
বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে এনডিএ। আর এই আবহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক ভিডিও বেশ ভাইরাল। ভিডিওগুলি শেয়ার দাবি করা হচ্ছে যে, ভোটের ফল প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে পথে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে বিহারের সাধারণ মানুষ।
উদাহরণস্বরূপ, প্রথম ক্লিপটিতে কোনও একটি স্থানে শতশত যুবক-যুবতীকে হাতে মোমবাতি ও পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে। ক্লিপটি শেয়ার করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী সেটির ফ্রেমের উপরে লিখেছেন, “বিহার নির্বাচনে দিন দুপুরে ডাকাতি রুখতে ও নির্বাচন বয়কট করতে জনগণ রাস্তায়। আপনিও ডাকাতি রুখতে জনগণের স্বার্থে শেয়ার করুন।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
দ্বিতীয় ক্লিপটিতে কোনও একটি রেল স্টেশনে হাতে হলুদ রঙের পতাকা ও গলায় হলুদ গামছা জড়িয়ে অপেক্ষা করছেন হাজার হাজার মানুষ। পাশাপাশি, স্টেশানে দাঁড়িয়ে আছে দুটি ট্রেন। এই ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “ভোট চুরির বিরুদ্ধে বিহারে চন্দ্রপুর রেলস্টেশনে বিদ্রোহ।”
অন্যদিকে, তৃতীয় ভিডিওতে কয়েকশো বিক্ষোভকারীকে একটি ভবনে হামলা চালাতে এবং তাতে আগুন লাগিয়ে দিতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওটি পোস্ট করে এর ফ্রেমের উপরে লেখা হয়েছে, “বিহারের ভরতপুরে যুবসমাজের একটাই আওয়াজ ভোেট চোর গোদি ছোেড়।”
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল তিনটি ক্লিপই পুরনো এবং সেগুলির সঙ্গে বিহারের নির্বাচন কিংবা ‘ভোট চুরি’র বিরুদ্ধে আয়োজিত বিক্ষোভের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রথম ক্লিপটি পাটনায় চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বিক্ষোভের, দ্বিতীয়টি ঝাড়খন্ডের চন্দ্রপুরা রেল স্টেশনে কুড়মিদের বিক্ষোভের এবং তৃতীয়টি নেপালের ভরতপুর পৌরসভা কার্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগের দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
প্রথম ক্লিপ: প্রথম ভিডিও ক্লিপটি পর্যবেক্ষণ করার সময় সেটির ফ্রেমের উপরে ‘the Activist’ নামক একটি চ্যানেলের লোগো দেখতে পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালালে ২০২৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর উক্ত চ্যানেলের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই একই ভিডিও-সহ একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেটি গত ১২ সেপ্টেম্বর বিহারের রাজধানী পটনায় চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বিক্ষোভের দৃশ্য। মূলত সম কাজে সম বেতন এবং ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরিতে বহাল রাখার দাবিতে বিহার সরকারের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। পাশাপাশি, ধর্মঘটে অংশ নেওয়া আট হাজার অস্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে অবিলম্বে কাজে ফেরানোর দাবিও করা হয় এই বিক্ষোভ থেকে।
দ্বিতীয় ক্লিপ: দ্বিতীয় ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে সাদৃশ্য যুক্ত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই একই স্থানে একই ঘটনার অন্য ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা সেই ভিডিওর সঙ্গে ভাইরাল ভিডিও-র ফ্রেমের তুলনা করলে হুবহু মিল পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশন এবং কমেন্ট সেকশন ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে জানা যায়, সেটি ডুমরির বিধায়ক জয়রাম মাহাতোর নেতৃত্বে ঝাড়খন্ডের চন্দ্রপুরা রেল স্টেশনে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মানুষদের বিক্ষোভের ভিডিও। প্রভাত খবর এবং লোকমত নিউজের প্রতিবেদন থেকেও এই একই তথ্য জানা যায়।
তৃতীয় ক্লিপ: তৃতীয় ক্লিপটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার সময় অগ্নিদগ্ধ ভবনটির সামনে একটি ব্যানারে নেপালি ভাষয়া “भरतपुर महानगरपालिकाको’ বা ‘ভরতপুর মেট্রোপলিটন পৌরসভা’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নেপাল ভিত্তিক একটি ফেসবুক প্রোফাইলে অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা এই একই ভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও বিক্ষোভের ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে নেপালি ভাষায় সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “দুর্নীতি এবং সাধারণ মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে ভরতপুর মেট্রোপলিটন সিটি অফিসের সামনে জেন-জি এবং জেন-ওয়াইদের বিক্ষোভ।” এর আগেও এই একই ভিডিও শেয়ার করে সেটিকে লাদাখের বিজেপির কার্যালয়ে হামলার দৃশ্য বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। সেই সময় আজতক বাংলার তরফে সেই ভিডিওটুর বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক করা হয়েছিল। সেই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বিহারে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে তিনটি পুরনো এবং অসম্পর্কিত ভিডিও।
এই ভিডিওগুলিতে বিহারে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
তিনটি ক্লিপের একটির সঙ্গেও এই ধরনের কোনও বিক্ষোভের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রথমটি পটনায় চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বিক্ষোভ, দ্বিতীয়টি ঝাড়খন্ডের চন্দ্রপুরা রেল স্টেশনে কুড়মিদের বিক্ষোভ এবং তৃতীয়টি নেপালে জেন-জি বিক্ষোভের দৃশ্য।