আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আজ নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল 'পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ, যাকে ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল শহর কলকাতা ও হাওড়ার বেশকিছু এলাকা। ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে এদিন জলকামান ছুড়েছে পুলিশ। কাঁদানে গ্যাস দিয়ে ছত্রভঙ্গ করার পর বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড়ও শুরু করে পুলিশ। নবান্ন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। আর এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় পুলিশকে চরম হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়কের সাফ কথা, পুলিশ এই অত্যাচার বন্ধ না করলে পশ্চিমবঙ্গ স্তব্ধ করে দেব!
এদিনের নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় হেস্টিং থেকে শুরু করে এম জি রোড সর্বত্র। পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ঢিল। পাল্টা পুলিশের তরফ থেকে ছোড়া হয় টিআর গ্যাস। অর্থাৎ একেবারেই জুজুধান দুপক্ষ। আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে একটাই স্বর শোনা যায় ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’। এরমধ্যে কখনো পুলিশের দিকে তেড়ে যায় আন্দোলনকারীরা আবার কখনো আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে তেড়ে আসেন পুলিশ। মঙ্গলবার ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের’ নবান্ন অভিযান মিছিল ঘিরে দুপুরে তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয়। ব্যারিকেট ভেঙে এগানোর চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। উত্তেজনা ছড়ায় হাওড়া ব্রিজ ও সাঁতরাগাছিতেও। সেই সময় পুলিশের থেকে শুরু করা হয় লাঠিচার্জ, পুলিশের তরফ থেকে ছোঁড়া হয় টিআর গ্যাস ও জলকামান। এবং নবান্ন যাওয়ার প্রায় সবকটি রাস্তায় দখল নেই লাঠিধারী পুলিশ ফোর্স। পুলিশের লাঠির আঘাত থেকে বাঁচেনি মহিলারাও। আর এই ঘটনায় তীব্র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, “আন্দোলনকারীদের উপর অত্যাচার বন্ধ করুক, না হলে আগামীকাল পশ্চিমবঙ্গ স্তব্ধ করে দেব।”
এদিন কর্মসূচি চলাকালীন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, পুলিশ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের রুখতে কন্টেনার দিয়ে ব্যারিকেড বানিয়েছে, এসবের কী প্রয়োজন? সাঁতরাগাছিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে। অহিংস আন্দোলনকারীদের ওপরে অত্যাচার বন্ধ না হলে রাজ্য স্তব্ধ করে দেব। সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, সোমবার রাতে হাওড়া স্টেশন থেকে যে ৪ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ তাদের আইনি ও আর্থিক সাহায্য করবে বিজেপি।
মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার বাঁধে হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায়। নবান্নে যাওয়ার সমস্ত রাস্তা বিশাল ব্যারিকেড করে বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এর পর বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেডের কাছে পৌঁছলে তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও জল কামান ছোড়ে পুলিশ। তাই মধ্যে স্লোগান ওঠে, ‘দফা এক দাবি এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’। শুভেন্দু এদিন বলেন, ' তিনটে ছেলে আর কয়েকটা ইউটিউবারের ভয়ে, একটা পুরো প্রশাসন স্যারেন্ডার করে গেছে। আমি এখন অ্যাসেম্বলি যাব। অ্যাসেম্বলি থেকে ফিরে হাওড়া রেল স্টেশনে রেলের গেস্ট হাউসে আমি ওয়েট করব। ওদের পাশে থাকব। অশান্তি হলে পথে নামব, অবরোধ করব। কাউকে মারলে অবরোধ করব। গোটা রাজ্যে এখনও অবধি ১০০ র বেশি অ্যারেস্ট হয়েছে। ২০০ র বেশি বাস ও গাড়িকে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা তাদের সকলকে বেল করাব। আইনি সহায়তা দেব। সব খরচ বহন করব। রাজ্য সরকার ৪-৫ কোটি টাকা খরচ করেছে , ভাল রাস্তাগুলিকে খুঁড়েছে। গার্ডেনরিচ থেকে কন্টেনার এনে রাস্তায় বসিয়েছে।' এরপরেই শুভেন্দু অধিকারী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'আমরা দেখছি। এই অত্যাচার বন্ধ করুন ছাত্রসমাজের উপর। নইলে কাল পুরো পশ্চিমবঙ্গ স্তব্ধ করে দেব'