ভারতে মেয়েদের সঙ্গে হওয়া অপরাধের ঘটনা নতুন নয়। কখনও শ্লীলতাহানি, আবার কখনও ধর্ষণ। প্রায়ই এইসব জঘন্যতম অপরাধের শিকার হতে হয় তাদের। অপরাধীদের হাত থেকে নিস্তার পায় না নাবালিকারাও। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয় সেই সব খবর।
আর এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও। যেখানে দু’জন পুলিশকে কাঁধে ভর দিয়ে এক যুবককে কোথাও নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে ভাইজান কথাটি ব্যবহারের মাধ্যমে বোঝাতে চাওয়া হয়েছে, ভিডিওর যুবকটি একজন মুসলিম। উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগর জেলায় এক নাবালিকাকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ইউপির মুজাফফরনগর জেলায় টিউশনি করতে যাওয়া এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে এই ভাইজানকে গ্রেফতার করার পর পুলিশি চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত।) এখানে উল্লেখ্য, ‘ভাইজান’ বা 'আব্দুল' এই ধরনের শব্দগুলি সাধারণত সরাসরি না বলে মুসলিমদের বোঝাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওতে যে যুবককে দেখা যাচ্ছে সে মুসলিম নয় বরং হিন্দু। তার নাম আনমোল। সে উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগর জেলার চরথাওয়াল থানার রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা ঈশ্বরের ছেলে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওর সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে গুগুলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে গত ৬ দিন আগে এই একই ভিডিও-সহ দৈনিক ভাস্করে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, টিউশন যাওয়ার পথে এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ এক যুবককে গ্রেফতার করে মুজফফরনগর পুলিশ। পরবর্তীতে অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হয়।
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী সার্চ করলে ৯ অক্টোবর মুজফফরনগর পুলিশের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডলে এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। যেখানে ভাইরাল ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট-সহ লেখা হয়েছে, “নাবালিকা ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা ঈশ্বরের ছেলে আনমোলকে গ্রেফতার করেছে চরথাওয়াল থানার পুলিশ। অভিযোগ পাওয়ার ১২ ঘন্টার মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা হয়।” মুজফফরনগর পুলিশের পোস্টে অভিযুক্ত ও তার বাবার নাম থেকে তাদের মুসলিম ধর্মাবলম্বী বলে মনে হয় না।
এই কারণে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে এবং অভিযুক্তের ধর্মীয় পরিচয় জানার জন্য আমরা চরথাওয়াল থানার SHO-র সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “অভিযুক্ত অনমোল মুসলিম নয় বরং হিন্দু। সে গত ৮ অক্টোবর টিউশনে যাওয়ার পথে রসুলপুর রোডে এক নাবালিকার সাইকেল থামিয়ে তাকে শ্লীলতাহানি করে। পরবর্তীতে নির্যাতিতার পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ পাওয়ার ১২ ঘন্টার মধ্যে আমরা অনমোলকে গ্রেফতার করি।”
এর থেকে প্রমাণ হয় নাবালিকাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মুসলিম যুবক গ্রেফতার বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর। আসলে ভাইরাল ভিডিওতে যে যুবককে দেখা যাচ্ছে সে মুসলিম নয় বরং হিন্দু।
উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগর জেলায় এক নাবালিকাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে এই মুসলিম যুবক গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ভাইরাল ভিডিওতে যে যুবককে দেখা যাচ্ছে সে মুসলিম নয় বরং হিন্দু। তার নাম আনমোল এবং তার বাবার নাম ঈশ্বর।