয়ে শহরের দীর্ঘদিনের মেয়র থাকার সুবাদে তাঁর যে অভিজ্ঞতা তাও কাজে লাগাতে পারবে গেরুয়া ব্রিগেড।
শুধু তাই নয়, একসময় তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাপতিও ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। খুব স্বাভাবিক ভাবেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ কলকাতা লাগোয়া এলাকার রাজনৈতিক মানচিত্রের খুঁটিনাটি নখদর্পনে রয়েছে শোভনের। এমনকি শোভন তৃণমূল ছাড়লেও ওই অঞ্চলে এখনও তাঁর প্রচুর অনুগামী রয়েছেন বলেই মনে করেন কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে শোভনের হাত ধরে নির্বাচনের আগে তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত যোগও দিতে পারেন বিজেপিতে।
অন্যদিকে আবার শোভনের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের দূরত্বের কারণ হিসেবে প্রকাশ্যে যাই বলা হোক না কেন, দলের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায় নানান কানাঘুষো। শোনা যায় যে সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনওভাবেই বনিবনা হচ্ছিল না শোভনের। যার জন্য মাধ্যমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা থেকে উঠে আসত তৃণমূল বনাম যুবর সংঘর্ষের খবর। সেক্ষেত্রে হয়ত শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি শোভনকেও ময়দানে নামিয়ে আগামী নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁদের জোড়া ফলা হিসেবে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। কারণ একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাসানোর ক্ষেত্রে বিজেপির অন্যতম প্রধান ইস্যু 'ভাইপো'। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নাম না করে বিজেপির বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব এভাবেই বারংবার তোপ দাগছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে শোভনের সেই পুরনো ক্ষত খানিকটা খুঁচিয়ে দিয়ে নির্বাচনে বিজেপি ফায়দা তুলতে চাইছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।