আরজি কর হাসপাতালে তরুণী ডাক্তারকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যখন গোটা দেশ উত্তাল, বিচার চাইছে, কর্মবিরতি আন্দোলন করছেন ডাক্তাররা, তখন বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে 'দেশের লজ্জা' বলে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ অর্থাত্ মঙ্গলবার বিধানসভায় ভাষণ 'দাবি এক দফা এক' স্লোগান দিয়ে শেষ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ শেষ করলেন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে।
'বিক্ষোভ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছে সরকার'
এদিন ধর্ষণ বিরোধী কড়া আইন আনতে বিল বিধানসভায় পেশ করে রাজ্য সরকার। সেই বিল নিয়ে আলোচনায় বিরোধী দলনেতা বিলকে পূর্ণ সমর্থন করেও রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারবার নিশানা করতে থাকেন। শুভেন্দু বলেন, 'চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা। আন্তর্জাতিক স্তরেও নিন্দিত হচ্ছে। বিপুল জনরোষ, বিক্ষোভ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছে সরকার। আমরা চাই এই বিল দ্রুত আইন হিসেবে কার্যকর করা হোক। সেই দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে।' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে একের পর এক পেপার কাটিং তুলে ধরেন শুভেন্দু। তিনি উল্লেখ করেন, কামদুনি মামলায় কীভাবে একের পর এক আইনজীবী বদল করেছে সরকার।
'আমরা সিবিআই-এর কাছে বিচার চাই'
বিরোধী দলনেতার ভাষণের পাল্টা জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা বললেন, 'আমরাও এখন বিচার চাই। আমরা সিবিআই-এর কাছে বিচার চাই। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফ্রম সিবিআই। আমরা কিন্তু প্রথম থেকেই ফাঁসি চেয়েছি। বিরোধী দলনেতা বললেন, বিল কার্যকর হবে কিনা। রাজ্যপালকে বলুন, বিলটা সই করতে। তারপর কার্যকর না হলে তার দায়িত্ব আমাদের। আমি মনে করি, এটুকু বলার আমার অধিকার আছে। মনে রাখবেন, সংসদে সেফ রাজ্যের নিরিখে আমরা তৃতীয়। আমাদের রাজ্যে বর্তমানে ৮৮টি ফাস্টট্র্যাক কোর্ট আছে। মহিলাদের জন্য বিশেষ আদালত আছে। ২০২০ সালে এই সেপ্টেম্বরেই হাথরসের ঘটনা। দলিত মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। বিচার পায়নি, প্রাণেও বাঁচেনি। এটা সব রাজ্যে চলছে। কথা বলবেন না। শুনুন। আপনার বলেছেন, আমরা শুনেছি। এবার শুনুন ধৈর্য ধরে। আজ প্রতিদিন দেশে প্রায় ৯০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। অনেকের মৃত্যু হয়। ধর্ষণ একটা জাতীয় লজ্জা। ধর্ষণেরপ বিরুদ্ধে সমাজ সংস্কারের প্রয়োজন আছে।'
'সারা দেশে কলকাতা সবচেয়ে নিরাপদ শহর'
এরপরেই উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ধর্ষণের পরিসংখ্যা তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, 'ন্যায় সংহিতা বিল যখন নির্বাচনের আগে তাড়াহুড়ো করে পাশ করানো হল, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলাম, তাড়াহুড়ো নয়, রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করুন। নতুন সরকার আসুক, লোকসভা, রাজ্যসভা, বিরোধীদলের সঙ্গে আলোচনা করুন। করেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ আপনারা বাংলাকে শুধু বদনাম করছেন, বাংলার সম্মান নিয়ে ভাবুন। বাংলাকে বদনাম যে ভাবে করছেন, আপনারা আমায় যেভাবে অসম্মান করেছেন, আপনাদের প্রধানমন্ত্রীকে আমরা সেরকম অপমান করিনি। কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, সারা দেশে কলকাতা সবচেয়ে নিরাপদ শহর। উত্তরপ্রদেশে ৭ লক্ষ নারী নির্যাতন, গুজরাতে ৫ লক্ষ। নরেন্দ্র মোদী দেশের লজ্জা।'
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি
ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে মমতা বললেন, এই বিল আইনে পরিণত হলে, তা হবে ঐতিহাসিক ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী করতে পারেননি বলেই আমরা করছি। আপনি দেশের লজ্জা। আপনার পদত্যাগ দাবি করছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।