ফ্যাক্ট চেক ব্যুরো: সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো বেশ ছড়াচ্ছে। যা শেয়ার বা পস্ট করে অনেকেই দাবি করছে যে নাসিক পুলিশ আজানের সময় লাউডস্পিকারে ভজন-কীর্তন বাজানো নিষিদ্ধ করেছে। একটি ভিডিয়োতে একজন পুলিশকর্মীকে সত্যিই সেই নির্দেশ দিতেও শোনা যাচ্ছে। তিনি বলছেন যে আজানের সময় মসজিদের চারপাশে কেউ ভজন-কীর্তন বা হনুমান চালিসা পাঠ যেন না করে। ভিডিওর শেষে বলা হয়েছে, তিনি নাসিকের পুলিশ কমিশনার।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিয়োটি শেয়ার করার সময়, অনেকে এই নির্দেশের বিরোধিতা করছেন এবং নাসিকের পুলিশ কমিশনারকে বরখাস্ত করার দাবি করেছেন ।
ভিডিওটি টুইট করে একজন ব্যক্তি লিখেছেন, “উনি আজানের জন্য আমাদের ভজন-কীর্তন বন্ধ করার কথা বলছেন। এটা কোন সংবিধানে লেখা আছে?"
এরকম কিছু পোস্টের আর্কাইভ সংস্করণ এখানে, এখানে এবং এখানে দেখা যাবে ।
তবে, ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক টিম তদন্ত করে দেখেছে যে নাসিক পুলিশ ২০২২ সালের এপ্রিলে এই নির্দেশ দিয়েছিল। তবে কিছুদিন পরই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
কীভাবে এগলো অনুসন্ধান?
ভাইরাল ভিডিয়োতে 'জনসত্তা'-এর লোগো দেখতে পাওয়া যায়। এর সাহায্যে, আমরা 'জনসত্তা'-এর ফেসবুক পৃষ্ঠায় ১৮ এপ্রিল, ২০২২ তারিখের একটি পোস্টে একই ভিডিয়ো দীর্ঘ সংস্করণ খুঁজে পাই। যাতে বলা হয়েছে, নাসিকে আজানের সময় মসজিদের ১০০ মিটারের মধ্যে লাউডস্পিকারে ভজন-কীর্তন বা হনুমান চালিসা পাঠ নিষিদ্ধ। এছাড়াও ওই পোস্টে পুলিশ অফিসারকে নাসিক কমিশনার দীপক পান্ডে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা এই বিষয়ে 'আজ তক'-এর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই । সেখানে দেওয়া তথ্য অনুসারে, নাসিক পুলিশ ২০২২ সালের ১৮ এপ্রি এই আদেশ জারি করেছিল। সেই অনুযায়ী, লাউডস্পিকারে হনুমান চালিসা বা ভজন বাজাতে পুলিশের অনুমতি নিতে হচ্ছিল। এছাড়া, আজানের ১৫ মিনিট আগে এবং পরে মসজিদের ১০০ মিটারের মধ্যে লোকজনকে লাউডস্পিকার বাজাতে দেওয়া হচ্ছিল না।
যদিও এই আদেশের কয়েকদিন পর দীপক পান্ডেকে বদলি করা হয় । তার জায়গায় আসা পুলিশ কমিশনার জয়ন্ত নায়কনাভারে ২৮ এপ্রিল সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন। পুলিশের মতে, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছিল কারণ রাজ্যে লাউডস্পিকার সংক্রান্ত নতুন কোনও আদেশের প্রয়োজন ছিল না।
কেন এই আদেশ দেওয়া হল?
২০২২ সালের এপ্রিল মাসে, মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) প্রধান রাজ ঠাকরে মসজিদগুলো থেকে লাউডস্পিকার সরানোর দাবি করেছিলেন। একইসঙ্গে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন যে, তা না হলে মসজিদের বাইরে লাউডস্পিকারের হনুমান চালিসা পাঠ করা হবে। এই পুরো বিতর্কের কারণে, নাসিক পুলিশ কমিশনার আজানের সময় মসজিদের চারপাশে লাউডস্পিকার বাজানো নিষিদ্ধ করেছিলেন। তবে হিন্দু সংগঠনগুলোর প্রতিবাদের পর এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়।
আইন লাউডস্পিকার সম্পর্কে কি বলে?
লাউডস্পিকার ব্যবহার নিয়ে কিছু নিয়ম বলবৎ করেছে সুপ্রিম কোর্ট । এর মধ্যে লাউডস্পিকার বাজানোর জন্য লিখিত অনুমতি নেওয়া থেকে শুরু করে এর শব্দ ঠিক করা পর্যন্ত অনেক নিয়ম রয়েছে , যা লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ রয়েছে।
রিপোর্ট- সঞ্জনা সাক্সেনা
নাসিক পুলিশ কমিশনার আজানের সময় মসজিদের চারপাশে লাউডস্পিকারে ভজন-কীর্তন এবং হনুমান চালিসা পাঠ নিষিদ্ধ করেছে।
নাসিক পুলিশ কমিশনার ২০২২ সালের এপ্রিলে এই আদেশ জারি করেছিলেন, কিন্তু কয়েকদিন পরে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।