রাজ্যের ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গি পরিস্থিতি ক্রমেই ভয় ধরাচ্ছে। এই নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। আর তাই রবিবার ছুটির দিনে পশ্চিমবঙ্গের ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করল রাজ্য প্রশাসন। গতকাল নবান্নে সমস্ত জেলাগুলিকে নিয়ে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব বিপি গোপালিকা । সেই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি ৷ যার মধ্যে অন্যতম হল, দু'দিন ধরে কারও জ্বর থাকলেই ডেঙ্গি পরীক্ষা করাতে হবে ৷
প্রসঙ্গত, রাজ্যের ৩০টিরও বেশি অঞ্চল ডেঙ্গি স্পর্শকাতর। আর এই নিয়েই স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে নবান্নে জরুরি বৈঠকে বসেন বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক, মিউনিসিপল কমিশনার, বিভিন্ন জেলার মেডিক্যাল কলেজ-সহ স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। স্বরাষ্ট্র সচিব বিপি গোপালিকা জানিয়েছেন, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মালদহ, মুর্শিদাবাদের একাধিক অঞ্চলে ডেঙ্গি সংক্রমণ বাড়ছে। এই জেলাগুলোর স্পর্শকাতর অঞ্চলগুলিতে ডেঙ্গি সংক্রমণ কমানোর জন্য সতর্ক হতে হবে। স্বাস্থ্য দফতরের পর্যালোচনা বৈঠকে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। চলতি বছরে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার ৭০৯। জুলাই থেকে অগাস্ট, রাজ্যে ৫ গুণ বেড়েছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। জুনে আক্রান্ত ৬২৪, জুলাইয়ে আক্রান্ত ৩ হাজার ৭৭৮। অগাস্টে ডেঙ্গি আক্রান্ত ১৫ হাজার ৬৭২। কলকাতা পুরসভা এলাকায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্ত ১৫০০। বেসরকারি মতে ডেঙ্গিতে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৩১, সরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ৩।
নবান্ন সূত্রে খবর, বৈঠকে স্বরাষ্ট্রসচিব জানতে চান, ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার মোকাবিলায় প্রশাসন কী কী পদক্ষেপ করেছে। বৈঠকে জেলাশাসকদের সঙ্গে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তাঁদের কাছেও জেলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে তা-ও বিস্তারিত জানতে চান স্বরাষ্ট্রসচিব। সূত্রের খবর, শুধু ডেঙ্গি নয়, এই বৈঠকে রাজ্যের ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, রবিবারের বৈঠকে ডেঙ্গি নিয়ে সামগ্রিক সচেতনতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে । এক্ষেত্রে মশাবাহিত রোগের ক্ষেত্রে যে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার তা বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে । যার মধ্যে রয়েছে, বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, জল জমতে না দেওয়া, রাতে মশারি টাঙিয়ে শোয়া-সহ একাধিক পরামর্শ ৷ স্বরাষ্টচিব জানিয়েছেন এবার রাজ্যের একাধিক জেলায় ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে । এই মুহূর্তে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে পনেরশো জন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছেন । তিনি এও জানিয়েছেন, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে কতজনের মৃত্যু হয়েছে তা এখনই স্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না ৷
এদিকে ডেঙ্গি মোকাবিলায় রাজ্য ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি ডেঙ্গি পরিস্থিতির ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এরাজ্যে। হাসপাতালে বেড মিলছে না। প্রপার টেস্ট হচ্ছে না, বাড়িতে বাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। তিনি আরও বলেছেন কেন্দ্রীয় সরকার অনেক আগে ফেব্রুয়ারি-মার্চে সতর্ক করলেও রাজ্য সরকার কোনও কাজ করেনি। টাকা অন্য খাতে খরচ করে দিয়েছে।