সুরাজউদ্দিন মন্ডল: গত ১৬ মার্চ লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত গোটা দেশে অনুষ্ঠিত হবে লোকসভা নির্বাচন। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মতই বাংলাতেও মোট ৭ দফায় হবে এবারের ভোট। ইতিমধ্যে ব্রিগেডের 'জনগর্জন সভা' থেকে নিজেদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে এ রাজ্যের শাসকদল। তার আগে প্রথম দফায় বাংলার ১৯টি আসনের জন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি।
আগামী ২০ মে, পঞ্চম দফায় হাই ভোল্টেজ হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে ভোট। বর্তমানে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। এবারের নির্বাচনেও হুগলি থেকে গেরুয়া শিবিরের হয়ে লড়বেন তিনি। অন্যদিকে তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের তুরুপের তাস তাঁরই এক সময়ের সহ-অভিনেত্রী তথা ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ খ্যাত রচনা ব্যানার্জী।
আর এরই মধ্যে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে একটি বিশেষ পোস্ট। সেখানে দেখা যাচ্ছে হুগলির বিদায়ী সাংসদ ভারতীয় রেলের বিভিন্ন বেহাল অবস্থা তুলে ধরে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। আর ভিডিয়োর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “আধুনিক ভারতের আধুনিক রেল।”
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজের ওয়ালে এই ভিডিয়োটি পোস্ট করেছেন। এবং সেটি দেখে মনে হচ্ছে তিনি লকেট চট্টোপাধ্যায়ের প্রোফাইল থেকে স্ক্রিন রেকর্ডিং করে ভিডিয়োটি পোস্ট করেছেন। এবং সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, কোথাও ট্রেনে আগুন লেগে গেছে, কোথাও আবার ট্রেনের ভিতরে পড়ছে জল, কোথাও আবার বন্ধ ট্রেনকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন কিছু মানুষ।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে, ভাইরাল ভিডিয়োটি ভুয়ো ও সম্পাদিত। লকেট চট্টোপাধ্যায়ের তরফে পোস্ট করা ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ সংক্রান্ত ভিডিয়ো এডিট করে সেটিকে পুনরায় পোস্ট করা হয়েছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় যে, ভাইরাল ভিডিয়োটিতে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম ও ছবি হালকা ঝাপসা অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি উপরের সাদা অংশ, যেখানে ক্যাপশন শেষ হচ্ছে ও ভিডিয়ো শুরু হচ্ছে সেখানেও একটি ঝাপসা দাগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর থেকেই সন্দেহ তৈরি হয় যে ভিডিয়োটি সম্পাদিত হতেও পারে।
তাছাড়া লকেট চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ এবং তিনি এবারও ওই আসনের প্রার্থী। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত ভারতীয় রেলের বেহাল অবস্থার ভিডিয়ো পোস্ট করে থাকলে তা বশ্যই নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যামে খবর হিসাবে প্রাকিশত হত। তাই বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে ইন্ডিয়া টুডের তরফে ভিডিয়োটি নিয়ে কিওয়ার্ড ও রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। কিন্তু সেই সার্চে আমরা এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন পাইনি যা থেকে প্রমাণ হয় লকেট এই ভিডিয়োটি পোস্ট করেছেন।
তবে আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করার সময় লকেট চট্টোপাধ্যায়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ২০ মার্চ ট্রেন সংক্রান্ত একটি ভিডিয়ো খুঁজে পাই। সেই ভিডিয়োতে তিনি ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ নিয়ে ভারতীয় রেলের সফলতার কথা তুলে ধরেছেন। আমরা লক্ষ্য করি ভাইরাল ভিডিয়োর ক্যাপশনের সঙ্গে লকেটের তরফে পোস্ট করা ভিডিয়োর ক্যাপশনের হুবহু মিল রয়েছে। এবং দুটি ভিডিয়ো পাশাপাশি রেখে তুলনা করলে স্পষ্টভাবেই বোঝা যায় যে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা ভিডিয়োটিকেই এডিট করে এই ভাইরাল ভিডিয়োটি বানানো হয়েছে। এবং সেখানে রেলের বেহাল আবস্থার ভিডিয়ো বসানো হয়েছে।
এরপর এই বিষয়ে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতামত জানতে আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, “আমি রেলের বেহাল অবস্থা নিয়ে কোনও ভিডিয়ো পোস্ট করিনি। বিগত কয়েক বছর মোদীজি হাত ধরে ভারতীয় রেল কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা সকলেই জানে। কাউকে নতুন করে বলে দিতে হবে না। এটা তৃণমূলের কাজ। ওরা ভোটের মুখে হারের ভয়ে আমার ভিডিয়ো এডিটেড করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে এবারের নির্বাচনে বাংলায় মোদীজির ঝড় উঠবে।”
এর থেকেই প্রমাণ হয়, লকেট চট্টোপাধ্যায় ভারতীয় রেলের বেহাল অবস্থা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া কোনও ভিডিয়ো পোস্ট করেননি। বরং তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ নিয়ে ভারতীয় রেলের সফলতার কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু মানুষ ভিডিয়োটি এডিট করে ভাইরাল করছেন।
ভারতীয় রেলের বেহাল অবস্থা তুলে ধরে ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।
লকেট চট্টোপাধ্যায় ভারতীয় রেলের বেহাল অবস্থা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া কোনও ভিডিয়ো পোস্ট করেননি। বরং তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ নিয়ে ভারতীয় রেলের সফলতার কথা তুলে ধরেছেন।