বিশ্বের যে কোনও প্রান্তেই হিংসা ছড়ালে তা সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে ভাইরাল হয়ে পরে। আর, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে হিংসা ছড়ালে তো সেই দাবিগুলো আরও দ্রুত ভাইরাল হতে থাকে।
সম্প্রতি পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া হিংসাত্মক ঘটনাগুলো নিয়ে 'অলকানন্দা রাজশাহী' নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি পোস্ট করে দাবি করেছেন, "পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি। শিয়া আর সুন্নি সংঘর্ষে 350+ জান্নাতী হুরের পথে রওনা দিয়েছে। আমিন।" অর্থাৎ, শিয়া-সুন্নির লড়াইয়ে পাকিস্তানে সাড়ে তিনশোর বেশি লোক নিহত হয়েছেন।
এই দাবি সহ আরও কয়েকটি পোস্টের আর্কাইভ দেখতে পাবেন এখানে ও এখানে।
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে এই পোস্টের দাবি বিভ্রান্তিকর।
তদন্তে নেমে আমরা ভারত ও পাকিস্তান - দু'দেশের সংবাদমাধ্যমে পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরগুলো খতিয়ে দেখি। দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবেশী দেশে।
কিন্তু সেই পরিস্থিতির সঙ্গে শিয়া-সুন্নি সম্পর্কের কোনও যোগাযোগ নেই। সে দেশের দেশের বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম-এর প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সরকারের সঙ্গে দেশের একটি ডানপন্থী-মৌলবাদি দল টিএলিপি -র (Tehreek-i-Labbaik) পুরোনো একটি বিবাদকে কেন্দ্র করে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
মুহাম্মদের কার্টুন একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ফরাসি রাষ্ট্রপতি বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়েছিল। এর পর থেকেই টিএলপি দাবি করেছিল যে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করতে হবে। সরকার প্রথমে ১৫ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে চেয়েছিল। এরপর, সরকারের পক্ষ থেকে আড়াই মাস মতো সময়ে চাওয়া হয়েছিল। ২০শে এপ্রিল সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, তার আগেই, ১৪ই এপ্রিল সরকারের পক্ষ থেকে টিএলপি-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এর পর, ১৮ই এপ্রিল দলের নেতা সাদ হুসেন রিজভি একটি ভিডিও বার্তা দলীয় সমর্থকদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান জানায়। এর পর, রিজভিকে আটক করা হলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
খবরের প্ৰকাশ, এর পর লাহোর রাস্তায় নেমে পরে এই সংগঠনের সমর্থকরা এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শুরু হয়। মোট ১১জন পুলিশকে পণবন্দি করা হলেও পরে সরকারের হস্তক্ষেপে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে তিন থেকে চারজন নিহত হয়েছে।
ইন্টারনেট ঘেটে আমরা এমন কোনও খবরের সন্ধান পাইনি যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানে এবং সেই ঘটনায় ৩৫০জনের বেশি লোক নিহত হয়েছে।
উল্টোদিকে, খবরের প্রকাশ, এর আগে বিভিন্ন সংঘর্ষে ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সালে - ১৭ বছরে - প্রায় সাড়ে চার হাজারের বেশি শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হয়েছে পাকিস্তানে এবং টিএলপি-ও বিভিন্ন সময়ে শিয়া-বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছে। কিন্তু বর্তমান ঘটনার সঙ্গে শিয়া-সুন্নি বিরোধের কোনও সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, সব দিক বিচার করে বলা যেতেই পারে যে এই পোস্টের দাবি বিভ্রান্তিকর।
পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি। শিয়া আর সুন্নি সংঘর্ষে সাড়ে তিনশোর বেশি লোক নিহত হয়েছেন।
শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষে ৩৫০-র বেশি লোক নিহত হয়েছে, এমন কোনও সাম্প্রতিক খবর আমরা খুঁজে পাইনি। পাকিস্তানে বর্তমানে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষের কোনও সম্পর্ক নেই। পাকিস্তানের একটি সংগঠন সে দেশের ফরাসি রাষ্ট্রদূতের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছে। একটি সংবাদমাধ্যমে মুহাম্মাদের কার্টুন বেরোনেও ফরাসি রাষ্ট্রপতি তা সমর্থন করায় এই প্রতিবাদ। খবরের প্রকাশ, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে চারজন মতো নিহত হয়েছেন।