রাস্তায় দাঁড় করানো দুই-তিনটি স্কুটির সিট কভার ইচ্ছাকৃত কেটে ফেলছে এক ব্যক্তি। এমনই একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ইদানীং ভাইরাল হচ্ছে। পরবর্তীতে ওই একই ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে একটি ছোট ট্রাকের টায়ার পাংচার করতেও দেখা যায়।
দুটি ভিন্ন ভিডিও জুড়ে তৈরি এই ক্লিপটি শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হচ্ছে যে মোহাম্মদ জুনায়েদ নামে এক মুসলিম ব্যক্তি নিজের দোকানের বিক্রি বাড়াতে এই নতুন উপায় বের করেছিল।
উদাহরণস্বরূপ, এই ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করে লেখা হয়েছে, "শান্তির ছেলের বুদ্ধি দেখুন...দেরাদুনের নেহরুগ্রামে রাস্তার ধারে পার্ক করা গাড়ির সিট কভার ও সিট ব্লেড ছিঁড়ে দেয় মোহাম্মদ জুনায়েদ...কিছু দূর এগিয়ে জুনায়েদের সিট কভারের দোকান, নিজের দোকানের বিক্রি বাড়াতে এই নতুন উপায় বের করেছিল...এদের সাথে কিভাবে পেরে উঠবেন ভাবতে থাকুন..."
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে স্কুটারের সিট কভার কাটতে দেখা ব্যক্তি হলেন দেরাদুনের একজন কোচিং অপারেটর ধীরজ আগরওয়াল। তিনি মুসলমানও নন, তার কোনও পাংচার সারানোর দোকানও নেই।
যাকে ট্রাকের টায়ার পাংচার করতে দেখা যাচ্ছে তিনি ধীরজ নন, তিনি অন্য কোনও ব্যক্তি এবং এই ভিডিওটি অন্য কোথাও থেকে এসেছে এবং এই ভিডিওতে এটি যোগ করে একই ব্যক্তির কাজ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
ভিডিওর শুরুতে দেখা যায় যুবক যে ব্যক্তি দুটি স্কুটারের সিট কভার কাটছে, সেই স্কুটির নম্বর UK শুরু হয়েছে। যা থেকে মোটামুটি আন্দাজ করা যায় ঘটনাটি সত্যিই উত্তরাখণ্ডেই ঘটে থাকতে পারে।
আমরা একই ঘটনার অন্য একটি ভিডিও খুঁজে পাই যেখানে ঘটনাটি দেরাদুনের নেহেরুগ্রামের বলা উল্লেখ করা হয়। এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমরা গুগল ম্যাপে অনুসন্ধান করি ও ভাইরাল ভিডিওটি যে এলাকার সেই জায়গাটি খুঁজে পাই। ভাইরাল ভিডিওতে ওই ব্যক্তির পিছনে একটি দোকানের শাটার, তিনটি লাল সিঁড়ি এবং কমলা-ধূসর পিলার দেখা যাচ্ছে। ঠিক একই ভাবে গুগল ম্যাপেও ওই দোকানটি এবং তার শাটার, সিঁড়ি ও পিলার দেখা যাবে।
ভাইরাল ভিডিওটির এলাকা চিহ্নিত করার পর আমরা আজতক দেরাদুনের সাংবাদিক সাগর শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করি। সাগর আমাদের জানান যে এই ঘটনাটি 2024 সালের অগস্ট মাসে ঘটেছিল এবং ভিডিওতে সিট কভার কাটতে দেখা ব্যক্তির নাম ধীরজ আগরওয়াল। এরপর রায়পুর থানার ইনচার্জ প্রদীপ নেগিও আজতককে নিশ্চিত করেন যে এই মামলাটি দেরাদুনের রায়পুর থানা এলাকার।
সিট কভার কাটা ব্যক্তি কী বললেন?
এই বিষয়ে বিশদ জানতে আমরা সরাসরি ধীরজ আগরওয়ালের সঙ্গে কথা বলি। তিনি আজতককে জানান যে যে তিনি দেরাদুনে একটি কোচিং সেন্টার চালান এবং এই ঘটনাটি চলতি 5 অগস্টের। ধীরজ বলেন, "দেরাদুনের নেহরুগ্রামে আমার কোচিং সেন্টারের কাছে একটি পাবলিক পার্কিং আছে। লোকজন সকালে সেখানে গাড়ি পার্ক করে সারাদিন উধাও হয়ে যেত। আশেপাশের দোকানদাররা অনেকবার নিষেধ করলেও তারা শুনতো না।" তাই তাদের উচিত শিক্ষা দিতে আমি এই কাজ করি। কিন্তু কেউ আমাদের ভিডিও তৈরি করে যা পরে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি পুলিশের কাছ পর্যন্ত গেছে।
ধীরজ এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে আজতককে একটি ভিডিও পাঠান। সেখানে তাঁকে সব ঘটনা সবিস্তারে নিজের মুখেই বলতে শোনা গিয়েছে। এখানে ক্লিক করলে আমাদের হিন্দি প্রতিবেদনে সেই ভিডিওটি দেখা যাবে।
স্পষ্টতই, দেরাদুনের বাসিন্দা ধীরজের একটি পুরনো ভিডিও শেয়ার করে তাকে মুসলিম ব্যবসায়ী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে যা পুরোপুরি মিথ্যে।
মোহাম্মদ জুনায়েদ নামে এক মুসলিম ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ির সিট কভার ছিঁড়ে দেয় এবং টায়ার পাংচার করে, যাতে তার বিক্রি বাড়তে পারে।
যে ব্যক্তি সিট কভার কেটেছিলেন তার নাম ধীরজ আগরওয়াল এবং তিনি দেরাদুনে তাঁর কোচিং সেন্টারের সমুখ পার্কিং মুক্ত করতে এই কাজ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন।