কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদে যখন গোটা দেশ উত্তাল, ঠিক সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের তথ্য, ছবি ও ভিডিও ছড়িয়েছে। যার মধ্যে কিছু ভুয়ো খবরও রয়েছে।
এই আবহে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কোনও একটি হাসপাতাল থেকে স্ট্রেচারে বের করে আনা হচ্ছে জনৈক ব্যক্তিকে। এবং ওই স্ট্রেচারের সামনে থাকা ব্যক্তি, এবং হাসপাতালের বাকি নার্স ও কর্মীরা হাতজোড় করে নমস্কার জানাচ্ছেন। ভিডিওটি শেয়ার করে তা আরজি কর হাসপাতালের বলে দাবি করা হচ্ছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে তার উপরে লেখা হয়েছে, "আর জি কর।" সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "এই প্রথম independence তে খুশি নয়।"
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, এই দাবিটি সঠিক নয়। কারণ ভিডিওটি আরজি কর হাসপাতালের নয়। বরং মাস দুয়েক পুরনো, বিশাখাপত্তনমের পিনাকল হাসপাতালের ভিডিও।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ভিডিওটি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে তাতে একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলের ওয়াটার মার্ক দেখতে পাওয়া যাবে। @uttamchandshigvi নামের এই হ্যান্ডেলটি কিওয়ার্ডের মাধ্যমে খুঁজলে আমরা দেখতে পাই ওই একই ভিডিও সেই হ্যান্ডেল থেকে ২ জুন আপলোড করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, আরজি কর হাসপাতালে নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছিল ৯ অগস্ট। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে যে, এই ভিডিওটি উক্ত ঘটনা ঘটার দু'মাসের বেশি সময় থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছে। যার মানে দাঁড়ায়, এই ভিডিওটির সঙ্গে আরজি কর হাসপাতালের সাম্প্রতিক ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।
এই ভিডিওটির বিষয়ে বিশদে জানতে আমরা উত্তম চাঁদ সিংঘভি নামের এই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানান যে ভিডিওটিতে স্ট্রেচারে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে তাঁর নাম বিপিন মেহতা। যিনি আদতে রাজস্থানের জালোরের বাসিন্দা, তবে থাকতেন বিশাখাপত্তনমে।
গত ২৯ মে এক পথ দুর্ঘটনায় বিপিনের মৃত্যু হয়। দুদিন হাসপাতালে লড়াই চালানোর পর ১ জুন বিপিন মারা গেলে তাঁর বাবা, প্রবীণ মেহতা ছেলের দেহদানের সিদ্ধান্ত নেন। এই মহতি সিদ্ধান্তকে কুর্ণিশ জানাতেই বিশাখাপত্তনমের পিনাকেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বিপিনের দেহ বের করে আনার সময় গার্ড অব অনার দ্বারা সম্মান জানান। ভিডিওটি ভালভাবে লক্ষ্য করলে সেখানেও একাধিক জায়গায় পিনাকেল হাসপাতালের নাম-সহ প্রতীক দেখা যাবে।
এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা নিউজ১৮-এর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই যা ২ জুন প্রকাশ পেয়েছিল। সেখানে লেখা হয়, বিপিন বিশাখাপত্তনমে কসমেটিসের পাইকারি ব্যবসা করতেন। ২০ মে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মাথায় গভীর চোট পান বিপিন। হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১ জুন মৃত্যু হয় বিপিনের।
দৈনিক ভাস্করের একটি রিপোর্টেও নিশ্চিত করা হয় যে বিপিনের দেহ হাসপাতাল থেকে বের করে আনার সময় ৩০০-র বেশি চিকিৎসাকর্মী গার্ড অব অনারের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে অসম্পর্কিত একটি ঘটনার ভিডিও আরজি করের দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে।
আরজি কর হাসপাতাল নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তার ভিতরের ভিডিও।
এই ভিডিওটি জুন মাসের, এবং বিশাখাপত্তনমের পিনাকেল হাসপাতালের ভিডিও।