বেলুড় মঠে মহাষ্টমীতে সম্পন্ন হল কুমারী পুজো ৷ প্রতি বছরের মতো দুর্গাপুজোর অঙ্গ হিসাবে কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয় অষ্টমীতে। আর কুমারী পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েচে বেলুড় মঠের নাম। স্বামী বিবেকানন্দের হাত ধরে শুরু হওয়া এই রীতি ১২৫ তম বর্ষেও মূল আকর্ষণের বিষয়বস্তু।
বেলুড় মঠে দুর্গাপুজোর সূচনা হয় ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দের হাত ধরে ৷ সন্ন্যাসীরা বৈদিক মতে পুজো করেন ৷ স্বামীজি প্রথা ভেঙে ঘোষণা করেছিলেন, 'মানুষের সেবাই ঈশ্বরসেবা' ৷ সেই ভাবনা থেকে বেলুড় মঠে দুর্গাপুজোর প্রবর্তন ৷ আর তার সঙ্গেই অঙ্গাঙ্গি ভাবে জুড়ে যায় কুমারী পুজো।
রামকৃষ্ণ মঠে প্রথমবার দুর্গাপুজো হয়েছিল শ্রীমা সারদা দেবীর উপস্থিতিতে ৷ সঙ্কল্প হয়েছিল তাঁর নামেই ৷ সেই তখন থেকে স্বামীজি প্রচলিত এই পুজো বছরের পর বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে।
শিশুকন্যাদের পায়ে পুষ্পাঞ্জলি, মিষ্টি ও দক্ষিণা নিবেদন করা হয় বেলুড় মঠের কুমারী পুজোয়। এখনও সেই প্রথা অটুট ৷
এই পুজোর আরেক বিস্ময় ভোগ ৷ পুজোর প্রতিদিন দশ থালা ভোগ নিবেদন হয়— তার আটটি আমিষ এবং দু'টি নিরামিষ ৷ মা দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, নবপত্রিকা, মহিষাসুর, মহাসিংহ, আর সহচরী দেবী লক্ষ্মী ও দেবী সরস্বতীকে আমিষ ভোগ দেওয়া হয় ৷ নারায়ণ ও শিবের জন্য থাকে নিরামিষ ৷
মহালয়া থেকেই শুরু হয় চাল বাছাই, সব্জি সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিশেষ বড়ি আনার কাজ ৷ সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত সকালের বাল্যভোগে থাকে খিচুড়ি আর গোটা ইলিশ ৷ দুপুরে ভাত, পোলাও, পাঁচরকম সিদ্ধ, ভাজা, নানা তরকারি, পাঁঠার মাংস- যা আসে কালীঘাটে উৎসর্গ করা বলি থেকে ৷ প্রতিদিন অন্তত পাঁচ রকম মাছ থাকে ৷ রাতে লুচি, ডাল, তরকারি, মিষ্টি, ক্ষীর, রাবড়ি ৷ দশমীতে নিবেদন হয় দধিকর্মা ৷
বেলুড় মঠে ১২৫ তম শারদোৎসবের অষ্টমী তিথিতে প্রথা মেনে পালিত হল কুমারী পুজো। এ বছর কুমারী নির্বাচিত হয়েছে ৭ বছরের লাবণ্য চট্টোপাধ্যায়। শাস্ত্র মতে কুমারী দেবীর নাম রাখা হয়েছে 'মালিনী'।
কুমারী পুজোয় শিশুকন্যাকে পবিত্র গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে লাল অথবা সোনালী পাড়ের আগুন রঙা শাড়ি পরানো হয়। সাজিয়ে তোলা হয় ফুল ও গয়নায়।
দেবী দুর্গাকে দেওয়া অর্ঘ্য ও নৈবেদ্যই সমর্পিত হয় কুমারীর পায়েও। বিধি মতে মন্ত্র পড়েই পুজো ও আরতি করা হয় কুমারীকে। সন্ন্যাসীরা তাকেই মাতৃজ্ঞানে পুষ্পাঞ্জলি দেন, প্রার্থনা করেন।
পূরাণ মতে, বানাসুর নামে এক অসুরের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে দেবতাগণ দেবী মহাকালীর শরণাপন্ন হন। বানাসুরকে বধের আর্জি জানান তাঁরা। দেবতাদের অনুরোধে দেবী কুমারী রূপে বানাসুরকে বধ করেন। অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা হয়। ফলে দেবী দুর্গার আরাধনায় ১ থেকে ১৬ বছর বয়সী কুমারীকে দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়।