আরজি কর কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠতার দাবিতে এ বার সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হচ্ছে। এই ছবিটি ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে যে, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের জন্মদিনে কেক কাটছে ধর্ষণকাণ্ডে ধৃত ও অভিযুক্ত সঞ্জয়।
এই ছবিতে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে সন্দীপ ঘোষকে। টেবিলে পাশেই দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি কেক কাটছেন যাকে সঞ্জয় রায় বলে দাবি করা হয়েছে। এই দাবিতে অনেকেই ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন।
ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "সন্দীপ ঘোষের ক্যাবিনে সন্দীও ঘোষের জন্মদিনে কেক কেটে সেলিব্রেশনে সঞ্জয় রাইয়ের ! ভাইরাল ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় বিভিন্ন মহল ! গত ৯ ই আগস্ট আর জি করের তরুণী ডাক্তারকে নারকীয় অত্যাচার করে খুনের ঘটনায়। গত একমাস ধরে উত্তাল রাজ্য তথা দেশ ! আর এই অবহে একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছে যদিও ছবির সততা যাচাই করেনি সিএন পোর্টাল ! যে ছবিটি ঘিরে শুরু হয়েছে চাপানউতর! যেখানে দেখা যাচ্ছে আরজিকরের ডাক্তার অধ্যক্ষ। সন্দীপ ঘোষের উপস্থিতিতে একটি ক্যাবিনে সঞ্জয় রাই কেক কেটে সেলিব্রেট করছেন !"
কেউ কেউ আবার এই একই ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, "আরজিকর অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের জন্মদিনে কেক কাটছে সিভিক সঞ্জয়, এবারের শীতে জন্মদিনও কি একসঙ্গেই হবে?"
একই দাবি করে এই ছবিটি সিএন ডিজিটাল, টাইমস নাও বাংলা-সহ একাধিক সংবাদ মাধ্যম প্রচার করেছে।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে, যে ব্যক্তিকে কেক কাটতে দেখা যাচ্ছে তিনি প্রসূন চট্টোপাধ্যায় নামে এক অন্য ব্যক্তি। সঞ্জয় রায় নয়।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ছবিটির সত্যতা জানতে সবার প্রথম এটিকে গুগল লেন্সের সাহায্যে আমরা রিভার্স ইমেস সার্চ করি। তখন দেখা যায়, ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি প্রসেনজিৎ দে নামে এক ব্যক্তি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এই ছবি-সহ আরও একই জায়গায় ওই ব্যক্তির কেক কাটার আরও অনেকগুলি ছবি শেয়ার করেছিলেন।
সেই ছবিগুলি পোস্ট করে তিনি ক্য়াপশনে ও পোস্টে প্রসূন চট্টোপাধ্য়ায় রানা নামের এক ব্যক্তিকে ট্যাগ করে তাঁর জন্মদিন উদযাপনের মুহূর্ত বলে সেখানে লেখেন। সঙ্গে প্রসূন চট্টোপাধ্য়ায় নামে ব্যক্তির জন্মদিনের উদযাপন ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষের অফিসে হয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি অর্থাৎ মেডিক্যাল সুপারিটেনডেন্ট ও ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। অন্যদিকে, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে জানা যায়, তিনি বর্তমানে আরজি কর হাসপাতালে কর্মরত বলে লিখে রেখেছেন।
প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের বিষয়ে আরও কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করে ২৮ অগস্ট প্রকাশিত এবিপি লাইভের একটি খবর পাওয়া যায়। সেই খবর অনুযায়ী, আরজি কর হাসপাতালে নির্যাতিতার দেহ উদ্ধারের পর সেই সেমিনার রুমে মানুষের মেলা দেখা গিয়েছিল। যার মধ্যে সন্দীপ ঘনিষ্ঠ এই প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন যিনি বর্তমানে ক্যালকাটা ন্য়াশনাল মেডিক্যালে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর বলে জানা যায়।
এ ছাড়াও ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ডক্টরস্ অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি ইনস্টাগ্রাম হ্য়ান্ডেল থেকেও প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের এই আলোচিত ছবিটি সহ একাধিক ছবি পোস্ট করা হয়। ২৮ অগস্ট এই হ্যান্ডেল থেকে সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর বিরুদ্ধেও সিবিআই অনুসন্ধানের আবেদন করা হয়।
অর্থাৎ বুঝতে বাকি থাকছে না যে ভাইরাল হওয়া এই ছবির সঙ্গে ধৃত সঞ্জয় রায়ের কোনও সম্পর্ক নেই এবং যাকে সঞ্জয় রায় বলে দাবি করা হচ্ছে তিনি আসলে ক্যালকাটা মেডিক্যালের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর প্রসূন চট্টোপাধ্যায়।
ছবিতে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের পাশে দাঁড়িয়ে কেক কাটছে সঞ্জয় রায়।
কেক কাটতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে সে মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় নয় বরং ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিকাল কলেজের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর প্রসূন চট্টোপাধ্যায়।