বিগত কিছুদিন ধরে একের পর এক রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর এর ফলে মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরে লাইনচ্যুত হয়েছে হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেস। অন্যদিকে বুধবার সকালে তেলবোঝাই একটি মালগাড়ি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের অদূরে রাঙাপানি এলাকায় লাইনচ্যুত হয়।
তবে এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় রেল দুর্ঘটনা সংক্রান্ত একটি ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে রেল লাইনের ইন্টারলকের মাঝখানে একটি বড় পাথর আটকে রয়েছে। আর সরাসরি উল্লেখ না করলেও ছবিটি শেয়ার করে ইঙ্গিত করা হচ্ছে রেলের ইন্টারলকে পাথর রাখার ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গের এবং এর ফলেই বাংলায় এত রেল দুর্ঘটনা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ভাইরাল ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে রেল দুর্ঘটনা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে, এই ছবিটা দেখে আমার তো মনে হচ্ছে, এগুলো পরিকল্পনা করে করা হচ্ছে।” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, রেল লাইনের ইন্টারলকের মাঝখানে পাথর রাখার ছবিটি পশ্চিমবঙ্গের নয়। বরং সেটি ২০২৩ সালের জুন মাসে ওড়িশার মঞ্জুরি রোড স্টেশন সংলগ্ন রেলের ট্রাকের।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল ছবির সত্যতা জানতে এবং এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রথমে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা ২০২৩ সালের ৮ জুন একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ছবি দেখতে পাই। ছবিটি শেয়ার করে সেখানে লেখা হয়েছে, “ওড়িশার বালাসোর ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে মঞ্জুরি রোড স্টেশন সংলগ্ন ট্র্যাকের ইন্টারলকের মাঝখানে একটি বড় পাথর রাখা হয়েছে। পাথরটি এতটাই বড় যে যেকোন ট্রেন লাইনচ্যুত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। তবে রেল কর্মীদের তৎপরতার কারণে আরও একটি দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।”
এরপর উপরে উক্ত সূত্র ধরে আমরা এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা ২০২৩ সালের ৮ জুন তারিখেই Odisha Tv-র একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। ভাইরাল ছবি-সহ সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৭ জুন ওড়িশার ভদ্রক জেলার মঞ্জুরি রোড স্টেশনে ইন্টারলকের মাঝখানে একটি পাথর আটকে ছিল। সেটি একজন রেল কর্মীর নজরে আসলে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পাথরটি সরিয়ে ফেলা হয়। এবিষয়ে স্টেশন ম্যানেজার আরপিএফের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। আরপিএফ ইন্সপেক্টর দিলীপ কুমারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
এরপর ২০২৩ সালের ১০ জুন জাগরণে প্রকাশিত অপর একটি প্রতিবেদনেও আমরা এই একই তথ্য খুঁজে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ওড়িশার ভদ্রক জেলার ভান্ডারিপোখারি থানার অন্তর্গত মঞ্জুরি রোড স্টেশনে রেলের ইন্টারলকের মাঝখানে একটি বড় পাথর আটকে ছিল। রেল কর্মীরা সময় মতো দেখে ফেলায় পাথরটি সরিয়ে নেন। এর ফলে বালাসোরের মতো আরও একটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটার আগেই এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
এর থেকে প্রমাণ হয় ওড়িশার মঞ্জুরি রোড স্টেশনে ইন্টারলকের মাঝখানে পাথর রাখার ছবি পশ্চিমবঙ্গের দবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
রেলের ইন্টারলকে পাথর রাখার ছবিটি পশ্চিমবঙ্গের এবং এর ফলেই বাংলায় এত পরিমাণ ট্রেন দুর্ঘটনা হচ্ছে।
রেল লাইনের ইন্টারলকের মাঝখানে পাথর রাখার ছবিটি পশ্চিমবঙ্গের নয়। বরং সেটি ২০২৩ সালের জুন মাসে ওড়িশার মঞ্জুরি রোড স্টেশন সংলগ্ন রেলের ট্রাকের।