সন্দেশখালি কাণ্ডের মধ্যেই বিস্ফোরক রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা মেয়রের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। রাত্রিবেলা তাঁর মতো শিক্ষিত মানুষকে যদি মন্ত্রী-নেতারা কুপ্রস্তাব পাঠাতে পারেন, তাহলে শেখ শাহাজাহানের মতো দুষ্কৃতীরা তো এই সাহস পাবেনই। মন্তব্য বৈশাখীর। তাঁর কথায়, 'যে বা যারা মহিলাদের সম্মানহানি করছে, তারা যে দলেরই হোক না কেন, দিনের শেষে দুষ্কৃতী।
বৈশাখীর মতে, সন্দেশখালির মতো প্রত্যন্ত জায়গাতে পার্টি অফিসে মহিলাদের ডাকা হচ্ছে পিঠে বানানোর নাম করে। তাঁদের উপর নির্যাতনের অভিযোগও উঠছে। শেখ শাহাজাহানের মতো অনেকেই আছেন, যারা দল বদল করে এখন 'সম্পদ' হয়ে উঠেছে। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, 'কিছু মানুষ থাকে, সে যে পদেই থাকুন না কেন, তাঁরা মহিলাদের সেবাদাসী বা ক্রীতদাসী বলে মনে করেন। শেখ শাহাজাহান তো তাঁদেরই মতো একজন।' তারপরই বৈশাখীর বিস্ফোরক অভিযোগ,'আমার সঙ্গেই এমন হয়েছে। তৃণমূলের ছোটো-মেজো-সেজো রাতে নেতারা কুপ্রস্তাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমারই চেনা এক মহিলা আছেন যাঁকে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেই মেসেজ এখনও আমার কাছে আছে। তখন সেই নেতা বিজেপি করতেন। সেই মহিলা আমার কাছে কাঁদতে কাঁদতে এসে জানিয়েছিলেন। পরে দেখলাম সেই নেতাকেই তৃণমূল দলে নিল।'
বৈশাখী আরও বলেন, 'সন্দেশখালির মহিলারা বলছেন পিঠে বানানোর কথা। আমি অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে বলি, নাকতলার পাঁঠা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার এক সদস্যের জন্য অনেকে টিফিন বক্স ভরে ভরে পাঁঠার মাংস, পায়েস, শুক্তো রান্না করে নিয়ে যেত। কারণ, তারা সুবিধা পেত। আমাকেও সেই নেতা একদিন বলেছিলেন তুমি কেন নিয়ে আসো না? আমি সেই নেতাকে বলে দিয়েছিলাম, আপনি চাইলে পাঁঠার মাংস যে ভারতবর্ষের যে কোনও দোকান থেকে কিনে খেতে পারেন। আমি সুরাঁধুনি হলেও এমন কারও জন্য পাঁঠার মাংস বানাব যাকে আমার ভালোলাগে। আমার তো পদ পাওয়ার কোনও লোভ নেই যে আপনাকে পাঁঠার মাংস খাওয়াতে হবে। এসব তাঁরাই করেন যাঁদের পদের প্রয়োজন আছে।'
এই সূত্র ধরেই বৈশাখী বলেন, 'আমি এই কথা বলেছিলাম কারণ আমার একটা অবস্থান আছে। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা আছে। কিন্তু সন্দেশখালির মহিলারা এটা বলতে পারবেন না। কারণ, তাঁরা অসহায়। তাঁদের স্বামীরা বাইরে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই নেতাদের অত্যাচার সেই সব মহিলাদের সহ্য করতে হয়। একজন বা একাধিক মহিলাকে যখন মিটিংয়ের নামে পার্টি অফিসে রাত্রে ডেকে নেওয়া হয়, তখন তো প্রশ্ন উঠবেই। এতরাত্রে মহিলাদের মিটিংয়ে ডাকার কী প্রয়োজন? সন্দেশখালির মহিলারা অসহায় বলে? আর সন্দেশখালির মহিলারা আজ প্রতিবাদ করছেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। আমার তো মনে হয়, একজন মহিলাও যদি অভিযোগ করে থাকেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সারবত্তা নেই বলে সেই অভিযোগকে উড়িয়ে দেওয়া উচিতই নয়।'
বৈশাখী আরও বলেন, 'তৃণমূলের একজন ব্লক লেভেলের নেতাকে ধরার জন্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন মাথা ঘামাতে হবে? শাজাহান যে সেখানে দিনের পর দিন এই কুকর্ম করছেন, এটা কি স্থানীয় নেতা, এমএলএ, এমপি-রা জানতেন না ? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?'
প্রসঙ্গত, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুদিন আগে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িও গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তখন থেকেই জল্পনা শুরু হয়, তাহলে কি ফের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন হচ্ছে শোভন-বৈশাখীর? তবে এর মধ্যেই বিস্ফোরক বৈশাখী।