দুর্গাপুজোর আমেজ কাটতে না কাটতেই প্রতিমা বিসর্জনের একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি দুর্গা প্রতিমাকে করাত ব্যবহার করে ভিন্ন-ভিন্ন টুকরোতে কেটে তা বিসর্জন করা হচ্ছে।
এই ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করে জনৈক এক ব্যক্তি লিখেছেন যে এটি মহারাষ্ট্রের দৃশ্য। প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রে বর্তমানে বিজেপি ও শিন্ডে-পন্থী শিবসেনার সরকার রয়েছে।
ভি়ডিওটির সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "এই ভিডিওটি ভারত মহারাষ্ট্রের, এই রকমের একটি দৃশ্য যদি বাংলাদেশে হতো প্রতিমা বিসর্জনের সময় যে বাংলাদেশে প্রতিমা বিসর্জন দিতেছে নোংরা পানিতে। এতক্ষণে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলতো বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন করা হচ্ছে তাদেরকে পর্যাপ্ত পানি দেয়া হচ্ছে না নোংরা পানিতে প্রতিমা বিসর্জন দিচ্ছে। আমি হিন্দু ভাইদের বলছি আপনার একটি প্রতিবাদ গরে তুলুন প্রতিমা বিসর্জনের কেন এরকম নোংরা একটি জায়গা কেন দিলো ভারতের প্রশাসন।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক করে দেখেছে যে ভিডিওটি বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্র নয় পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরের ভিডিও। অর্ধসত্য ও বিভ্রান্তিকর দাবিতে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করার পর ওই একই ভিডিও আমরা HPR News নামক একটি ফেসবুক পেজে দেখতে পাই। সেখানে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয় যে, এটি নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর শহরের ঘটনা।
এই সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করলে ইটিভি ভারতের একটি খবর পাওয়া যায় যা গত ১৩ অক্টোবর প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে ঘটনাটি কৃষ্ণনগরের কদমতলা ঘাটের।
এ ছাড়াও বিজেপির বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ভিডিওটি নিজের হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন। সঙ্গে রাজ্য সরকার, প্রশাসন ও স্থানীয় পুরসভার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন তিনি। প্রতিমা বিসর্জনের আগেই এভাবে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ করাত দিয়ে কাটা রীতি বিরুদ্ধ বলেও তিনি দাবি করেন।
এই বিষয়ে কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করে হিন্দুস্তান টাইমস ও জি ২৪ ঘণ্টার মতো ওয়েবসাইটেও একাধিক রিপোর্ট মেলে। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে এই ঘটনার পর বিজেপির পক্ষ থেকে এই ঘটনার পর কোতোয়ালী থাকায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। ঘটনার প্রেক্ষিতে তৃণমূল শাসিত কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন রিতা দাস পালটা বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ তোলেন।
C M বাংলা নামক এক ফেসবুক পেজে রিতা দাসের বক্তব্যের একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছিল। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, "প্রতিমা কেটে বিসর্জনের কোনও নির্দেশ আমাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। এটা কেন করা হয়েছে তা আমরা খতিয়ে দেখব। একটা প্রতিমার ক্ষেত্রেই এমনটা হয়েছে। যাদের বারোয়ারি পুজো ছিল, তারাই লেবারদের জোর করেছে এভাবে প্রতিমা বিসর্জন করতে। যারা এই বিষয়টিকে নিয়ে হিন্দুধর্মের ধ্বজা তুলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।"
অর্থাৎ কৃষ্ণনগরের এই ভিডিওকে যে মহারাষ্ট্রের বলে মিথ্যে দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে, তা বুঝতে বাকি থাকে না।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মহারাষ্ট্রে কীভাবে দুর্গা প্রতিমার মূর্তি করাত দিয়ে কেটে বিসর্জন করা হচ্ছে।
এই ভিডিওটি মহারাষ্ট্রের নয় বরং কৃষ্ণনগরের কদমতলা ঘাটের।