এবার রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে একটি পোস্ট ভাইরাল হলো সোশ্যাল মিডিয়াতে।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি পোস্ট করে দাবি করেছেন, "বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চলে যাচ্ছে বিজেপির নেতাকর্মীরা, ভয় পেয়ে উপনির্বাচন এড়িয়ে যাচ্ছে বিজেপি।"
এই একই দাবি সংক্রান্ত পোস্টের আর্কাইভ দেখতে পাবেন এখানে, এখানে ও এখানে।
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে এই পোস্টের দাবি বিভ্রান্তিকর।
তদন্তে নেমে প্রথমেই যে প্রশ্নটি আমাদের মাথায় আসে তাহলে কোন উপনির্বাচনের কথা বলতে চাওয়া হচ্ছে - বিধানসভার উপনির্বাচনের কথা নাকি রাজ্যসভার আসনের উপনির্বাচনের কথা।
বিধানসভায় প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি
নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে এ রাজ্যে মোট তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি সাধারণ নির্বাচন - সামসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর কেন্দ্রে এবং একটি উপনির্বাচন - ভবানীপুর কেন্দ্রে। এই তিনটি নির্বাচনই ৩০শে সেপ্টেম্বর হবে এবং ৩ অক্টোবর নির্বাচনগুলোর ফল ঘোষণা করা হবে।
এই তিনটি কেন্দ্রেই কিন্তু প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। ভবানীপুরে প্রার্থী হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা তিবরেওয়াল। সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর থেকে প্রার্থী করা হয়েছে যথাক্রমে মিলন ঘোষ ও সুজিত দাসকে।
সুতরাং, এই নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে এই ফেসবুক পোস্টের দাবি খাটে না।
রাজ্যসভার আসনের নির্বাচন
দীনেশ ত্রিবেদী পদত্যাগ করার পরে রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গের একটি আসন ফাঁকা হয়েছিল। জুলাই মাসে তৃণমূল কংগ্রেস সেই আসনটির জন্য প্রাক্তন আইএএস অফিসার জহর সরকারকে বেছে নিয়েছিল।
অন্যদিকে, মানস ভুঁইয়া পদত্যাগ করার পর রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গের আরও একটি আসন ফাঁকা হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি, এই আসনে তৃণমূল শিলচরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেবকে প্রার্থী করেছে।
খবরের প্রকাশ, জহর সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপির তরফ থেকে কোনও প্রার্থী দেওয়া হয়নি এবং সুস্মিতা দেবের বিরুদ্ধেও বিজেপি প্রার্থী দেবে না বলে ঘোষণা করেছে।
প্রার্থী না দেওয়ার জন্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, "যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার আসনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত হয়ে রয়েছে তাই বিজেপি কোনও প্রার্থী দিচ্ছে না।
EMBED
BJP will not nominate any candidate for Rajyasabha bypoll due in West Bengal. Outcome is predetermined. Our focus is to make sure unelected CM to be unelected once again. Jai Ma Kali.
নিয়ম কী বলছে?
খুব জটিল একটি অঙ্কের মাধ্যমে রাজ্যসভার সাংসদকে নির্বাচিত করে রাজ্যের বিধায়করা।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষনার দিন তৃণমূল কংগ্রেস ২১৩টি আসন পেয়েছিল এবং বিজেপি ৭৭টি আসন পেয়েছিল।
নির্বাচন বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী আজতক-কে জানালেন, "২৯৪টি আসনের মধ্যে ২১৩টি আসন পেয়েছে তৃণমূল এবং ৭৭টি আসন ছিল বিজেপির। এই পরিস্থিতিতে কোনওভাবেই রাজ্যসভার উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হতে পারতো না।"
অর্থাৎ, বিজেপি নেতা কিংবা কর্মী বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের যোগ দেওয়ার প্রভাব রাজ্যসভা নির্বাচনেও পড়ত না।
সুতরাং, বলাই যেতে পারে যে এই এই ফেসবুক পোস্টের দাবি বিভ্রান্তিকর।
বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চলে যাচ্ছে বিজেপির নেতাকর্মীরা, ভয় পেয়ে উপনির্বাচন এড়িয়ে যাচ্ছে বিজেপি।
ভবানীপুর উপনির্বাচন আর দুটি আসনের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গের আসনের দুটি উপনির্বাচনের প্রার্থী দেয়নি বিজেপি কারণ বিধানসভার আসন সংখ্যার নিরিখে স্বভাবিক নিয়মেই তৃণমূল প্রার্থী রাজ্যসভায় নির্বাচিত হতেন।