বেশ কয়েকদিন ধরেই মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে উত্তপ্ত সোশ্যাল মিডিয়া। এরই মধ্যে এই পরীক্ষার একটি মার্কশিটকে কেন্দ্র করে জোর সরগরম শুরু হয়ে গিয়েছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে।
বেশ কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী এ বছরের মাধ্যমিকের একটি মার্কশিট পোস্ট করে বিভিন্ন ধরণের দাবি করতে শুরু করে দিয়েছেন। এই মার্কশিটে দেখা যাচ্ছে যে পরীক্ষার্থী ৭০০ নম্বরের মধ্যে ৭০১ নম্বর পেয়েছে। অর্থাৎ, সাতটি বিষয়ের মধ্যে ছ'টিতে ১০০ নম্বর করে পেয়েছে আর গণিতে ১০১ পেয়েছে এই পরীক্ষার্থী।
এই সংক্রান্ত পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখতে পাবেন এখানে, এখানে ও এখানে ।
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে এই পোস্টের দাবি বিভ্রান্তিকর।
তদন্তে নেমে আমরা প্রথমে মাধ্যমিকের একটি মার্কশিট বের করে ফেসবুক পোস্টের মার্কশিটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে মূলত দু'ধরণের মার্কশিট পাওয়া যায়। একটি যেটি অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। অন্যটি হার্ডকপি, যেটি ছাত্রছাত্রীরা হাতে পায়।
আমরা একটি ছাত্রের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও জন্মের তারিখ জোগাড় করে প্রথমে তার অনলাইনের মার্কশিটটি জোগাড় করি। দেখা যাচ্ছে, ফেসবুক পোস্টের মার্কশিটটি অনলাইন মার্কশিটের মতো দেখতে হলেও তার মধ্যে বেশ কয়েকটি গলদ রয়েছে।
ফেসবুক পোস্টের মার্কশিটের একদম উপরে লেখা রয়েছে "Madhyamik Pariksha S.E. Result"। অন্যদিকে যে মার্কশিটটি অনলাইন থেকে আমরা ডাউলোড করেছি তার উপরে লেখা রয়েছে, "West Bengal Board of Secondary Education Examination Results - 2021", এটি কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ মধ্যে শিক্ষা পর্ষদের পোশাকি নাম। এবং, সরকারি নাম মার্কশিটের উপর থাকাটাই বাঞ্চনীয়। দ্বিতীয়ত, পর্ষদের নামের তলায় লেখা রয়েছে, "National Informatics Centre" । এই সংস্থাটিকে পর্ষদের তরফ থেকে অনলাইন রেজাল্ট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, ডাউনলোড করা মার্কশিটের একদম উপরে তারিখ দেওয়া রয়েছে।
এই মার্কশিট দুটি আমরা এর পর সরকারি শিক্ষক সমিতির সচিব সৌগত বসুকে দেখাই। তিনিও নিশ্চিত করেন যে ফেসবুক পোস্টের মার্কশিটটি মর্ফদ। "কোনও সরকারি কাগজে পর্ষদের নাম মাধ্যমিক পরীক্ষা বলে লেখা থাকতে পারে না," আজতককে বললেন সৌগত বাবু।
এর পর আমরা সেই একই পরীক্ষার্থীর মার্কশিটের হার্ডকপি টি জোগাড় করি। সেখানে অবশ্য আরও অনেক পুঙ্খনাপুঙ্খ ভাবে পরিক্ষার্থীর নম্বরগুলো বিশ্লেষণ করা রয়েছে।
এই বিষয়ে আমরা পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পর্ষদের তরফ থেকে ধ্রুব বসু জানান যে এই ধরণের পরিস্থিতির সম্ভাবনা একেবারেই নেই।
"মার্কশিট তৈরি সময়তেও কিছু একটা ভুল হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু, ফলাফল সরকারিভাবে পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর আগে আমরা ঘোষণা করে দিয়েছিলাম যে এ বছর ৭৯ জন ৬৯৮ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে। সেই সময়তেই এই ভুলটা ধরা পড়ত এবং সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর মার্কশিট দেখতে পাওয়ার আগেই তা শুধরে নেওয়া হত। এই মার্কশিটটি বোর্ডের দেওয়া মার্কশিট নয়,"ধ্রুব বসু আজতককে জানিয়েছেন।
সুতরাং, এই পোস্টের দাবি যে বিভ্রান্তিকর তা বলাই বাহুল্য।
২০২১ মাধ্যমিকে একজন পরীক্ষার্থী নাকি ৭০০র মধ্যে ৭০১ নম্বর পেয়েছে।
পোস্টে যে মার্কশিটের ছবি দেওয়া হয়েছে সেটি মর্ফড করা। পর্ষদের সত্যিকারের মার্কশিটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা গিয়েছে। পর্ষদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে এই ধরণের পরিস্থিতির সম্ভাবনা প্রায় নেই।