চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য গর্বিত করেছে সমগ্র দেশবাসীকে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এর আগে কোনও দেশ সফলভাবে অবতরণ করতে পারেনি। ভারতই প্রথম। যে কারণে এই কৃতিত্ব হয়ে উঠেছে আরও 'স্পেশাল'। তবে, ল্যান্ডারের সফল সফ্ট ল্যাডিং-এর পর থেকে ইসরোর এই সাফল্যের নেপথ্যে ভূমিকা কার, সেই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে।
একপক্ষের দাবি, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, তথা কংগ্রেসের জওহরলাল নেহরু নিজের দূরদর্শী চিন্তাভাবনার থেকে ইসরো স্থাপন করেছিলেন বলেই আজ এই সাফল্য এসেছে। দ্বিতীয় পক্ষ আবার সব কৃতিত্বই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারকে দিতে চাইছে। এরই মাঝে দুটি ছবির একটি কোলাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হচ্ছে।
প্রথম ছবিটিতে দুজন ব্যক্তিকে একটি সাইকেলের ক্যারিয়ারে একটি রকেটের উপরিভাগ বয়ে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ছবিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, বর্তমান কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী-সহ আরও দুই কিশোর-কিশোরীকে দেখা যাচ্ছে যাদের সামনে একটি কেক রাখা।
দুটি ছবির কোলাজ শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে, যে সময়ে ইসরো সাইকেলে করে রকেট বয়ে নিয়ে যেত, সেই সময় নাকি সরকার রাহুল গান্ধীর জন্মদিন বিমান উদযাপন করত।
দুটি ছবির কোলাজের উপর লেখা হয়েছে, "ISRO কে যখন টাকার অভাবে রকেট সাইকেলে আনতে হচ্ছিলো, তখন সরকার দেশের প্লেনে রাহুল গান্ধির জন্মদিন পালনে ব্যস্ত ছিল।"
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে পেয়েছে, ছবিদুটি সমসাময়িক নয়। দুটি ছবি কমপক্ষে ১৫ বছরের ব্যবধানে তোলা হয়।
কীভাবে জানা গেল সত্যি?
তদন্তের শুরুতেই সাইকেলে রকেট চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার ছবিটি আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা করি। রিভার্স ইমেজ করতেই এই ছবিটি আমরা ইন্ডিয়া টুডের একটি প্রতিবেদনে দেখতে পাই। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়, এটি ছিল ভারতের প্রথম সাউন্ডিং রকেট যা একটি সাইকেলে চাপিয়ে কেরলের থুম্বায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল উৎক্ষেপণের জন্য।
সেখান থেকেই আরও জানা যায়, ১৯৬৩ সালের ২১ নভেম্বর এই রকেট উৎক্ষেপণের জন্য তার যন্ত্রাংশ গরুর গাড়ি ও সাইকেলে আগেভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। অর্থাৎ, এখান থেকে যা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে অনুমান করা যায় প্রথম ছবিটি ১৯৬৩ সালে তোলা।
আরও কিছু খোঁজার পর ওই একই ছবি আমরা সরকারি সংবাদ মাধ্যম প্রসার ভারতীর এক্স হ্যান্ডেলে দেখতে পাই। ওই ছবিটি প্রকাশ করে লেখা হয়, ১৯৬৩ সালে ইসরো কর্মীরা একটি রকেটের অগ্রভাগ নিয়ে যাওয়ার সময় ছবিটি তোলা।
দ্বিতীয় ছবিটি কি সেই সময়েরই?
সোশ্যাল মিডিয়ার দাবি অনুযায়ী, দ্বিতীয় ছবিটি ওই সময় নাগাদই তোলা যে সময় প্রথমটি তোলা হয়েছিল।
কংগ্রেসের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, রাহুলের জন্ম ১৯৭০ সালের জুন মাসে হয়েছিল। অর্থাৎ, দুটো ছবি যে একই সময়ের হওয়া সম্ভব নয় তা এর থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়। কারণ রাহুলের তখন জন্মই হয়নি।
এরপর আমরা দ্বিতীয় ছবিটিকে রিভার্স সার্চের মাধ্যমে খুঁজে দেখি। ওই ছবিটি টাইম্স নাও-এর একটি খবরে দেখা যায়। যেখানে লেখা হয়, ১৯৭৭ সালে, রাহুল গান্ধীর যখন বয়স সাত, তখন তাঁর জন্মদিনের কেক বিমানের মধ্যে কাটা হয়েছিল। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে, কোলাজের দুটি ছবি সমসাময়িক তো নয়ই, বরং ১৫ বছরের ফারাকে তোলা হয়েছিল।
যদিও এ কথা সত্যি যে প্রথম থেকে ইসরোর আর্থিক যোগানের অভাব ছিল। এখন তা কিছুটা বাড়ানো হলেও বাকি দেশগুলির তুলনায় অনেকটা কম যোগানের মধ্যে দিয়েই মঙ্গল থেকে চাঁদ পর্যন্ত মিশন সফল করেছে ইসরো। তবে ছবিগুলি যে কোনও ভাবেই সমসাময়িক নয়, তা স্পষ্ট হতে বাকি থাকে না।
যে সময় ইসরোর বিজ্ঞানীরা সাইকেলে করে রকেট নিয়ে যেতেন, তখন কংগ্রেস সরকার বিমানে রাহুল গান্ধীর জন্মদিন উদযাপন করেছিল।
সাইকেলে রকেট নিয়ে যাওয়ার ছবিটি ১৯৬৩ সালের। রাহুল গান্ধীর তখনও জন্ম হয়নি। বিমানে জন্মদিন পালনের ছবিটি ১৯৭৭ সালের।