Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: ভারতে আশ্রয় পেলেন কয়েকশো অত্যাচারিত বাংলাদেশি হিন্দু? ভাইরাল ভিডিও-র সত্যতা জানুন

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে তাতে ভারতে আশ্রয় পাওয়া কয়েকশো অত্যাচারিত বাংলাদেশি হিন্দুকে দেখা যাচ্ছে।

গণঅভ্যুত্থানের কারণে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। আর এই ঘটনার পর দেশটিতে একের পর এক সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে হামলার খবর সামনে এসেছে। এহেন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্তে হাজারা হাজার বাংলাদেশি হিন্দুদের ভিড় করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি তারা বিএসএফের কাছে ভারতে আশ্রয়ের অনুরোধও জানিয়েছেন।

এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে বাংলাদেশি হিন্দুদের ভারতে আশ্রয় দেওয়া সংক্রান্ত একটি ভিডিও। তাতে দেখা যাচ্ছে কয়েকশো পুরুষ ও মহিলা একটি জায়গায় একত্রিত হয়েছেন। এবং তাদের সামনে বক্তৃতা রাখছেন কিছু বিজেপি নেতৃত্ব। ভিডিয়োটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেখানে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা সকলেই বাংলাদেশি হিন্দু এবং তাদেরকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে তার ফ্রেমের উপরে লিখেছেন, “অবশেষে বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতের বুকে একটুখানি স্বস্তি পেল।” (সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা বাংলাদেশি হিন্দু নন। বরং সেটি গত মে মাসে ওড়িশার কেন্দুঝার জেলার চম্পুয়া বিধানসভা এলাকায় বিজেপি প্রার্থী মুরলি শর্মার ভোট প্রচারের সময় তোলা। এর সঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটা আন্দোলন বা হিংসার কোনও সম্পর্ক নেই।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

প্রথমত ভাইারল ভিডিওটি সন্দেহজনক। কারণ সেটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেখানে উপস্থিত সকলেই বাংলাদেশি হিন্দু। যারা সম্প্রতি অত্যচারিত হয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ভিডিওটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় সেখানে যে ব্যানার ব্যবহার করা হয়েছে তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রো মোদি ছবি ও বিজেপির লোগো-সহ ওড়িয়া ভাষায় কিছু লেখা আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ওড়িশার কোনও সীমানা নেই। তাই এ থেকে অনুমান করা যায় যে ভিডিওটি বিজেপির কোনও মিটিংয়ের হলে হতে পারে।

Advertisement

এরপর আমরা ওই ব্যানারে ওড়িয়া ভাষায় লেখা তথ্যগুলির বাংলা অনুবাদ করার চেষ্টা করি। তখন আমরা সেখান থেকে ওড়িশার কেন্দুঝার জেলার চম্পুয়া নামক একটি জায়গা ও মুরলি শর্মা নামক এক ব্যক্তির নাম জানতে পারি। সেই সূত্র ধরে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে আমরা ২০২৪ সালের ২৪ মে দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেখানে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে এক ব্যক্তিকে দেখতে পাই যাকে ভাইরাল ভিডিওতেও চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে। প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি তিনিই হলেন মুরলি শর্মা। যাকে গত বিধানসভা নির্বাচনে ওড়িশার কেন্দুঝার জেলার চম্পুয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী করা হয়। 

এরপর উপরে প্রাপ্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পুনরায় এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে আমরা ২০২৪ সালের ১৬ মে মুরলি শর্মার ফেসবুক পেজে কয়েকটি ছবি খুঁজে পাই। সেই ছবিগুলিকে পাশাপাশি রেখে ভাইরাল ভিডিওর ফ্রেমের তুলনা করলে আমরা হুবহু মিল দেখতে পাই। অর্থাৎ ভাইরাল ভিডিওতে যে মহিলাদের দেখা গেছে মুরলি শর্মার ফেসবুক পেজ থেকে প্রাপ্ত ছবিতেও তাদেরকে একই পোশাকে একই স্থানে দেখা গেছে।

এমনকি ভাইরাল ভিডিয়োতে যে ব্যানার ও মুরলি শর্মা যে পোশাক পরে আছেন অন্য একটি ছবিতে আমরা সেটিরও হুবহু মিল খুঁজে পাই। যা থেকে স্পষ্ট হয় যে ভাইরাল ভিডিওটি ও ছবিগুলি একই দিন একই কর্মসূচিতে তোলা হয়েছে।

এরপর আমরা এই ভিডিয়ো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মুরলি শর্মাকে ফোন করিষ কিন্তু সেই ফোন তার ছেলে ধরেন এবং তিনি আমাদের জানান, “আমার বাবা বিগত ২০-২৫ দিন যাবৎ শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি বাংলাদেশের অত্যাচারিত হিন্দু সঙ্গে কোনও বৈঠক করেননি। এই ভিডিয়োটি গত মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনের সময় চম্পুয়া এলাকায় তার ভোট প্রচারের সময় তোলা হয়েছিল। এর সঙ্গে বাংলাদেশ বা সেদেশের হিন্দুদের কোনও সম্পর্ক নেই।

এর থেকে প্রমাণ হয় যে বাংলাদেশি হিন্দুরা ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন দাবি করে যে ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে সেটি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর।

ফ্যাক্ট চেক

দাবি

ভিডিওতে ভারতে আশ্রয় পাওয়া কয়েকশো অত্যাচারিত বাংলাদেশি হিন্দুকে দেখা যাচ্ছে।

ফলাফল

ভিডিওটি গত মে মাসে ওড়িশার কেন্দুঝার জেলার চম্পুয়া বিধানসভা এলাকায় বিজেপি প্রার্থী মুরলি শর্মার ভোট প্রচারের সময় তোলা হয়।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের नंबर 73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement