সম্প্রতি ইসলাম ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নবী হজরত মহম্মদকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে মহারাষ্ট্রের বিজেপি বিধায়ক নীতেশ রানে ও মহন্ত রামগিরি মহারাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জানিয়ে গতকাল বিকালে প্রাক্তন এআইএমআইএম সাংসদ ইমতিয়াজ জলিলের নেতৃত্বে মুম্বইয়ে ‘তিরাঙ্গা সংবিধান ব়্যালি’ নামক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষরা।
এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশাল বড় জমায়েতের একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হচ্ছে। ভিডিওটিতে কয়েক হাজার মানুষকে সমবেত কণ্ঠে আরবি ভাষায় নানা ধরনের ধর্মীয় স্লোগান দিতে শোনা যাচ্ছে। সুবিশাল জনতার মধ্যে অনেকের হাতেই সাদা-কালো রঙের পতাকাও রয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে তা মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত সেই প্রতিবাদ মিছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "আজ মুম্বাইয়ের এই দৃশ্য দেখে মনটা ভরে গেল। গোস্তাখে রাসুলের কোন ক্ষমা নেই। রব্বে কাবা! আপনি ভারতের আকাশে কালিমার পতাকা উড্ডীন করে দেন। জালিমদের প্রতিহত করে দেন। "চলো মুম্বাই" গণ-মার্চ। ভারতের এক হি.ন্দু পুরোহিত ইসলাম ধর্ম এবং রাসুল ﷺ কে নিয়ে কটুক্তি করেছে, অতঃপর বি.জিপির এক নেতা আবার সেটাকে সমর্থন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরো ইন্ডি.য়া ফুঁসে ওঠেছে। আরো ভিডিও এবং বিস্তারিত জানতে হ্যাশট্যাগে ক্লিক করুন।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে আলোচ্য ভিডিওটি মুম্বই তো নয়ই, ভারতেরও নয়। এটি পাকিস্তানের একটি ধর্মীয় সভার ভিডিও যা সপ্তাহদুই আগে অনুষ্ঠিত হয়।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে তা রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খুঁজতেই ওই একই ভিডিও আমরা দেখতে পাই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার)। একরামুল্লা নাসিম নামক এক পাকিস্তানী এক্স হ্যান্ডেল থেকে ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের হুবহু এই একই ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল গত ৭ সেপ্টেম্বর।
এর থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে আলোচ্য ভিডিও-র সঙ্গে মুম্বইয়ের প্রতিবাদ ব়্যালির কোনও সম্পর্ক থাকা সম্ভব নয়। কারণ, এটি ২৪ সেপ্টেম্বর বেরিয়েছিল। আর এই ভিডিওটি তার আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর পোস্ট করা এই ভিডিওতে উর্দু ক্যাপশনে যা লেখা হয় তার অনুবাদ করলে বোঝা যায় যে পোস্টদাতা বলতে চেয়েছে তিনি ২৬ বছরে পাকিস্তানের বুকে এত বড় জমায়েত এর আগে কখনই দেখেননি।
এই বিষয়ে আরও সার্চ করে ওই একই ধরনের একাধিক ভিডিও আমরা নানা পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেলে দেখতে পাই। সেখানে এই জমায়েতকে 'খতম এ নবুয়াত' বলে উল্লেখ করা হয়।
এই সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা এই 'খতম এ নবুয়াত'-এর লাইভ সম্প্রচারের পূর্ণাঙ্গ ভিডিও পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিএনএন-র ইউটিউব চ্যানেলে দেখতে পাই। সেই সঙ্গে সেখানে উল্লেখ করা হয় যে সভাটি মিনার-এ পাকিস্তানের পাদদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই মিনার-এ পাকিস্তানটি লাহোরের একটি বিশেষ দর্শনীয় স্থান।
দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের মতো একাধিক পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমে গত ৭ সেপ্টেম্বর 'খতম এ নবুয়াত' অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে জানা যায়। এই প্রতিবেদনে জমিয়ত উলেমায় ইসলামের প্রধান মৌলানা ফজলুর রহমানের বক্তব্যের অংশ তুলে ধরা হয়। উপরে জিএনএন-র ভিডিওতে ৪ ঘণ্টা ৩৪ মিনিটের পরবর্তী অংশ থেকে তাঁর বক্তব্য শোনা যাবে।
অর্থাৎ, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে মুম্বই বা ভারতের যে কোনও সম্পর্ক নেই তা এর থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়।
হজরত মহম্মদকে নিয়ে করা কুমন্তব্যের প্রতিবাদে মুম্বইতে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ সমাবেশের দৃশ্য়।
ভিডিওটি পাকিস্তানের, লাহোর শহরের। গত ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া একটি ধর্মীয় সমাবেশ এটি।