আরজি কর আবহেই হাসপাতালে থ্রেট কালচার, আতঙ্ক বা ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করার অভিযোগে গত সেপ্টেম্বর মাসে ৫১ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করে দেয় হাসপাতালের কলেজ কাউন্সিল। এই নিয়ে আরজিকর হাসপাতাল থেকে সাসপেন্ডেড এবং বহিষ্কৃত ডাক্তারদের দ্রুত শুনানির আবেদন করা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। প্রিন্সিপ্যালকেও মামলায় পার্টি করা হয়। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে মামলাটি উঠেছিল। আর এবার আরজি কর হাসপাতালে থ্রেট কালচারে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বড়সড় স্বস্তি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তাঁদের সাসপেনশন এবং বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। থ্রেট কালচারের অভিযোগ থাকায় ৫১ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছিল আরজি কর থেকে। সেই নির্দেশের ওপরই অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ এল।
'আর জি কর মেডিক্যালের বিতর্কিত চিকিৎসকদের উপর সাসপেনশন ও বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত কার্যকর নয়। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ ছাড়া সাসপেনশন ও বহিষ্কার করা যাবে না। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত না নিলে ৫ অক্টোবরের সিদ্ধান্ত কার্যকর নয়', এদিন নির্দেশ দেন হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চের বিচারপতি কৌশিক চন্দ। 'কারণ ছাড়াই সাসপেন্ড, কী কারণে বহিষ্কার, তার কারণ স্পষ্ট নয়। কী অভিযোগ, সেটাও জানানো হয়নি', এদিন হাইকোর্টে সওয়াল করেন বহিষ্কৃত ও সাসপেন্ডেড ডাক্তারদের আইনজীবীর।
সাসপেন্ড হওয়া ৮ জন চিকিৎসক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, কেন সাসপেন্ড করা হয়েছে, তা তাঁদের জানানো হয়নি। সেই চিকিৎসকদের পক্ষের আইনজীবী অর্কপ্রভ সেন এদিন আদালতে বলেন, ‘কোনও কারণ ছাড়াই সাসপেন্ড করা হয়েছে। অর্ডারে স্পষ্ট নয় যে কেন বহিষ্কার করা হল।’ অভিযোগ কী ছিল, সেটা জানানো হয়নি। আর জি করের তরফে আইনজীবী সুমন সেনগুপ্ত বলেন, ‘রিড্রেসাল সেলের প্রধান মুখ্যসচিব। কলেজ শুধু অভিযোগ ওই কমিটির কাছে পাঠাতে পারে। রাজ্যই সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা কাউকে বহিষ্কার করিনি।’ অনিকেত মাহাতোর আইনজীবী কল্লোল বসু উল্লেখ করেন, ৫০০ জন রেসিডেন্ট চিকিৎসক এদের বিরুদ্ধে থ্রেট কালচারের অভিযোগ তোলেন, অথচ সেই অভিযোগকারী চিকিৎসকদের পার্টি না করে কীভাবে এই মামলা হতে পারে। বিচারপতি বলেন, ‘পার্টি হতে চাইলে আবেদন করতে পারে রেসিডেন্ট চিকিৎসক সংগঠন।’ আদালতের এই নির্দেশ কার্যকরী হবে ৫১ জনের জন্যই।
প্রসঙ্গত, তিলোত্তমা কাণ্ডের পর রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে যে বিষয়টি সবথেকে বেশি আলোচিত হয়েছে, তা হল ‘থ্রেট কালচার’। আরজি করে প্রাক্তন অধ্য়ক্ষ সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ একাধিক জুনিয়র চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচারের’ অভিযোগ ওঠে। তদন্তে কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটি আরজি করের ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করে। এদিকে আরজি করে থ্রেট কালচারের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ে অধ্যক্ষ চিকিৎসক মানস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভর্ৎসনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে আরজি করে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের সামনেই অধ্যক্ষকে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘আপনিও তো ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করেছেন। নবান্নের অনুমতি নেননি। এটা থ্রেট কালচার নয়?’
সোমবার ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পড়েন আরজি করের অধ্যক্ষ মানস বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন নবান্নকে না জানিয়েই হাসপাতাল থেকে ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, সেই নিয়ে কড়া ভাষায় প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নয়া প্রিন্সিপ্যালের উদ্দেশে মমতা বলেন, “আপনিও তো ৪৭ জন ছাত্রকে সাসপেন্ড করেছেন। আমাকে তো জানান নি?”
ক্ষোভের সুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’ প্রিন্সিপাল আপনার তো প্রথমে রেকমেনডেশন পাঠানো উচিত ছিল স্বাস্থ্য দফতরকে। স্বাস্থ্য দফতর আমাদের সঙ্গে আলোচনা করত। সেটা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এটা কি আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি আপনাকে প্রিন্সিপ্যাল করেছি যাতে সবাইকে টেক কেয়ার করতে পারেন। আপনার কারোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ, রাগ, অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু আপনি কিকরে নিজে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন? এটা থ্রেট কালচার নয় কি?”